স্টাফ রিপোর্টার, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল হতে আজ অব্দি ঝিনাইদহ জেলা বিটিএর সভাপতি প্রধান শিক্ষক মহি উদ্দীনের ক্ষমতার দাপটে জিম্মি হয়ে পড়েছে তাঁর স্কুলের সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
তাঁর দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন তাঁরই স্কুলের সহকারী শিক্ষক (জীব বিজ্ঞান) মোঃ আসাদুজ্জামান বিপ্লব। তিঁনি অভিযোগ করেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক ৫ম গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মায়াধরপুর, কুলফাডাঙা (এম, কে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই প্রধান শিক্ষক মহি উদ্দীন তাঁকে ক্লাস পরিচালনা, রেজুলেশন, এমপিওভুক্তি এবং এরিয়ার আবেদনের ক্ষেত্রে অনেক ভোগান্তি দিয়েছেন। তিঁনি আরো বলেন বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই দেখেছেন প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাধ্যমে জানতে পারেন স্বঘোষিত, অনির্বাচিত শিক্ষক নেতা হবার পর থেকেই মহি উদ্দীন স্যার বিভিন্ন অফিসিয়াল মিটিং এর নাম ভাঙিয়ে নিয়মিত স্কুল ফাঁকি দেন, বিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস নেননা।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ে মহি উদ্দীনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিলো সম্পূর্ণ অযোগ্যতায় এবং সন্ত্রাসী কায়দায়। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সবাই ভয় পায়, কারণ বিগত সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে কেউ কিছু করতে পারেনি বরং হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের নামের ১৫ শতক জমি বিধি বহির্ভূতভাবে বিক্রির বায়নাপত্রের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা নিয়ে ২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংটা অন্যের জমিতে করা যা এখনো রেজিস্ট্রি হয়নি। মালিক পক্ষের পরিবারের একজন সদস্যের চাকরি দেবার আশ্বাসে এবং ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে ঐ জমিতে নতুন বিল্ডিং করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সাইকেল স্ট্যান্ডের নামে বরাদ্দকৃত ৫০ হাজার টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের মাটি ভরাটের টাকাসহ বিভিন্ন অনুদানের বাজেট এবং আয়-ব্যায়ের হিসাবেও গড়মিল করেন। তাঁর সকল দুর্নীতি ও অপকর্মে সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মায়াধরপুর গ্রামের মোঃ টিপু সুলতান (লাইব্রেরিয়ান)। অফিসিয়াল ভাবে মহি উদ্দীনের সকল দুর্নীতি ও অপকর্মের সহযোগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মোঃ কামরুজ্জামান।
মহি উদ্দীন ১৯৯০ সালে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ফাজিল পাশ করার পর ১৯৯২ সালে কামিল পাশ করেন। একই সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে বি.এ পাশ করেন। কামিল এবং বি.এ পাশ কোর্স একই সাথে নিয়মিত ব্যাচে করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তরে সখ্যতার অপব্যবহারে ইতোপূর্বে জেলার অনেক শিক্ষক মহি উদ্দীনের রোষানলে পড়ে প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এছাড়াও মহি উদ্দীনের বিভিন্ন অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও ক্ষমতার দাপটে তিঁনি সবকিছু ম্যানেজ করেছেন। মহি উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান বিপ্লব বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সমগ্র অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই-বাছাই করেছেন এবং লিখিত ও রেকর্ডকৃত কিছু প্রমাণ রেখেছেন। সকল সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রত্যাহার করতে মহি উদ্দীনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ বিভিন্ন হুমকির পর নতুন ষড়যন্ত্র এবং প্রাণনাশের আশঙ্কায় থানায় জিডি করে রেখেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ১৮/০৫/২০২৫ খ্রি. ৩৭.০২.০০০০.১০৭.৩১.২০০.২০২৫/৭৫৮ স্মারক নং এ জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট অভিযোগের বিষয়টি তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত ও প্রমাণকসহ প্রতিবেদন আগামী ০৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে মাউশি অধিদপ্তরে প্রেরণ করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি