সবাই আছে, কিন্তু কেউ নেই বৃদ্ধ জুয়েলের!

0
134

 খোরশেদ আলম , আশুলিয়া (ঢাকা) :  ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ। স্ত্রী-দুই ছেলে সহ আছে অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন। এক সময়ে প্রথম শ্রেণির একজন ব্যবসায়ী থাকা এই বৃদ্ধ এখন বার্ধক্যের কারণে কেউ তার খোঁজ রাখেন না। স্ত্রী-সন্তানও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তার থেকে। সবাই থাকা সত্বেও যেন কেউ নেই এই বৃদ্ধ জুয়েলের। হ্যা বলছিলাম ষাটোর্ধ বয়সী বৃদ্ধ জুয়েল আহম্মেদের কথা। আশুলিয়ার ডিইপিজেডের এক সময়ের একজন প্রথম শ্রেণির জুট ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। এখন আশুলিয়ার জিরানী বাজারে জাহানারা ক্লিনিক নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তবে তার এই অবস্থায় দুই ছেলে ও স্ত্রী এগিয়ে না আসলেও এগিয়ে এসেছেন আল-ইহসান মানবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা জিরানী বাজার এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী গোলাম জাফর। তার ত্বত্ত্বাবধানে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহ সকল খরচ বহণ করা হচ্ছে। অসুখের শুরু থেকে তার চিকিৎসার সকল দায়-দায়িত্ব নিলেও পরিবারের কেউ আসেনি এগিয়ে। সকল খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি ওই ব্যবসায়ী দিলেও আসেনি কেউ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুলিয়ার ঘুষবাগ পূর্বপাড়া এলাকার মৃত ফিরোজ ভুইয়ার মেয়ের জামাতা তিনি। সংসারে তার দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। এক সময়ে ঢাকা ইপিজেডের প্রথম শ্রেণির একজন জুট ব্যবসায়ী ছিলেন। কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। তার টাকা ও শ্বশুর বাড়ির সহায়তায় করেছেন বাড়ি। কোন কিছুর অভাব না থাকলেও এখন বার্ধক্যের সময় তার পাশে নেই স্ত্রী-সন্তান। বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ পড়ে গিয়ে স্ট্রোক করেন তিনি। এরপর অচেতন অবস্থায় তাকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে টানা ৮ দিন জ্ঞান ফিরে না আসায় ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় পরিবারের সাথে। কিন্তু পরিবারের কেউ তার দায়িত্ব নিতে পারবেনা বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে জ্ঞান ফিরে আসলে ওই হাসপাতালেই করা হয় মাথায় অপারেশন। অপারেশনের পর কিছুদিন সেখানে রেখেই নিয়ে আসা হয় আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের জিরানী বাজার এলাকার জাহানারা ক্লিনিকে। সেখানেই প্রতিনিয়ত হাজী গোলাম জাফর, আরেক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রেজাউল করিম, ক্লিনিকের মালিক মো: হানিফ সহ আল ইহসান মানবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর স্বেচ্ছাসেবীদের অক্লান্ত সেবাযত্নে রয়েছেন তিনি। কিন্তু বার বার তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও কেউ আসছেনা তার দায়িত্ব নিতে। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আসাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে মাসিক বেতনে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের কোন লোকজন আসছে না। এদিকে, ষাটোর্ধ এই বৃদ্ধকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আল ইহসান মানবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা। এব্যাপারে তার পরিবারের লোকজনের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আল ইহসান মানবিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হাজী গোলাম জাফর বলেন, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয় স্বজন সবকিছু থাকা সত্বেও বৃদ্ধ বয়সে এবং অসুস্থতার সময়ে কেউ তার কাছে আসছে না। আমাদের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা আর কতদিন। বার বার তার পরিবারের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেছি, অনুরোধ করেছি কিন্তু কেউ তার পাশে আসেনি। তিনি জানান, তার দেখাশোনা করার জন্য বেতন দিয়ে একজনকে রেখেছি, কিন্তু কত দিন এভাবে চলতে পারে। এই অবস্থায় কি করবো বুঝতে পারছি না। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here