মোঃ আনোয়ার হোসেন:
বর্ষা মানেই খাল-বিলে থৈ থৈ পানি। নদী-নালা খাল- বিল নতুন পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যাওয়া। আর নতুন পানিতে ছুটে আসে নানা প্রজাতির মাছ। এ মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে নানা কৌশলে মাছ ধরা হয়। বাঁশ দিয়ে তৈরি আনতা, চাই, খৈলশুন (বত্তি), ভাঁইড় (চোকা) এ রকম মাছ ধরার যন্ত্র/ফাঁদ তৈরি এবং কেনা-বেচায় ধুম পড়েছে নবীনগরে। মাছ ধরার অপেক্ষাকৃত সহজ কৌশল হল মাছ চলাচলের পথে এ ফাঁদ পেতে রাখা। খাল- বিল এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে এ ফাঁদ পেতে দেশী প্রজাতির মাছ ধরেন গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাই এখন বর্ষার মৌসুমে এখানকার হাট- বাজার গুলোতে মাছ ধরার ফাঁদ কেনা-বেচার ধুম পড়েছে। জানা যায়- উপজেলার মাঝিয়ারা, শ্রীঘর বাজার, শ্যামগ্রাম, ভোলাচং, বাঙ্গরা বাজার, শিবপুর, বিটঘর, বাইশমৌজা প্রভৃতি হাট-বাজার গুলোতে মাছ ধরার এ দেশী যন্ত্র গুলো বেশি বিক্রি হয়। এ যন্ত্র/ফাঁদ তৈরির নির্মাতারা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তারা বাঁশ কেনা, বাঁশ কাটা, শলাকা তৈরি করা, ফাঁদ বোনার কাজ করেন। এ নিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে তাদের পরিবার গুলো। আনতা প্রস্তুতকারী জুয়েল মিয়া জানান- এখন আনতা/চাই তৈরিতে আমরা ব্যস্ত। পরিবারের সবাই মিলে এ কাজ করি। এই আয় দিয়েই সংসার চলে। দেশীয় বাঁশ দিয়ে এ সব উপকরণ তৈরি করা হয়। আরেক প্রস্তুতকারী আমির হোসেন জানান- একটি ভাল বাঁশ থেকে ৩টি আনতা তৈরি করা যায়। প্রতিটি আনতা বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ও আনতা/চাই প্রস্তুতকারী সুমন মিয়া, ইছহাক মিয়া, সুবল দাস জানান- একটি বড় বাঁশের দাম পড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ধারালো দা দিয়ে বাঁশের শলাকা তৈরি করা হয়, প্রতিটি শলাকা বা কাঠি নিখুঁত ভাবে বুনন করে বেত/সুতা দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয় আনতা/চাই নামক মাছের ফাঁদ। বাঁশ কেটে, শলাকা তৈরি করে একজন মানুষের পক্ষে দিনে ৩টি আনতা তৈরী করা সম্ভব। উপজেলার বাঘাউড়া গ্রাম থেকে আনতা কিনতে আসা রহিম মিয়া জানান- প্রতি বছর শখের বসে আমি ৩/৪টি আনতা ক্রয় করি। বাড়ির পাশে খালে/ড্রেনে (নালাতে) এ গুলো ব্যবহার করে ছোট চিংড়ি, পুঁটি, চান্দা, বৈচা, খৈলশা, ডানকানা, মলা, বাইম/গুতুম, শিং, টেংরা, ছোট টাকি প্রভৃতি মাছ ধরি। এতে বাজার থেকে আমার আর মাছ কিনতে হয় না। বাইশমৌজা বাজারের ইজারাদার জানান- বছরের এই সময় প্রতি সপ্তাহের হাটে চলে আনতা কেনা-বেচার ধুম। প্রয়োজনের তুলনায় বাজারে আনতা/চাইয়ের সরবরাহ কম থাকায় দাম একটু বেশি। কয়েক দিন পর সরবরাহ বাড়বে বলে জানান তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/১৫জুলাই ২০২৫/মওম