জি-৭ সম্মেলনে টানাপোড়েনের কারণে মোদীকে আমন্ত্রণ জানায়নি কানাডা

0
55
জি-৭ সম্মেলনে টানাপোড়েনের কারণে মোদীকে আমন্ত্রণ জানায়নি কানাডা
জি-৭ সম্মেলনে টানাপোড়েনের কারণে মোদীকে আমন্ত্রণ জানায়নি কানাডা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

জি-৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এখনো আমন্ত্রণ জানায়নি কানাডা। এ কারণে গত ছয় বছরের মধ্যে এবারই প্রথম নরেন্দ্র মোদীর এই সম্মেলনে যোগ দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

চলতি মাসের মাঝামাঝিতে কানাডার আলবার্টা প্রদেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য এখনো পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ পাঠায়নি কানাডা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের জি-৭ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না। এর ফলে ২০১৮ সালের পর এই প্রথম তিনি এই ধরনের আয়োজনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

এনডিটিভি বলছে, কানাডার আলবার্টা প্রদেশে আগামী ১৫ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত জি-৭ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু — যেমন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পশ্চিম এশিয়ার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি — নিয়ে আলোচনা হবে।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কানাডা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে কোনও আমন্ত্রণ পাঠায়নি। তবে আমন্ত্রণ এলেও মোদি এই সফরে যেতেন না, কারণ ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বর্তমানে এতটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে যে, এমন সফরের আগে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং পদক্ষেপের প্রয়োজন হতো।

মূলত ভারত এবং কানাডার সম্পর্ক চূড়ান্ত অবনতির দিকে মোড় নেয় ২০২৩ সালে। সেসময় কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, খালিস্তানপন্থি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নির জয় ভারতে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল। ভারত ভেবেছিল, এতে করে উভয় দেশের সম্পর্ক হয়তো স্বাভাবিক পথে ফিরতে পারে।

কিন্তু নয়াদিল্লির মূল্যায়ন অনুযায়ী, কানাডার নতুন সরকার এখনো ভারতের মূল চিন্তার বিষয় — বিশেষ করে কানাডার মাটিতে খালিস্তানপন্থিদের কার্যক্রম — নিয়ে স্পষ্ট কোনও অবস্থান নেয়নি।

এছাড়া দুই দেশের মধ্যে এখনও কোনও উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ পুরোমাত্রায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ভারত কানাডায় নিজের হাইকমিশনার ও পাঁচ কূটনীতিককে দেশে ফিরিয়ে নেয় এবং পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কানাডারও সমানসংখ্যক কূটনীতিক বহিষ্কার করা হয়।

ভারতের একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, “(কানাডায়) প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের জন্য অনেক পরিশ্রম ও প্রস্তুতির দরকার হতো, যা এখনকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবস্থার আলোকে সম্ভব নয়।”

ভারতের আরও একজন কর্মকর্তা জানান, “নিরাপত্তার বিষয়টিও” বড় চিন্তার বিষয়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছু যোগাযোগ হয়েছে এবং উভয়পক্ষ নতুন হাইকমিশনার নিয়োগের বিষয়েও ভাবছে।

এনডিটিভি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ ভারত-কানাডা সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত বারবার অভিযোগ করেছে, ট্রুডোর শাসনামলে কানাডা খালিস্তানপন্থিদের সেদেশে কার্যক্রম চালাতে “লাইসেন্স” দিয়েছে। এমনকি ট্রুডোর বিদায়ের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, “আমরা আশা করি কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে গড়তে পারব। আর সেটা পারস্পরিক আস্থা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে।”

গত ২০২৩ সালে নরেন্দ্র মোদি হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে গিয়েছিলেন। এর আগেও তিনি ইতালি, জার্মানি এবং অন্যান্য সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন। গত বছর ইতালির সভায় তিনি আউটরিচ সেশনে অংশ নেন।

মূলত জি-৭-এর বর্তমান সভাপতি কানাডা। সংগঠনটিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা ও জাপান রয়েছে। এবার আয়োজক হিসেবে সম্মেলনের আয়োজন করছে কানাডা।

আলোকিত প্রতিদিন/০৩জুন ২০২৫/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here