আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ৩১ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বাংলা একাডেমির “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা” সংকলন নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

-Advertisement-

আরো খবর

- Advertisement -
- Advertisement -

বিশেষ প্রতিনিধি : ‘বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হলেও জনগণের টাকায় চলে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে যে সংকলনটি প্রকাশ পেয়েছে তাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কবি-লেখকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’ তীব্র সমালোচনার মুখে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ সংকলন। বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছে। সংকলনটির সূচিপত্র বুধবার (২৩ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর লেখক ও পাঠক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এবিষয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের সংক্ষুব্ধ লেখক সমাজ আজকে বাংলা একাডেমির সামনে মানব বন্ধন করেছে। প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ আজম এবং হাসান রোবায়েত ও রওশন আরা মুক্তার সম্পাদনায় প্রকাশিত সংকলনটিতে স্বৈরাচারের দোসরদের যুক্ত করা হয়েছে বলে সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন। সূচিতে থাকা গুটিকয়েক লেখক বাদে অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত অথবা সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। লেখক ও পাঠক মহল থেকে আরো অভিযোগ করছে, বাংলা একাডেমির মতো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে মানের সংকলন প্রকাশ করেছে তাতে উপেক্ষা করা হয়েছে জুলাই আন্দোলনের মূলধারার কবিদের। একাডেমির মহাপরিচালক এবং সংকলনের সম্পাদকরা এই দায় এড়াতে পারেন না। এ ব্যাপারে জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এটি জনগণের টাকায় চলে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতা’ নামে যে সংকলনটি প্রকাশ পেয়েছে তাতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের কবি-লেখকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি দেখতে পেয়েছি, এ সংকলনটিতে স্বৈরাচারের দোসরদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সংকলনটি বাতিল করে নতুন করে আরেকটি সংকলন করা দরকার আর তার দায়িত্ব এমন একজনকে দেয়া দরকার যিনি কবিতার খোঁজখবর রাখেন ও জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করেন।’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ধারণ না করা এই সংকলনের প্রকাশের দায়ভার বাংলা একাডেমিকে নিতে হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের সভাপতি কবি শাহীন রেজা বাংলা একাডেমি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারি পয়সা নষ্ট করে জুলাই আন্দোলন এবং দেশের কবি সমাজকে নিয়ে এমন রসিকতার জবাব কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে। প্রস্তুত হন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সংকলনটির প্রথম কবিতাটি একজন চিহ্নিত ফ্যাসিস্টের দোসরের। যিনি আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী।’ তিনি বলেন, ‘আগামী ২৭ জুলাই বাংলা একাডেমি ঘেরাও করা হবে এবং জুলাই চেতনার নামে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা প্রতিহত করা হবে।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও সংকলনটির সম্পাদকদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে, জাতীয়তাবাদী লেখক ফোরামের ব্যানারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কবিতার নামে ফ্যাসিস্ট লালন ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে আগামী রোববার (২৭ জুলাই) লাল জুলাইয়ের কবিতা পাঠ ও বাংলা একাডেমি ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও, জুলাই আন্দোলনের পক্ষের লেখক-কবিরা বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংকলনটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে কবি ও সাংবাদিক শান্তা মারিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন – বাংলা একাডেমি একটি অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে বাংলা একাডেমি আবারও প্রমাণ করলো এটি বরাহ নন্দনের মতো অকাল প্রসবী একটি প্রতিষ্ঠান। বাংলা একাডেমি জুলাই বিপ্লব নিয়ে লেখা একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করেছে। সেখানে কবি তালিকার দিকে যদি তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যারা জুলাই বিপ্লব চলমান অবস্থায় সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন এবং কবিতা লিখেছিলেন তাদের অধিকাংশ কবির কবিতাই এখানে নেই। এখানে কবি আবদুল হাই শিকদার, ড. মাহবুব হাসান, আবিদ আজম, আবু জুবায়ের, শাকিল রিয়াজ, সাজ্জাদ বিপ্লব, শাহীন রেজা, শাহিন রিজভি, মনসুর আজিজ, আবদুল বাতেন, রাজু আলাউদ্দিন, ফাতিমা তামান্না, সৈয়দ রনো, জামিল জাহাঙ্গীর, মুহিবুর রহিমসহ অনেক প্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত কবিরই নাম নেই। অথচ তারা জুলাই বিপ্লবে কবিতার মাধ্যমে এবং রাজপথেও সাহসী প্রতিবাদী ভূমিকা রেখেছিলেন। আমি পুরো তালিকাটি দেখলাম। কয়েকজন বিখ্যাত কবি (যেমন জাহাঙ্গীর ফিরোজ, জাকির আবু জাফর) ছাড়া আর কোন কবি পদবাচ্য ব্যক্তির নাম খুঁজে পাইনি। আবার এমন কোন কোন কবির নাম দেখলাম যারা জুলাই বিপ্লবের বিরোধিতা করেছিল এবং এখনও পতিত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে কাজ করছে। এরূপ অশ্বডিম্ব প্রকাশ করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে আলোকিত প্রতিদিন এর সম্পাদক – সৈয়দ রনো বলেন – বাংলা একাডেমির জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংকলন নিয়ে আমার কয়েকটি জিজ্ঞাসা রয়েছে কর্তৃপক্ষের নিকট ১) কেন সংকলনে হাসান রোবায়েত ও রওশন আরা মুক্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেন, তাঁরা কি বাংলা একাডেমির কোন কর্মকর্তা? ২) তাঁরা কি বাংলা সাহিত্যের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মুলধারার কবিদের প্রতিনিধিত্ব করেন? ৩) কেন হাসান রোবায়াত তাঁর স্ত্রীর সহ নিজের কবিতা বিভিন্ন বিশেষ ক্রোড়পত্রে প্রকাশ করে থাকেন? লজ্জা শরম কি নেই? ৪) সে কতো বড় কবি তাঁর কবিতা ৭ম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে কেন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে?৫) কেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংকলনে জুলাই – আগষ্ট ৩৬ দিনের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে কোন কবিতা লিখেননি তাদের লেখা এখানে ছাপানো হলো?৬) কেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের লেখক, কবি, কম করে হলেও ২০০ জনের মান সম্পুর্ন লেখা ছাপানো হলো না ?৭) কেন বাংলা একাডেমিতে এখনো ফ্যাসিববাদের দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে? এমতাবস্থায় করনীয় সম্পর্কে তিনি বলেন – এই সংকলন বাতিল করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের কবি, সাহিত্যকদের লেখা নিয়ে পুনরায় সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের মুলধারার কবিদের নিয়ে একটি সম্পাদনা পরিষদ গঠন করা যেতে পারে। যেমন ১) কবি আল মুজাহিদী ২) ছড়াকার আবু সালেহ ৩) কবি আবদুল হাই শিকদার ৪) কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ৫) কবি শাহীন রেজা ৬) কবি ড. মাহবুব হাসান ৭) কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ ৮) কবি জাকির আবু জাফর ৯) কবি শান্তা মারিয়া প্রমুখ। যাঁরা কবিতা বুঝেন এবং প্রকৃত কবিদের চিনেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন – ফ্যাসিস্টদের যাঁরা পুনর্বাসন করতে চায়, তাঁদের বিচার করতে হবে। আজকে যাঁরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আসুন সবাই মিলে ( জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের কলম সৈ*নিক) আগামী ২৭ জুলাই ২০২৫, রবিবার, সকাল ১১ টায় বাংলা একাডেমি ঘে*রাও করি। দোষীদের পদত্যাগের দা*বীতে সত্য উচ্চারণ করি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের কবিতা পাঠ করি। সকলের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সবিনয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

- Advertisement -
- Advertisement -