মোঃ আনোয়ার হোসেন:
মৃৎশিল্প হলো মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করার শিল্প। এটি প্রাচীন একটি শিল্প যা কুমার সম্প্রদায়ের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। এই শিল্পে হাড়ি, পাতিল, থালা, বাসন, খেলনা, শোপিস, ইত্যাদি তৈরি করা হয়। মৃৎশিল্পকে ইংরেজিতে “pottery” বা “ceramic art” বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মৃৎশিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং এটি বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। মৃৎশিল্পের কারিগরদের “কুমার” বলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় এককালে মূৎশিল্পের সুনাম ছিল কিন্ত নানা প্রতিকূলতার বর্তমানে নবীনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিপন্ন হতে চলেছে।এ এ উপজেলার ভোলাচং, নারায়ণপুর, ভেলানগর, ইব্রাহিমপুর, শ্রীরামপুর, বিটঘর প্রভৃতি গ্রাম এক সময় মৃৎশিল্পের প্রাণ কেন্দ্র ছিল। এ সব গ্রামে ন্যূনতম তিন হাজার মুৎশিল্পী রাত দিন কাজ করত। তারা সুনিপুণ ভাবে হাড়ি, পাতিল, বাসন, ডাকনা, কলকে ও কলস, হরিণ, হাতি, গরু, জলকাদা, মটকা, মুক্তি, বসার- পিড়ি, ঘোড়া, বাঘ, ফুলদানী, টব, ব্যাংক, প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নয় কুমিল্লা, নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সরবরাহ হত, কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিকূলতার নবীনগরের মুৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মাত্র শ’খানেক মৃৎশিল্পী তাদের পেশা কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের পেশার দৈন্য দশায় সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এখন মাটির তৈরি জিনিষের স্থান দখল করে নিয়েছে এলুমনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজষপত্র, এর দাম বেশি হলেও অধিক টেকসয়। তাই দিন দিন গ্রামের সাধারণ মানুষ এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র ক্রয় করে । মৃৎশিল্পী জয় পাল জানান- “মৃৎশিল্প তৈরীর উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় । ফলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পে আমাদের ঋণের বোঝা ভারী হয়ে গেছে”। নানা প্রতিকূলতায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই নবীনগর উপজেলার মৃৎশিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ১লা বৈশাখ উপলক্ষে কয়েক জন মৃৎশিল্পী ব্যস্থ সময় পার করছেন। কয়েক বছর আগে নবীনগর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ও স্থানীয় এনজিও হোপ এর সহযোগিতায় অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় কারিগরদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যদিও এর প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে যদি সরকারী ভাবে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ করানো ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয় তাহলে হয়তো এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/১২জুলাই ২০২৫/মওম