আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৩১ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নদীভাঙনের ভয়াল থাবা: বিলীন হচ্ছে মানিকগঞ্জের মালুচি ও কুশেরচর গ্রাম

-Advertisement-

আরো খবর

মো: মহিদ:
৭০ বছর বয়সী নেছা বেগমের বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর পাড়েই। স্বামী ইছহাক আলীর সঙ্গে ১১ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছিল তাদের ছোট সংসার। নদীর ভাঙন এখন সেই বাড়ির গা ঘেঁষে চলছে—যেকোনো মুহূর্তে তা বিলীন হয়ে যেতে পারে। শেষ বয়সে স্বামীর রেখে যাওয়া বসত বাড়িতেই  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করাটাই  এখন নেছা বেগমের চাওয়া। তার মত এই গ্রামের  অনেকেই এখন আতঙ্কে দিন পার করছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের মালুচি ও কুশেরচর গ্রামে পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে শত শত মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং গাছপালা। মালুচি গ্রামে এখন ১৫০ থেকে ২০০টি পরিবার সরাসরি হুমকির মুখে। এর আগেই দুই গ্রামের অনেক মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। মালুচি গ্রামের সিদ্দিক প্রামানিকের স্ত্রী মাজেদা আক্তার বলেন—”আমার ৫ শতাংশ জমি গাছপালাসহ চলে গেছে নদীতে। দিনমজুর স্বামীর আয়ে কোনোমতে সংসার চালাই। যে কোন মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বাড়িটিও। শেষ সম্বল এই বাড়িটি ভেঙে গেলে রাস্তায় থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। মালুচি গ্রামের পাশেই কুশেরচরের কৃষক আইয়ুব আলী ভূঁইয়া জানান, “আমি তিনবার নদীতে বাড়ি হারাইছি। প্রায় ২০-৩০ বিঘা ফসলি জমি গেছে পদ্মায়। এখন মামার বাড়ির জমিতে কোনোমতে বাস করছি। এখনো আমার নতুন বাড়িটাও হুমকির মুখে। নদীভাঙনের কবলে পড়ে এলাকাবাসী শুধু বসতভিটাই হারায়নি, বিপন্ন হয়েছে বহু স্থাপনা। ইতোমধ্যেই হুমকির মুখে পড়েছে মালচি পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, রাহমানিয়া ফুরকানিয়া মাদ্রাসা, ২০নং মালুচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাদব গোঁসাই আশ্রম এবং দক্ষিণ গায়ানবাড়ি জামে মসজিদ। পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাঞ্চনপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাক ফেলে নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য গণ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সময়। গত শনিবারও বেলা ১১ টায় হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের আয়োজনে হয় গণসমাবেশ। সেখানে বক্তব্য রাখেন, কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি খোরশেদ আলম খান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজহারউদ্দিন, ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ইদ্রিস আলী, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী আব্দুর রহমানসহ অনেকে। তারা বলেন, গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী ছিল। কৃষিকাজ করে ভালোই চলছিল জীবন। কিন্তু পদ্মার অবিরাম ভাঙনে তারা এখন নিঃস্ব। বাড়ি নেই, জমি নেই, উপার্জনের পথও প্রায় বন্ধ। কুশেরচরের ৩নং ওয়ার্ডে কিছু এলাকায় জিও ব্যাগ দেয়া থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। কাঞ্চনপুর ইউনিয়নবাসীর দাবি—বর্তমান জিও ব্যাগের সীমা থেকে অন্তত আরও ৬০০-৭০০ মিটার পর্যন্ত জিও ব্যাগ না দিলে মালুচি ও কুশেরচর দুই গ্রামই পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি তাদের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে টেকসই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে নদীভাঙনের এই ভয়াবহতা থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করা হোক। এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর বাম তীরে কালিতলা থেকে মালোচি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যে, ইতিমধ্যে কালিতলা এলাকায় জরুরি আপৎকালীন কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং নদী ভাঙ্গন হ্রাস পেয়েছে। কালিতলা থেকে মালোচি পর্যন্ত অবশিষ্ট ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যে কাজ বাস্তবায়নের লক্ষে জরিপ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সার্বক্ষণিক ভাঙ্গন এলাকা মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/২০জুলাই ২০২৫/মওম 
- Advertisement -
- Advertisement -