আলােকিত ডেস্ক:
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বাংলাদেশের সাতটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, যাত্রী পরিবহন সেবার উন্নয়ন এবং অথনীতির চাকা আরও সচল হবে বলে মনে করছে বেবিচক।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো.মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া একটি বেসরকারি গণমাধ্যমকে বলেন, পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো পর্যায়ক্রমে সচল করা হবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার এবং আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। সবার আগে চালু হবে বগুড়া বিমানবন্দর। আসছে জুনে সব প্রস্তুতি শেষ হলেই সেখানে বিমান চলবে। যদিও বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনার জন্য কিছুটা সময় লাগবে। বেবিচকের চেয়ারম্যান আশা করছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বিমানবন্দরগুলো সচল হলে বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে।
পরিত্যক্ত বিমানবন্দর সাতটি হলো— বগুড়া, লালমনিরহাট, ঈশ্বরদী(পাবনা), ঠাকুরগাঁও, শমসেরনগর (সিলেট), কুমিল্লা এবং তেজগাঁও(ঢাকা)। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গেই রয়েছে চারটি। যথা- বগুড়া, লালমনিরহাট, ঈশ্বরদী(পাবনা) এবং ঠাকুরগাঁও। সাতটির মধ্যে লালমনিরহাট ও মৌলভীবাজারের শমসেরনগর বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে কারিগরি পরিদর্শন করেছে বেবিচকের একটি চার সদস্যের টিম। তাদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বগুড়া বিমানবন্দর: বগুড়া বিমানবন্দর পুনরায় চালু করার সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। যদিও পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। তবে বিমানবন্দরটি প্রাথমিকভাবে ছোট আকারে চালু করে পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণ করা হবে।
লালমনিরহাট বিমানবন্দর: লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দারের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ আমলে ১৯৩১ সালে নির্মিত ৪ কিমি রানওয়ে এবং পূর্ণাঙ্গ অবকাঠামোসহ বিমানবন্দরটি একসময় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে বিবেচিত হতো। ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন না থাকায় দ্রুত কার্যক্রম শুরুর সুযোগ রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের চিঠিতে বলা হয়েছে, এটি চালু হলে লালমনিরহাট বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সংযোগস্থল হয়ে উঠতে পারে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখবে। ভারতের ‘চিকেনস নেক’-এর নিকটবর্তী হওয়ায় আগে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখন তা আর প্রতিবন্ধক নয় বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
পাবনার ইশ্বরদী বিমানবন্দর: এদিকে, পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরুর পর থেকেই ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর জোর দাবি উঠেছে। যদিও ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রূপপুরের সঙ্গে ঢাকার বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও স্থাপিত হয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। অভিযোগ রয়েছে, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে রানওয়ের দৈর্ঘ্য যেমন কম তেমনি পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব। ফলে রানওয়ে সম্প্রসারণসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর: উত্তরের নগরী ঠাকুরগাঁও। সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এটি বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এটি ঠাকুরগাঁও জেলার মাদারগঞ্জে অবস্থিত একটি বিমানবন্দর। এটি সরকারি এবং সামরিক কাজে ব্যবহৃত হয়। বিমানবন্দরটি ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী এখানে হামলা চালালে বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে এটি ১৯৭৭ সালে সংস্কারও করা হয়, ও কয়েক বছর এখানে কিছু বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। পরে অনিবার্য কারণে বিমানবন্দরের কার্যক্রম থেমে যায় এবং ১৯৮০ সালে পরিত্যক্ত হয়। এই বিমানবন্দরটি চালু হলে সীমান্তবাণিজ্য আরও জোরদার হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল এভিয়েশনের সূত্রমতে, দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ২৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে বর্তমানে রাজধানীর সঙ্গে আটটির বিমান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দর। বাণিজ্যিকভাবে সচল বাকি চারটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশালে। এসব সচল রুটের সঙ্গে চলতি বছর থেকে শুরু করে আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যেই যুক্ত হবে বগুড়া, ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, মৌলভীবাজারের শমসেরনগর ও রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার জন্য পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বিমান ওঠানামার জন্য দরকারি অবকাঠামো নেই। যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত এসব রানওয়ে সচল এবং কার্যকর করতে জরুরিভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার প্রয়োজন। ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে থাকা এসব রানওয়ে উন্নীত করে ৬ থেকে ৮ হাজার ফুটের মধ্যে আনতে হবে। তাহলেই বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যাবে।
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ এপ্রিল ২০২৫/মওম