মহিলাদের অল্প বয়সে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কেন বাড়ছে!

0
132

অনলাইন ডেস্ক; বর্তমানে অল্প বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ভারতে এমন বহু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের বয়স ৪০-এর নিচে বা তার চেয়েও অনেকটা কম হচ্ছে।

মুম্বাইয়ের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সুমিত শাহ বলেছেন, আগে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিভাগই পঞ্চাশ বা ষাটোর্ধ নারীদের দেখা যেত। কিন্তু এখন সেই বয়সসীমা অনেকটাই কমে এসেছে এখন।

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে অনেকেই ৪০ বছরের নীচে। আবার তার চাইতে কম বয়সের অনেক নারীও এতে আক্রান্ত হয়েছে। 

প্রায় দশ বছর আগে তার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন দিল্লির বাসিন্দা নীদা সরফরাজ। তিনি বলেন, রাগ হচ্ছিল…ভীষণ রাগ।

ভেবেই পাচ্ছিলাম না কেন! কেন এমনটা হলো। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, কীভাবে আমার স্তন ক্যান্সার হতে পারে? সবে তিরিশে পা দিয়েছি। আমি ভেবেছিলাম ছোট একটি সার্জারি করলেই ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার স্তনের একটা বড় অংশ বাদ দিতে হয় আমার।
 

সরফরাজ একা নন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন আরো এক নারী। যে স্টেজে তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়েছিল, সেই সময় সার্জারির মাধ্যমে স্তন অপসারণ করা ছাড়া উপায় ছিল না।

ভারতীয় অভিনেত্রী হিনা খানও গত বছর মাত্র ৩৬ বছর বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।

কলকাতার চিকিৎসক ডা. ঋতুপর্ণা চতুর্বেদী বলেন, অল্পবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়া একটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে তিরিশের ঘরে থাকা নারী দেখেছি, আবার তার চাইতে অনেকটা কম বয়সী রোগীও পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে কম বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল ১৭ বছর। 

ভারতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের বয়সসীমার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। আগে ভারতে ৪০-৫০ বা তার বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঘটনা রিপোর্ট করা হলেও, ৪০-এর কম বয়সের নারীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

দিল্লির অ্যাপেলো হসপিটালের সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট রোকেয়া আহমেদ মীর বলেছেন, ভারতে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার গত পাঁচ বছরে বেশ বেড়েছে এবং এটা উদ্বেগজনক বিষয়।

কম বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে।

ক্যান্সার গবেষক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অনকোলিঙ্ক ইন্ডিয়া’র প্রতিষ্ঠাতা ড. অমিত কান্তি সরকার বলেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে ওবেসিটি, ধূমপান, পরিবেশ দূষণের মতো একাধিক ফ্যাক্টর এই প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি জেনেটিক ফ্যাক্টর তো আছেই।

জীবনযাত্রাকে একটা বড় ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করেছেন ডা. রোকেয়া আহমেদ মীর বলেন, জাঙ্কফুড নির্ভর ডায়েট, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, ধূমপানের মতো ফ্যাক্টর যা ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ অন্যান্য অনেক ধরনের রোগ এবং ক্যান্সারের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।

অন্যদিকে, ডা. প্রভাকর বলেন, আগে মনে করা হতো স্তন ক্যান্সারের ঘটনা শহরে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন তা নয়। যেমন উত্তরাখণ্ডের গ্রামেও কমবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার লক্ষ্য করা গিয়েছে।

কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট ক্যান্সার যতদিনে শনাক্ত হয়, ততদিনে ক্যান্সার অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যায়।

ডা. চতুর্বেদী বলেন, আমরা সব সময় মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি যে, স্তনে কোনোরকম অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিন্তু অনেক সময়ই মেয়েরা দেরি করে ফেলেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তনের আকারের পরিবর্তন, স্তন বা বগলে ব্যথাহীন পিণ্ড, স্তনের ত্বকের পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত থেকে নিঃসরণ ইত্যাদি ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে।

এ কারণে সচেতনতা বৃদ্ধি, সেল্‌ফ এগজামিনেশন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, অবহেলা না করা মতো খুঁটিনাটি বিষয় এই রোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া জীবনযাত্রার পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম আহার অনেক রোগের সম্ভাবনাই কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, রোগ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই আগে চিকিৎসা শুরু হলে অ্যাডভান্স স্টেজের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here