নাঈম আজিজের জুলাই বিপ্লবের কবিতা এখন ইতালির পাঠ্যবইয়ে

0
1189

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের একজন শিক্ষক ও কবির লেখা একটি ইংরেজি কবিতা এখন স্থান করে নিয়েছে ইউরোপের পাঠ্যক্রমে। “Rule Over Ashes” শিরোনামে এই কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ইতালির উচ্চ মাধ্যমিক ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ্যবইয়ে, যা বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহস ও ন্যায়ের বার্তা বহন করে বিশ্বমঞ্চে।

কবিতাটির রচয়িতা মোঃ নাঈম আজিজ, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক এবং প্রকৌশলী হলেও নিজের আরেক পরিচয়কে বেশি আপন মনে করেন—তিনি একজন কবি। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী এই কবি বিশ্বাস করেন, কবিতা কেবল আবেগের প্রকাশ নয়, এটি একটি সময়ের দলিল, প্রতিবাদের ভাষা। সম্পাদক হিসেবে তাঁর দুটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ- “বেলা শেষে” ও “বাংলার কবি ও কবিতা” ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে দাঁড়িয়ে তরুণরা যেভাবে প্রতিবাদ গড়ে তোলে, সেই মুহূর্তেই জন্ম নেয় ‘জুলাই বিপ্লব’ নামের এক সামাজিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান। সেই সময়, দেশের ছাত্র-জনতার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা পৃথিবীকে জানাতে, মোঃ নাঈম আজিজ লেখেন একটি কবিতা- “Rule Over Ashes”।

> They sacrificed their lives,
Answering the call.
They accepted martyrdom.
To bring justice for all.

 

কবিতাটি লেখা হয়, জুলাই মাসের শেষভাগে এবং ২৪ থেকে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যেই এটি প্রকাশিত হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অনলাইন কবিতা প্ল্যাটফর্মে। এটি খুব দ্রুতই পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে এবং আন্তর্জাতিক সাহিত্যমহলে আলোচিত হয়।

২০২৫ সালের মার্চে, ইতালির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা Sanoma Italia কবির সঙ্গে যোগাযোগ করে কবিতাটি তাদের ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে সংযোজনের আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে কবির সম্মতি নিয়ে Sanoma Italia এটি তাদের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করে।

উল্লেখ্য, Sanoma Italia দেশটির প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে পাঠ্যবই, ডিজিটাল রিসোর্স, এবং ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম সরবরাহে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। তাদের ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে Paravia ও Bruno Mondadori। তারা চার মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থীর কাছে শিক্ষা পৌঁছে দেয় এবং শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও ক্যারিয়ার গাইডেন্সেও কাজ করে।

এই কবিতার আরেকটি চরণ:

> Justice leads the way,
When darkness falls.
We’ll light the night,
With patience and hope-
We’ll set things right.

শুধু সাহিত্য নয়, এই কবিতায় রয়েছে একটি গভীর নৈতিক বার্তা। ইউরোপের শিক্ষার্থীরা এখন জানছে, একটি দেশের তরুণেরা কিভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, কীভাবে সাহসিকতা হয়ে ওঠে ইতিহাসের মুখপাত্র।

নাঈম আজিজ জানান, “যারা ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সময় সাহস দেখিয়েছেন, আমি তাদের কণ্ঠস্বর হয়েছি এই কবিতায়। আমি কখনও ভাবিনি আমার লেখা একটি কবিতা ইউরোপের পাঠ্যবইয়ে স্থান পাবে। কিন্তু আজ যখন জানি, বাংলাদেশের ইতিহাস এখন ইউরোপের ছাত্রদের পাঠ্য, তখন মনে হয়- শব্দ কখনও ছোট নয়, কবিতা কখনও নীরব নয়।”

তিনি আরও বলেন, “কেউই চায় না পুরোনো কালো ইতিহাস ফিরে আসুক। কিন্তু বাংলাদেশের সাহসী তরুণেরা যা করেছে, তা ইউরোপের অনেক জায়গায় নেই। তাই তাদের উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাও এই তরুণদের গল্পকে মূল্যায়ন করেছে।”

শেষে কবি একটি বিশ্বাস নিয়ে উচ্চারণ করেন:

> কবিতায় ইতিহাস লেখা যায়।
ছাত্রদের হাতেই আগামীর আলো।
আর যখন দেশ নিঃশব্দ হয়, তখন কবিরাই শব্দ করে।

তিনি আরো বলেন, “এই সাফল্য শুধু একজন কবির নয়, এটি বাংলাদেশের সাহসী তরুণদের জন্য এক আন্তর্জাতিক সম্মান।আমার সাহিত্যচর্চা সেই জায়গা থেকে, যেখানে শব্দ হয়ে ওঠে প্রতিবাদ, ছন্দ হয়ে ওঠে প্রতিরোধের ভাষা।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here