ফয়েজ:
আমাদের দেশে প্রাচীন আমল থেকে হুঁক্কার প্রচলন ছিল গ্রাম বাংলার প্রতিটি এলাকা। কালক্রমে গ্রামে গঞ্জে সকাল কিংবা বিকেলে হুকা খাওয়ার আসর বসত। সময়ের সাথে কাগজে পেচিয়ে বিড়ি, সিগারেট বাজারে আসে এবং হুক্কা ও সিগারেট এক পর্যায়ে বিলুপ্ত হয়ে নেশা জাতীয় হিরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, আফিম, গাজা, কোকেন ইত্যাদির মত ভয়াবহ মাদক স্থান পায়। যেখানে সিগারেটের ধোয়ায় যে দূষণটা তৈরি হয় তা আয়ত্বের বাইরে নিয়ে যেতে ঘন্টায় প্রায় ৮ কিলোমিটার বাতাসের গতির দরকার হয়, সেখানে মরণব্যাধি তন্দ্রাচ্ছন্ন নেশার ক্ষতিটা কতটুকু, এই মরণ নেশা মাদক পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে বিশেষ করে কুমিল্লায় ত্রিপুরা রাজ্য থেকে অনায়াসে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে।গবেষণার ফলাফলের অংশে বলা হয় দেশে প্রাক্কলিত মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৩ লাখ। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪.৮৯ শতাংশ। আমাদের কুমিল্লা জেলার গ্রাম-গঞ্জ আজ যেন মাদকে ভাসছে। এমন পরিস্থিতিতে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও ভৌগোলিকভাবে মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে।। আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানের পথ হিসাবে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল (মিয়ানমার, লাউস ও থাইল্যান্ডের সীমানা), গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (ইরান, আফগানিস্তানও পাকিস্তান) এবং গোল্ডেন ওয়েজের (ভারতের হিমাচল, উত্তর প্রদেশ, অরুণাচল, নেপাল ও ভুটানের কিছু অংশ) একেবারে কেন্দ্রে অবস্থান হওয়ায় এমন ঝুঁকিতে বাংলাদেশ। মাদকাসক্তরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনি নষ্ট হচ্ছে। এতে বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। দেশ থেকে ও বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তরুণদের একাংশের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দাম্পত্যে জীবনে বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা ভারতীয় ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত এলাকা হওয়ায় পাচোড়া, নগর, নবীয়াবাদ, শশীদল, গিলাতলাসহ কয়েকটি স্পট গুরুত্বপূর্ণ মাদকের পথ (রুট) হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। মাদক বিরোধী অভিযানে ছোট কারবারিরা কিছুটা শাস্তির আওতায় আসলেও মাদকের গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কথা উঠছে মাদক প্রতিরোধের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো কেউ কেউ নিজেরাই এ কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। আর এ কারণেই জিরো টলারেন্স ঘোষণার পরেও মাদকের লাগাম টানা যাচ্ছে না। মাদকের এই বিস্তারের কারণে একই সময় অন্যান্য অপরাধ যেমন ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ভয়াবহরূপ ধারণ করছে গ্রামীণ সমাজে। সমন্বিত উদ্যোগ ও জিরো টলারেন্স অর্থে যা বুঝায় সেই পদক্ষেপ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আসুন মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।
আলোকিত প্রতিদিন/২৮ জুন ২০২৫/মওম