কক্সবাজারে ৩ ইউপি চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে ইউএনও ও এসিল্যান্ডকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ
অপ*হরণের চারদিন পর শিশুর নিশাতর ম*রদেহ উদ্ধার,৩ আসামি গ্রে*ফতার
হামলা ও ভাঙচুর মামলায় হাবলু গ্রেফতার
হাসিনার বক্তব্যকে সমর্থন করে না ভারত : বিক্রম মিশ্রি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনও বক্তব্যকেই সমর্থন করে না ভারত। এমনটাই জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
মূলত ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে তিনি একথা জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেবল একটি “একক রাজনৈতিক দল” বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বলেও জানিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি। ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ব্রিফিংয়ে বুধবার পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন-বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনাকে ভারত সমর্থন করে না এবং এটি (হাসিনার বক্তব্য) বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুবই ছোট বা তুচ্ছ বিষয়। বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক কেবল একটি “একক রাজনৈতিক দল” বা সরকারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং “বাংলাদেশের জনগণের” ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ভারত। চলতি বছরের আগস্টে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে চলছে টানাপোড়েন।গত জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে এরপরও হাসিনা ভারত থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।
এমন অবস্থায় সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সফর করেন। তার ঢাকা সফর থেকে ফেরার দু’দিন পর তিনি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। বুধবার নয়াদিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা ব্রিফে দেশটির ২১ থেকে ২২ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে বিক্রম মিশ্রি বলেন, শেখ হাসিনা তার “ব্যক্তিগত যোগাযোগের ডিভাইস” ব্যবহার করে এসব বক্তব্য এবং বিবৃতি দিয়ে চলেছেন এবং ভারত সরকার তাকে এমন কোনও প্ল্যাটফর্ম বা সুবিধা প্রদান করছে না যা তাকে ভারতের মাটি থেকে তার রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর সুযোগ দেয়।
তিনি দাবি করেন, অন্য দেশে হস্তক্ষেপ এড়ানোর জন্য ভারতের ঐতিহ্যবাহী যে রীতি রয়েছে, এটি তারই অংশ। দ্য হিন্দু বলছে, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির এমন মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে প্রায় নানা ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন হাসিনা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে মিশ্রি আরও জানান, সোমবার ঢাকা সফরের সময় তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে জানিয়েছেন-বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক “কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল” বা একটি নির্দিষ্ট সরকারের বাইরেও আছে এবং ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয় এবং বর্তমান সরকারের সাথেও জড়িত থাকবে। তিনি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্য এবং যোগাযোগের বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পক্ষ রেল যোগাযোগ, বাস সংযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌপথ নির্মাণ করেছে। তিনি অবশ্য কমিটিকে জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে যাত্রীবাহী রেল পরিষেবা এখনও “স্থগিতই” রয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে প্রথম শীর্ষ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব। সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
আলোকিত প্রতিদিন/১২ ডিসেম্বর-২৪/মওম
র্যাব বিলুপ্তির বিষয়ে সরকারের সি*দ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে!
আলোকিত প্রতিবেদক : র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির বিষয়ে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই মেনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। এ সময় র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা গুম ও খুনের অভিযোগের জন্য ক্ষমা চান তিনি। পাশাপাশি দায়িত্বে থাকাকালীন নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
সমসাময়িক বিষয় ও সাম্প্রতিক আভিযানিক কার্যক্রম সম্পর্কে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে গুম খুনসহ কিছু অভিযোগ আছে। র্যাবের দ্বারা যারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভবিষ্যতে এ বাহিনী এমন কোনো কার্যক্রমে কারও নির্দেশে জড়িত হবে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সেসবের বিচার নিশ্চিত করা হবে তিনি জানান।
গত কয়েকদিন ধরে র্যাবের বিরুদ্ধে গুম খুনের অভিযোগের পাশাপাশি র্যাবের আয়নাঘর প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে র্যাবের বক্তব্য কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘র্যাবে আয়নাঘর ছিল, আছে। সেটা সেভাবেই রাখা হয়েছে। গুম, খুন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে আয়নাঘরসহ যা যে অবস্থায় আছে সেভাবেই রাখার জন্য। আমরা কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করিনি। যা যে অবস্থায় ছিল, সে অবস্থাতেই রাখা হয়েছে এখনও।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাবের বিরুদ্ধে আয়নাঘর, গুম, খুনসহ যত ধরনের অভিযোগ ছিল তার তদন্ত করছে কমিশন। আমরা র্যাবের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করছি। আমরা মনে করি, তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। পরে র্যাবের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে র্যাবের ১৬ সদস্য বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালানো ২৩ জনকে গ্রেপ্তার এবং নির্দেশদাতাসহ ৩৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেল থেকে পালিয়ে যাওয়া ১১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযানে, বলেন র্যাব মহাপরিচালক।
তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন হয়েছে, তবে প্রত্যাশিত জায়গায় এখনো যায় নেই। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব তার দায়িত্ব আন্তরিকতা সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি
মানিকগঞ্জে ছিন্নমূল শীতার্তদের মাঝে কৃষক দলের শীত*বস্ত্র বিতরণ
ভুয়া জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা, দুই রোহিঙ্গা সহ আ*টক-৩
মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদীর খাস জমি দখল করে ইটভাটা, বায়ু দূষণ
মো. মিজানুর রহমান খান কুদরত : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদীর খাসজমি দখল করে চলছে ইটভাটা। এমএইচবি ও এএসএ নামের দুটি ইটভাটা সরকারি খাসজমি দখল করে চালাচ্ছে ইট তৈরির কার্যক্রম। ইটভাটা মালিকরা বলছেন প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। এদিকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইটভাটা দুটির বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।
জানাগেছে, উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর এলাকায় এমএইচবি ও এএসএ ইটভাটা দুটি দীর্ঘদিন ধরে ধলেশ্বরী নদীর খাসজমি দখল করে ইট তৈরি করছে। এমএইচবি ইটভাটার মালিক ঢাকার হাজী মো. হাবিবুর রহমান ও এএসএ ভাটার মালিক তারই শ্বশুর আনোয়ার হোসেন। ইটভাটা দুটির সামনের অংশে ব্যক্তি মালিকানার জমি থাকলেও অধিকাংশ জায়গায়ই সরকারি খাসজমি। অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটভাটা দুটি ধলেশ্বরী নদীর প্রায় শতবিঘা সরকারি খাস জমি দখল করে চলছে এমন অবৈধ কর্মযজ্ঞ। ইটভাটা দুটির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ও সচেতন মহল।
স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারি খাস জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ইটভাটা দুটি। শুনেছি সাধারণ মানুষের লিজ নেয়া জমি তার নামে নিয়ে এভাবেই দখল করে চলছে কাজ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ভাটা দুটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে জানান তিনি।
এমএইচবি ইটভাটার মালিক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি অনুমতি নিয়ে ভাটা পরিচালনা করে আসছি। প্রশাসন কেন অনুমতি দেয়। আপনারা কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলুন। প্রশাসন অনুমতি দিলে আপনারা কি করবেন? আপনারা নিউজ করে যা খুশি করেন। প্রশাসন ম্যানেজ করেই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের কোন কিছু থাকলে বলেন। আইছেনই খুচাখুঁচি করতে।
ধল্লা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ইটভাটা দুটি পরিদর্শন করেছেন। ধলেশ্বরী নদীর খাস জমি দখল করেই ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে। স্যার যেকোনো সময় ইটভাটা দুটির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবেন।
মানিকগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. ইউসুফ আলী বলেন, পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা পরিবেশের ছাড়পত্র দেই, জমি দখলের বিষয়টি আমরা দেখি না। তবে যেহেতু এখন খাসজমি দখলের বিষয়টি আসছে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান সোহাগ বলেন, নদীর খাস জমি দখল করে ইটভাটা নির্মাণের সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া আখতারুজ্জামান বাবু’র মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বাতিলের দাবি উঠেছে চট্টগ্রামে
এম. জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম: যে ব্যক্তি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, ওষখাইন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আবু তাহের ও নিজ গ্রাম হাইলধরের আপন চাচাতো ভাই স্বাধীনতা সংগ্রামী জাকারিয়া চৌধুরী জকু হত্যার মদদ দিয়েছিলেন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বর্ণ কেলেঙ্কারি, চোরাকারবারি, খুন-খারাবিসহ নিকৃষ্টতর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে, সেই ব্যক্তিকে কীভাবে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ খেতাব স্বাধীনতা পদকে সম্মানিত করা হয় বা এখনো কীভাবে এই খেতাব বহাল থাকে! স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হলো। এই শুভক্ষণে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দাবি! দাবিটি হচ্ছে, যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কাপুরুষ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বাতিল, পদক ফেরত নেয়া হোক।
