এম. জসিম উদ্দিন, আনোয়ারা, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আনোয়ারায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাতি নেতাদের দৌরাত্ম্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসব ছিঁচকে নেতাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি- সন্ত্রাসী- চুরি- ডাকাতি- চিনতাইসহ নানান অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, একসময় আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে লিপ্ত সন্ত্রাসীরাও বিএনপি- জামায়াতের শেল্টারে বিভিন্ন অফিসে তদ্বিরে করছে। তাদের তদ্বিরের কারণে উপজেলা প্রশাসনের চতুর্থ- পঞ্চম শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্মকর্তারাও বিব্রতবোধ করছেন। বিএনপি- জামায়াতের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলছেন, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে। বিগত বছরের ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরপর বড় নেতা- মাঝারি নেতাদের পাশাপাশি ছিঁচকে নেতা- পাতি নেতাদের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। এদের প্রভাব এবং শক্তি এতটাই বেশি ছিলো যে, ভয়ে প্রশাসনের কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।
সম্প্রতি সিসি টিভিতে ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ আলোকিত প্রতিদিনের প্রতিনিধির নজরে পরে। এসব ছিঁচকে নেতাদের দাপটের কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও সুযোগ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান রফিক-মানিকদের মতো আরও প্রায় ডজন ডজন বিএনপি-জামায়াত-এলডিপি-এনসিপি সমর্থিত অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছেন, যারা চাঁদাবাজি- দখলবাজি সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। এসব নেতারা বিএনপি- জামায়াতের কপালে কলঙ্কের কালিমা লেপন করে চলেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আছেন যারা দলে অনুপ্রবেশকারী বা হাইব্রিড। তাদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ যুবদল-ছাত্রদল সিনিয়র নেতার অনুসারীদের হাতে উপজেলা সদরে অনেক নিরীহ মানুষ মারধরের শিকার হন। মারধরের ঘটনাগুলো সারা আনোয়ারায় তোলপাড় সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদল ও দলের সহযোগী সংগঠনের মধ্যে আমাদের অনুসারী কেউ তদ্বির এবং থানার দালালী কাজে জড়িত নয়। অন্য কোন গ্রুপের নেতাকর্মীর অপকর্মের দায়ভার আমরা নিবো না এবং তাদের কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হলে এ বিষয়েও আমরা দায়ী নই।
সূত্রমতে, আনোয়ারা- কর্নফুলি উপজেলা বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। তবে দীর্ঘদিন হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ এলাকায় আওয়ামী লীগের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা- স্বেচ্ছাচারিতায় গ্রুপ পলিটিক্সের কারণে আনোয়ারা- কর্নফুলি আওয়ামী লীগের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়।
সেসময়ে পশ্চিম আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকা দিয়ে আসা ইয়াবা ট্যাবলেটের ভাগ নিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও আনিসুজ্জামান রনির মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর জাবেদ-রনিসহ তাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে যান এবং অপরাধ রাজ্যের হাল ধরেন বিএনপির কিছু নেতাকর্মী। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাইব্রিড নেতাও রয়েছেন। যারা একসময় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে থেকে নানা অপরাধ করতেন। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ঐসব নেতা-কর্মীরা এখন বিএনপির হয়ে ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং অবৈধ বালু বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গণি মাস্টার বলেন, চাঁদাবাজ দখলবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আমরা সবসময় অভিযোগ করে আসছি। তিনি বলেন, প্রশাসন আমাদের কোন কথার কর্ণপাত করছেন না।
মাস্টার আব্দুল গণি আরও বলেন, জামায়াত ইসলামী- ইসলামী ছাত্র শিবির একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। তদ্বীরবাজদের বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর সভাপতি ও আনোয়ারা-কর্নফুলি আসনের দলীয় প্রার্থী এমরান চৌধুরী বলেন, আমাদের দলের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব, ববি হাজ্জাজের সরাসরি নির্দেশ, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ- তদ্বিরবাজদের স্থান বাংলার মাটিতে হবেনা। এমরান চৌধুরী আরো বলেন, এনডিএন নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তদ্বিরবাজ- চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা হবে। এ বিষয়ে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির হোসেন বলেন, সম্প্রতি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ অভিযানের ফলে থানা কম্পাউন্ডে দালাল তদ্বিরবাজদের আনোগোনা কমে এসেছে। তিনি বলেন, ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশ পেলে প্রশাসনিক এলাকায় তদ্বিরবাজ শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা হবে।
তদ্বিরকারীদের বিষয়ে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, তদ্বিরবাজদের রীতিমতো আনাগোনা ও বিরক্তির কারণে আমার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা চরম অস্বস্তিতে আছে। ইউএনও বলেন, আগামীতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি