পহেলা বৈশাখ নিয়ে ইসলাম কি বলে?

0
407

লেখক: মাওলানা শেখ মিলাদ হোসাইন সিদ্দিকীঃ পয়লা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ বা رأس السنة البنغالية বা New Year’s day বা বর্ষবরণ বা نيروز এই শব্দগুলো নতুন বছরের আগমন এবং এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত উৎসব-অনুষ্ঠানাদিকে ইঙ্গিত করে। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়।

এতদুপলক্ষে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, হাসিঠাট্টা ও আনন্দ উপভোগ, সাজগোজ করে নারীদের অবাধ বিচরণ ও সৌন্দর্যের প্রদর্শনী, রাতে অভিজাত এলাকার ক্লাব ইত্যাদিতে মদ্যপান তথা নাচানাচি, পটকা ফুটানো– এই সবকিছু কতটা ইসলাম সম্মত?
আজ আমরা জানবো

★★★কুরআনের আলোকে পহেলা বৈশাখ :-
নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম কর্মসূচি হচ্ছে, বছরের প্রথম প্রহরে প্রথম সূর্যকে স্বাগত জানানো। এ ধরনের কর্মকান্ড মূলত সূর্যপুজারী ও প্রকৃতিপুজারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অনুকরণ মাত্র।
এ প্রসঙ্গে কুরআন বলছে,-  ‎وَجَدتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِن دُونِ اللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ
অর্থ: “আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে” (সূরা আল নামল, ২৭:২৪)

পহেলা বৈশাখের সাথে মঙ্গলময়তার কোন সম্পর্ক নেই। বরং ইসলামের বিশ্বাসে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মহান ব্যবস্থাপক, নিরঙ্কুশ স্বত্তাধীকারী। জীবন-মৃত্যু, রিযিক ও সৃষ্টিজগতের কল্যাণ অকল্যাণ তাঁরই ইচ্ছাধীন। এ সবের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। এতে তাঁর কোন শরীক নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,- ‎{ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ (১৭) وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ (১৮) } [الأنعام: ১৭، ১৮]
অর্থ: “তিনি যদি তোমার কোন ক্ষতি করেন তবে তিনি ব্যতীত তা অপসরণকারী আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তিনি তোমার মঙ্গল করেন তবে তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান” (সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৭)।
মঙ্গল শোভাযাত্রা মুশরিকদের উৎসবে সাদৃশ্য : আল্লাহ তাআলা বলেন:-  ‎إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
অর্থ: “নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর সাথে শিরক করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিবেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি।” (আল-মায়িদাহ:৭২)।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় গান ও বাদ্য-বাজনার ব্যবহার :-
বর্ষবরণের এসব অনুষ্ঠানে গান-বাজনা যেন পূর্বশর্ত। ঢেউ খেলানো আনন্দে বাজনা-সঙ্গীত যেন ফেনিল রাশি হয়ে বয়ে চলে। অথচ ইসলামী চেতনাশুন্য গান ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِيْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِيْنٌ ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অজ্ঞভাবে অনর্থক কথা ক্রয় করে এবং তাকে আনন্দ-ফূর্তি হিসাবে গ্রহণ করে, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি”। (সুরা লুকমান ৩১/৬)।

★★★হাদিসের আলোকে পহেলা বৈশাখ ও
মঙ্গল শোভাযাত্রা:-শুভাশুভ নির্ণয় ও তাতে বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে রাসূল [সা.] বলেন الطِّيَرَةُ شِرْكٌ‘কুলক্ষণে বিশ্বাস করা শিরক’। [আবু দাউদ হা/৩৯১২; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৩৮; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৫৮৪]

রাসূল (স.) ইবনু আব্বাস (রা.) কে বলেছিলেন, – ‎وَاعْلَمْ أَنَّ الْأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوْ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَيْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلَّا بِشَيْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ
অর্থ: “…আর জেনে রেখ, সমগ্র উম্মত যদি একত্রিত হয়ে তোমার কোন অকল্যাণ করতে চায় পারবে না; কেবল ততটুকু ছাড়া যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আর তারা যদি একত্রিত হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় পারবে না; কেবল ততটুকু ছাড়া যা আল্লাহ তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।” (তিরমিযী)।

রাসূল [সা. আরো বলেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَطَيَّرَ، أَوْ تُطِيَّرَ لَهُ أَوْ تَكَهَّنَ، أَوْ تُكِهِّنَ لَهُ أَوْ سَحَرَ، أَوْ سُحِرَ لَهُ
অর্থ: ‘যে কুলক্ষণে বিশ্বাস করে এবং যাকে সে বিশ্বাস করায়, যে ভাগ্য গণনা করে এবং যাকে সে ভাগ্য গণনা করে দেয়, যে জাদু করে এবং যাকে সে জাদু করে দেয়- তারা আমাদের (উম্মাতে মুহাম্মাদীর) অন্তর্ভুক্ত নয়।

পহেলা বৈশাখে চিত্রাঙ্কন, উল্কা-আল্পনা আঁকা :-
বিনা প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রাণীর (বিকৃত) ছবি আঁকা। উল্কা-আল্পনা আঁকা। এগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম।
রাসূল (সা.) বলেছেন: ‎إن أشد الناس عذاباً يوم القيامة المصورون
অর্থ: “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে [জীবন্ত বস্তুর] ছবি তৈরীকারীরা।” [বুখারী: ৫৯৫০; মুসলিম: ২১০৯]

অন্য হাদীসে বলা হয়েছে: ﻟﻌﻦ اﻟﻠﻪ اﻟﻮاﺷﻤﺎﺕ ﻭاﻟﻤﺴﺘﻮﺷﻤﺎﺕ
অর্থ: “যারা উল্কা আঁকে বা যাদের গায়ে আঁকা হয়, তাদের উপর আল্লাহ র লানত বর্ষিত হয়েছে” (বুখারী)।

পরিশেষে বলবো
প্রিয় তরুণ-তরুণী ভাই-বোন! নিজেকে অবমূল্যায়ন করবেন না। আপনার মতো যুবকের হাতে ইসলাম শক্তিশালী হয়েছে। আপনার মতো তরুণীরা কত পুরুষকে দ্বীনের পথে অবিচল থাকতে সাহস জুগিয়েছে। আপনার বয়সে মুছ‘আব ইবনু উমাইর রযিয়াল্লাহু আনহু গিয়েছেন উহুদ যুদ্ধে শহীদ হতে। সুতরাং আসুন! সেদিন আসার আগেই আমরা সচেতন হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফীক্ব দান করুন এবং কল্যাণ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবার ও ছাহাবীগণের উপর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here