আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চার দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াই শেষে অস্ত্র ত্যাগ করেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। এই ঘোষণাকে ‘ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান। শনিবার নিজ দলের (একেপি) এক সভায় এরদোয়ান বলেন, সন্ত্রাসের অভিশাপের অবসান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বহু বছর ধরে চলা শোক, অশ্রু এবং কষ্টের সমাপ্তি ঘটেছে। তুরস্ক একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আজ ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায় উন্মোচিত হলো। আজ একটি মহান, শক্তিশালী তুরস্কের দ্বার উন্মুক্ত হলো।
শুক্রবার ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় সুলায়মানিয়াহ প্রদেশের ডুকান শহরের কাছে জাসানা গুহায় ৩০ জন পিকেকে সদস্য তাদের অস্ত্র পুড়িয়ে দেন। এ ঘটনাকে প্রতীকীভাবে সংগঠনটির সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে পিকেকে-র জ্যেষ্ঠ সদস্য বেসে হোজাত বলেন, আমরা স্বেচ্ছায়, সদিচ্ছা এবং সংকল্পের প্রতীক হিসেবে আপনাদের উপস্থিতিতে অস্ত্র ধ্বংস করছি।
১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে পিকেকে। এই সংঘাতে ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে সংগঠনটি অস্ত্র পরিহার ও ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ভূমিকা রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের।
ওজালান ১৯৯৯ সাল থেকে তুরস্কের ইমরালি দ্বীপে বন্দি। সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, এটি সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং আইনের পথে স্বেচ্ছায় রূপান্তর। এটি একটি ঐতিহাসিক অগ্রগতি।
পিকেকে বর্তমানে ইরাকের উত্তরের দুর্গম এলাকায় অবস্থান করছে। তবে এই নিরস্ত্রীকরণ শুধু তুরস্কের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। বিশেষ করে প্রতিবেশী সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কুর্দি বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এসব গোষ্ঠীকে তুরস্ক পিকেকে-র অংশ বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক উভয়েই চায় সিরিয়ার কুর্দিরা নতুন সরকারের সঙ্গে একীভূত হোক।
এদিকে তুরস্কের ভেতরেও কুর্দিদের রাজনৈতিক দল ডিইএম, পিকেকে ও ওজালান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে কুর্দি অধ্যুষিত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের অধিকার নিয়ে আলোচনা শুরু করতে।
পরবর্তী ধাপে আরও কিছু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া নির্ধারিত স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে তুরস্ক, ইরাক ও ইরাকের কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/১২জুলাই ২০২৫/মওম