ইরানে হামলার পরও যেভাবে ব্যর্থ হলো ইসরায়েল

0
40
ইরানে হামলার পরও যেভাবে ব্যর্থ হলো ইসরায়েল
ইরানে হামলার পরও যেভাবে ব্যর্থ হলো ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কি ধ্বংস করতে পেরেছে ইসরায়েল? উত্তরটি সম্ভবত “না”। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ইরান সম্ভবত অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দোতে থাকা গোপন ফিসনযোগ্য পদার্থ সরিয়ে নেয়, যা ছিল দেশটির পুরো পারমাণবিক কর্মসূচির প্রধান বা মূল বিষয়। ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘ডিক্যাপিটেশন’ বা মাথা কেটে ফেলা হয়নি বলেই ধরে নেওয়া যায়।

ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল, যাতে তারা ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ (এমওপি) ব্যবহার করে বাংকার ধ্বংসকারী হামলা চালায়। তবে এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সক্রিয় সহায়তা দেয়নি ইসরায়েলকে।

এখন পর্যন্ত এই হামলায় আসলেই কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন অসম্ভব। কারণ ইরান আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না।

সরকার পতনের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে:

ইসরায়েল কি ইরানে “শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন” আনতে পেরেছে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো, তারা অনেকটা বিপরীত ফল অর্জন করেছে। ইরানের বিভিন্ন নিরাপত্তা কাঠামোর সামরিক নেতাদের হত্যা করে ইসরায়েল ইরানি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করার চেষ্টা করেছিল।

ইসরায়েল বিশ্বাস করে, শীর্ষ নেতাদের হত্যা করলেই শত্রুপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই কৌশলেই তারা ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) শীর্ষ নেতাদের হত্যা করেছে। অথচ এই বাহিনী অনেক ইরানির অপছন্দের হলেও ইসরায়েলের এই হামলার সময় সাধারণ মানুষই সরকারের পাশে দাঁড়ায়।

দেশের ওপর আঘাত এসেছে—এই উপলব্ধি থেকেই বিরোধীরাও সরকারকে সমর্থন করে। এছাড়া এভিন কারাগারে হামলা করে ইসরায়েল দাবি করেছিল, তারা রাজনৈতিক বন্দিদের সাহায্য করছে। বাস্তবে এতে বন্দিদের অবস্থা আরও খারাপ হয়, কারণ অনেককে গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এছাড়া এই ধরনের কৌশল কখনোই কাজ করেনি। একমাত্র সম্ভাব্য ব্যতিক্রম ছিল হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর ফলে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ওপর সৃষ্ট প্রভাব, কিন্তু এর সাথে লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতার অনেক সম্পর্ক ছিল। অন্য সব ক্ষেত্রে, ইসরায়েলের চালানো হত্যাকাণ্ড কোনও বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে ‘ইসরায়েল ডুমসডে ক্লক’ বা ঘড়ি ধ্বংস, কিংবা ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি ভবনে হামলার মতো প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক মহলে তেমন কোনো সমর্থন পায়নি। বরং এ কর্মকাণ্ড বা হামলা কিছুটা হাস্যকরই ঠেকেছে।

আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় হয়নি : যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালালেও, তারা সরাসরি ইসরায়েলের যুদ্ধযাত্রায় শরিক হয়নি। মার্কিস প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার পরপরই যুদ্ধবিমান ফিরিয়ে নেন এবং আবারও আলোচনার কথা বলেন— এমনকি ইসরায়েল-ইরান উভয়ের সঙ্গে।

বিশ্বনেতারা ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেননি। কেউই বলেননি যে ইরান পুরোপুরি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ বন্ধ করুক। বরং সবাই আগের অবস্থানে ফিরে যান— ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি না করে। ইরানও বলে এসেছে, তারা এই বোমা বানাতে চায় না।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বৈধতা ও অবস্থান অটুট: বিশ্বের দৃষ্টিতে ইরান এখনো একটি বৈধ পক্ষ। ইউরোপ, চীন বা ভারত— সবাই তেহরানের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির এই ভারসাম্যে ইসরায়েলের জন্য এটি একটি কৌশলগত পরাজয়।
ইসরায়েলে ক্ষয়ক্ষতি ও সংকট: যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল ইরানের ওপর দ্রুততার সাথে আকাশে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারলেও, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বহুবার ইসরায়েলের ভেতরে আঘাত হানে, দেশব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে।
ইরান: বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেও স্থির । ইসরায়েলের হামলায় ইরানে শত শত মানুষ হতাহত ও দেশটি পরিকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও ইসলামি প্রজাতন্ত্র টিকে আছে। তেহরান ধসে পড়েনি। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভেদে সফল হয়েছে, বিশ্বে তারা ‘আক্রান্ত দেশ’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার আগে তারা যে সতর্কবার্তা দিয়েছিল, সেটিও ছিল কৌশলগত সাফল্য। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ট্রাম্পকে পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে থামাতে ফোন করতে হয়।

মোটকথা, ইসরায়েল চেয়েছিল ইরানকে দুর্বল করে দুনিয়াকে দেখাতে যে তারা সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নায়ক। বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু ইরান এখনো দাঁড়িয়ে আছে। যদিও সামনে আরও সংঘাতের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় এই মতামত নিবন্ধটি লিখেছেন ওরি গোল্ডবার্গ। তিনি ইরান-ভিত্তিক রাজনীতি ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

আলোকিত প্রতিদিন/২৫ জুন ২০২৫/মওম 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here