এম জসিম উদ্দিন,চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জাল দলিল- জাল খতিয়ান সৃজনকারী সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। চক্রটি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া জাল দলিল এবং খতিয়ান তৈরি করে আনোয়ারা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সাড়ে চৌদ্দ শতক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে। টিনসেড ভবনে সরজমিন ঘুরে এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আনোয়ারা উপজেলাধীন তৈলারদ্বীপ গ্রামের জমিদার এরশাদ আলী চৌধুরী ও স্থানীয় জমিদাররা আনোয়ারা সদরে তৎকালীন সরকারি প্রশাসন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কয়েকশো একর সম্পত্তি দান করে। উপজেলা সদরের সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীদের টিন সেডের সাড়ে চৌদ্দ শতক সম্পত্তিও তাদের দানের অংশ। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নিকটস্থ বিলপুর গ্রামের আবুল কালাম চৌধুরী নামের এক ভূমিদস্যু প্রায় ১২/১৩ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ওয়েলফেয়ার ক্লাবটি দখলে রেখেছে। অত্যন্ত সু-চতুর আবুল কালাম চৌধুরী ক্লাবটিতে তার মৃত ছেলে ইফতেখার কালামের নামে কেজি স্কুল খুলে অবাধে ব্যবসা করে আসছে। স্কুলটির নাম ‘ইফতেখার কালাম চৌধুরী স্মৃতি বিদ্যাপীঠ। প্রশাসনের নীরবতার সুযোগে ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ১৪/০৪/১৯৯০-এর পুরনো সন ব্যবহার করে এবং সাব রেজিস্ট্রার অফিসের নামে বিভিন্ন নকল সীল তৈয়ার ও স্বাক্ষর জাল করে আবুল কালাম চৌধুরী ও কৈখাইন গ্রামের নাজিম উদ্দীন এই দুই ভূমিদস্যু পৃথক দুটি জাল দলিল ও খতিয়ান সৃজন করে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৬০৭ নং খতিয়ানটিও জাল। আবুল কালাম চৌধুরী জাল দলিল নং- ২১৭০, নাজিম উদ্দিনের জাল দলিল নং- ২১৬৯। আনোয়ারা সাব-রেজিস্টার অফিস ও চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে তল্লাসি দিয়ে উপরোক্ত নাম্বারের দলিলগুলো জাল বলে প্রতীয়মান হয়। জালিয়াতি চক্রের এই দুই সদস্য হলেন, আবুল কালাম চৌধুরী সদর ইউনিয়ন বিলপুর গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে এবং নাজিম উদ্দীন সুজন পরৈকোড়া ইউনিয়ন কৈখাইন গ্রামের নাছের আলীর পুত্র। জাল দলিল তৈয়ারি করার বিষয়ে আবুল কালাম চৌধুরী ও নাজিম উদ্দীন সুজনের কাছে জানতে চাইলে জালিয়াত চক্রের এই দুই সদস্য বলেন, পৃথক দুটি জাল দলিল ও জাল খতিয়ান সৃজন করার পিছনে অত্র কেজি স্কুলের শিক্ষক কনু দত্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। তারা বলেন, কনু দত্তকে জাল দলিল তৈয়ারি করতে আমরা কখনো বলিনি। আমাদের কাছ থেকে দাগে দাগে টাকা নিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে কনু দত্ত জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এর দায়ভার কনু দত্তকে নিতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে স্কুলের শিক্ষক কনু দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলিল ও খতিয়ানগুলো জাল হয়ে থাকলে জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। কনু দত্ত বলেন, স্কুলে আমি অল্প বেতনে চাকরি করি। জালিয়াতির সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। জালিয়াত চক্র নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে সম্পূর্ণ দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আনোয়ারা সদরের হাবিবুর রহমান নামের প্রবীণ এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আবুল কালাম চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ঘোর স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিলপুর গ্রামের রাজাকার কমান্ডার রেজাউল করিমের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন আবুল কালাম চৌধুরী। এই প্রবীণ ব্যক্তি আরও বলেন, বিগত ২০২৩ইং সালে চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বীরের খাতায় লিপিবদ্ধ হন আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রশাসনের নীরবতার কারণে কালাম জঘণ্যতম অপরাধ থেকে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। আবুল কালাম চৌধুরীর অপকর্ম প্রসঙ্গে আনোয়ার সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল মিত্র বলেন, কালাম একজন পেশাদার প্রতারক এবং সন্ত্রাসী। সংখ্যালঘু নির্যাতন করে তিনি বারবার সেঞ্চুরি করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী আবুল কালাম চৌধুরীর বিচার হওয়া উচিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, যত বড় প্রভাবশালী হোক না কেন সরকারি সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত আছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হোসাইন বলেন, ওয়েলফেয়ার জায়গার সমস্যাটি দীর্ঘ সময়ের। তিনি বলেন, জায়গাটি একেক সময় একেক জনের নামে রেকর্ড হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি জাল দলিল ও জাল খতিয়ান সৃষ্টির কারণে অনেকে ফৌজদারী অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন, একই দাগের জায়গা একই সালে এবং একই তারিখে পৃথক দুই ব্যক্তির নামে নিবন্ধন হয়ে থাকলে- এটা তো অদ্ভুত প্রতারণার সামিল। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
আলোকিত প্রতিদিন/১৬মে ২০২৫/মওম