করলা চাষে ভাগ্য বদল বাউফলের মহিউদ্দিন

0
56

মোঃ আমির হোসেন,বাউফল প্রতিনিধি,পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা ইউনিয়নের পাতারপোল গ্রামের যুবক মো. মহিউদ্দিন টিপু(৩০) আজ একটি পরিচিত নাম কৃষিক্ষেত্রে। কৃষির প্রতি অদম্য আগ্রহ আর সংগ্রামের গল্পে মোড়ানো তার জীবন এখন অনেক তরুণের অনুপ্রেরণার উৎস।

মহিউদ্দিন এক সময় সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় প্রতারণার শিকার হন। এরপর রাজধানী ঢাকায় একটি বায়িং হাউজে চাকরি নেন। কিন্তু সেখানেও মেলে না স্থায়িত্ব বা সম্মান। এমন সময় স্ত্রী মোসাম্মাত ফাতেমার (২৫) পরামর্শে তিনি ফিরে আসেন নিজ গ্রামের বাড়িতে। দু’জন মিলে সিদ্ধান্ত নেন কৃষিকাজে আত্মনিয়োগের।

প্রথমে ছোট পরিসরে করলা চাষ শুরু করেন মহিউদ্দিন। এখন তার দুইটি খণ্ড জমিতে রয়েছে প্রায় ১২০০টি করলা গাছ। প্রতি সপ্তাহে তিনি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার করলা বিক্রি করেন, মাসে যার পরিমাণ ১ লাখ টাকারও বেশি। শুধু করলাই নয়, তিনি চাষ করছেন লাউ, চিচিঙ্গা, টমেটো ও লাল শাকসহ বিভিন্ন মৌসুমী সবজি।এতে দুই সন্তান আর এক স্ত্রী নিয়ে দারুণ সময় কাটছে তার। সামনের দিকে মাছ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে মহিউদ্দিনের ।

করলার বাজারদর প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন জানান, বাজারে চাহিদা কম থাকলে ৫০ টাকা কেজিতে আর বেশি থাকলে ৮০ টাকা কেজিতে করলা বিক্রি করেন। স্থানীয় পাইকারদের কাছেই তার উৎপাদিত করলার বড় অংশ সরবরাহ করা হয়।

সফল চাষি মহিউদ্দিন টিপু বলেন,আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন আমার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন ।তিনি গাছ থেকে পড়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়।আমি বড় সন্তান হওয়াতে আমাকে সংসারে হাল ধরতে হয় ।আমাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে ।আমি ছোট থেকেই অনেক পরিশ্রম করেছি ।রাস্তার পাশে সবজি লাগিয়েছি, ধান চাষ করেছি ।আমার নিজের একটা বোন ছিলো তাকে বিবাহ দিয়েছি ।নিজে এইসএসসি পাশ করেছি ।তারপর হঠাৎ করে স্বপ্ন জাগলো সরকারি চাকরি করবো ,সেজন্য টাকা পয়সা দিয়ে আমি প্রতারিত হয়েছি ।পরে ঢাকায় গিয়ে বায়িং হাউজে চাকরি নেই ।কিন্তু সেখানে থেকে যে টাকা পয়সা পেতাম তা দিয়ে আমার চলতোনা ।মাঝখানে খুবই টানাটানি চলছে আমার ।একসময় পকেটে টাকাও ছিলোনা।পরে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে দেশে চলে আসি ।ছোট বেলা থেকে অভিজ্ঞতা ছিলো যে কৃষি কাজ করলে মোটামুটি কায়দায় চলা যায় ।প্রথমে ২ শতাংশ জায়গা নিয়ে কাজ শুরু করলাম ।শুরু করার পরে মোটামুটি ভালোই সাফল্য পেলাম । পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী আমার এক চাচা জসিম খান ১২০ শতাংশ জমি আমকে লেজ হিসেবে দিয়েছে ।সেখানে আমি এখন চাষাবাদ করি । আলহামদুলিল্লাহ্ আমরা এখন খুব ভালো আছি ।প্রতি সপ্তাহে আমার এখন ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয় । এভারেজ করলে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়।

বাজার সিন্ডিকেট নিয়ে মহিউদ্দিন টিপু বলেন,বাজারে মাল বিক্রি করতে গেলে আমাদের সিন্ডিকেটের শিকার হতে হয়।বাজারে অনেক পাইকার থাকে তাদের মধ্য একজন একটা দাম বললে অন্য কেউ আর দাম বলেনা।আমাদের বাধ্য হয়ে অল্প মূল্য মাল বিক্রি করে দিতে হয়।এটা একটা সিন্ডিকেট ।তখন তারা এটা অল্প দামে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করে। সরকার যদি এটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখে তাহলে আমরা কৃষকরা ভালো বাজার দর পাবো ।

মহিউদ্দিন টিপুর স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, যখন আমরা প্রথম করলা চাষ করি তখন আমাদের জায়গার পরিমাণ খুবই কম ছিলো ।তখন আমাদের কাছে পুঁজিও ছিলোনা ।তখন আমি টিউশনি করতাম ও সেলাই মেশিনে কাজ করতাম ।তা দিয়ে যা আয় হতে সেই টাকা করলার বীজ ,সারের ও ওষুধের জন্য দিতাম।সেলাই মেশিনের কাজ করে ও টেউশনি করার টাকা দিয়ে সংসারও চালাইতাম ।এখন আল্লাহ্ রহমতে আমরা ভালো আছি ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিলন বলেন,বাউফলের একজন উদ্যোক্তা কৃষক মহিউদ্দিন ।তিনি বগা ইউনিয়নের কৃষক । বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় মহিউদ্দিন করলা চাষ শুরু করেন । আমরা ৫০ শতক জমির জন্য তাকে বিভিন্ন ধরনের সার এবং উন্নতমানের করলা বীজ দিয়েছি ।তার সাথে সাথে আমরা স্প্রে মেশিন ,জাজরি এবং মালচিং দিয়েছি ।মালচিং ব্যবহার করে সে আধুনিক পদ্ধতিতে করলা চাষ শুরু করে এখন ৫০ শতক জমি থেকে ৩ লাখ টাকার করলা বিক্রি করে ।তার নিজের কিছু খরচ ও আমাদের উপকরণের খরচটা বাদ দিলে ৫০ শতক জমি থেকে ২ লাখ টাকা অধিক মুনাফা করেছে ।তার দেখাদেখি পার্শ্ববর্তী কৃষকরা করলা ও অন্যান্য উচ্চ মূল্যের সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে ।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here