ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ

0
33
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আরও তীব্র আকার নিয়েছে। মূলত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও দেশটির বিভিন্ন শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।

এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া।

১২ জুন বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।এএফপি বলছে, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ অন্তত এক ডজন বড় শহরে বুধবার হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব এবং শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশ দমন করার অভিযোগ তোলেন।

ট্রাম্প সম্প্রতি এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি বিক্ষোভকারীরা সহিংসতা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে”। সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে আন্দোলনকারীরা এই হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় থাকার ঘোষণা দেয়। নিউইয়র্কের এক বিক্ষোভকারী বলেন, “আমরা ভয় পাই না। এটাই আমাদের প্রতিবাদের সময়”।

বিক্ষোভে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে, কিন্তু বিক্ষোভ থামেনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, লস অ্যাঞ্জেলেসে এক হাজারের বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করেছে। এর মধ্যে কিছু এলাকায় রাতের বেলায় ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শহরটিতে দ্বিতীয় রাতের মতো কারফিউ জারি ছিল।ওয়াশিংটনের স্পোকেন শহরে বিক্ষোভের জেরে বুধবার রাতে কারফিউ ঘোষণা করেছেন মেয়র লিসা ব্রাউন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে কারফিউ শুরু হওয়ার সময় জানানো হয় রাত ৯টা ৩০ মিনিট।

লস অ্যাঞ্জেলেসে থাকা ৬৬ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক লিন স্টারজিস বলেন, “আমাদের শহর জ্বলছে না, আগুনে পুড়ছে না— এমনটাই আমাদের ভয় দেখিয়ে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

গত বছর নির্বাচনে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের ‘আক্রমণকারী’ হিসেবে চিত্রিত করে জিতেছিলেন। এবার সেই অবস্থান থেকেই তিনি সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোম এতে স্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্ট এইভাবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেননি।

বর্তমানে মোতায়েনকৃত ৪ হাজার ৭০০ সেনার মধ্যে ১০০০ জন ইতোমধ্যেই ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টদের সহায়তায় কাজ করছে। বাকি সেনারা এখনও প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। পেন্টাগন জানিয়েছে, এই পুরো মোতায়েনের খরচ হবে আনুমানিক ১৩৪ মিলিয়ন ডলার।

গভর্নর নিউসোম অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ইচ্ছাকৃতভাবে এই উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ধরনের সামরিকীকরণ কেবল ক্যালিফোর্নিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—এটি গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত।

এদিকে বৃহস্পতিবার ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবীরা আদালতে যাবেন, যাতে সেনারা অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিযান চালাতে না পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা এই পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে অভিহিত করেছেন।ইতোমধ্যেই সেন্ট লুইস, র‍্যালি, ম্যানহাটান, ইন্ডিয়ানাপলিস, স্পোকেন ও ডেনভার শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

টেক্সাসের সান অ্যান্তোনিওতে শত শত মানুষ নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। ওই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবটও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।

এদিকে শনিবার দেশজুড়ে “নো কিংস” নামে একটি আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেদিন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। এই কুচকাওয়াজটি একদিকে সেনাবাহিনীর ২৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হলেও, ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনের সাথেও এটি মিলিয়ে আয়োজন করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।

অবশ্য লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেছেন, “এই সঙ্কট হঠাৎ করে তৈরি হয়নি, এটি ওয়াশিংটন থেকেই পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। শহরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করে শুরু হওয়া অভিযান থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে।”

এছাড়া বুধবারও বিভিন্ন এলাকায় সশস্ত্র এবং মুখোশ পরা ব্যক্তি অভিবাসন অভিযান চালিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের উপশহর ডাউনির এক গির্জার ফাদার জানান, সেখানে পাঁচজন সশস্ত্র ব্যক্তি একটি স্প্যানিশভাষী ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তিনি পরিচয় জানতে চাইলে তারা বন্দুক তাক করে বলেন, “পিছিয়ে যান।”

এই বিক্ষোভগুলো শান্তিপূর্ণ থাকলেও কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছে এএফপি।

আলোকিত প্রতিদিন/১২জুন ২০২৫/মওম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here