বিগত ২০২২ সালে মাগুরার শ্রীপুরের আমির হামজার স্বাধীনতা পদক বাতিল এবং ২০২০ সালে এস.এম. রইজ উদ্দিনের স্বাধীনতা পদক যেভাবে ১২ মার্চ বাতিল করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্ন- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর চেয়েও কি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সম্মানিত বা দেশ ও জাতির জন্য অবদান রেখেছেন ? কে এই আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু? কোথায় ছিল তার খুঁটির জোর? তার পদক আজও কেন বহাল আছে; কেন বাতিল করা হচ্ছে না ? কারণ, এই স্বাধীনতা পদক আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশ এবং জাতির জন্য চরম অবমাননাকর! যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার অপরাধে ও স্বর্ণ কেলেঙ্কারির অভিযোগে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাবুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন।
বাবু বহিষ্কার হওয়ায় ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়া আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর আপন চাচাতো ভাই এম. ইদ্রিস বিকম। ওই নির্বাচনে এম. ইদ্রিস বিকম বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৯১ সালে শিল্পপতি হুমায়ুন জহিরকে হত্যার পর বাবু দেশত্যাগ করলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান এম. ইদ্রিস বিকম। এছাড়াও আখতারুজ্জামান চৌধুরীর পিতা নুরুজ্জামান চৌধুরী ছিলেন আনোয়ারা থানা শান্তি কমিটির সদস্য, তিনি ছিলেন রাজাকারদের আশ্রয়দাতা। ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নুরুজ্জামানের ঘরটি ছিল রাজাকারদের আশ্রয়স্থল। পটিয়া থানা রাজাকার কমান্ডার (আজিমপুর গ্রাম) কুখ্যাত সোহাগ মিয়াকে মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা যখন গ্রেফতার করার জন্য সমগ্র পটিয়ায় সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছিলেন, তখন রাজাকার সোহাগ মিয়া গ্রেফতার এড়াতে ও প্রাণ রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী থানা আনোয়ারার হাইলধর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার নুরুজ্জামান চৌধুরীর ঘরে আশ্রয় নেয়।
এ সংবাদ পেয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে চন্দনাইশের দুই গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান চৌধুরী ও শাহাজাহান ইসলামাবাদীর নেতৃত্বে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা হাইলধর গ্রামের নুরুজ্জামান চৌধুরীর বাড়িটি ঘিরে ফেলে। নুরুজ্জামানের ঘরে লুকিয়ে থাকা রাজাকার কমান্ডার সোহাগ মিয়াকে মুক্তিবাহিনীরা আটক করে পীরখাইন-বরকল মধ্যবর্তী চানখালী খালপাড়ে গুলি করে খালে ভাসিয়ে দেয়। পরে মুক্তিবাহিনীর দলটি পুনরায় রাজাকারদের আশ্রয়দাতা নুরুজ্জামান চৌধুরীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলে নুরুজ্জামান মুক্তিবাহিনীর কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে কোনোরকম রক্ষা পায়।
তাছাড়া ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা নোয়াখালীর শিল্পপতি হুমায়ুন জহির হত্যা, ইউসিবি ব্যাংকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সাতকানিয়ার জাফর আহমেদ চৌধুরীকে হেনস্তা করে ক্যাশের টাকা লুটপাট, নিজ বাড়ির আপন চাচাতো ভাই জকরিয়া চৌধুরীসহ স্বাধীনতাকামী অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে যুদ্ধকালীন সময়ে আনোয়ারা থানার মুক্তিবাহিনীর গ্রুপ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামশুল আলম মাস্টার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়েছে- ঘটনাটি সত্য।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাবু লন্ডন আমেরিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রবাসী বাঙালির কাছ থেকে গণহারে চাঁদাবাজি করেছে। পরৈকোড়া ইউনিয়নের বাথুয়া পাড়ার ৭১-এর শহীদ পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরজিত দাশ শুনু বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ইন্ধনে তার আপন ভগ্নিপতি কুখ্যাত রাজাকার খায়ের আহমদ চৌধুরী ওরফে খরাতি মিয়ার সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী পুর্ব আনোয়ারায় ১৭৬ জন স্বাধীনতাকামী বাঙালি ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান রফিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহ আলমসহ আরও কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু যুদ্ধের শুরু থেকে মাত্র কিছুদিন দেশে ছিল। পরে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে তিনি যুদ্ধের ময়দান থেকে অন্যত্র পালিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। তার মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বাতিল এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বাবুর কুকীর্তি-অপকর্ম লিখতে গিয়ে মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন অসংখ্যবার। এমনকি বাবুর স্বাধীনতা পদক পাওয়া নিয়ে বিস্মিত হয়েছেন চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ চেতনার সকলেই। তখন অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কী এমন কৃতিত্বপূর্ণ অবদান মূল্যায়ন করে তাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়েছিল? নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক বলেন, যারা বাবুকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিল তাদের শাস্তি চাই। গবেষকদের বুকে চেপে বসে গলা টিপে ধরতো বাবু। বাবু মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের বলতেন, তিনি (বাবু) যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাননি। বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করতে ভারত, লন্ডন, আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন বাবু।
জাতির কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্ন; বিশ্ব নেতাদের সাথে কথা বলতে গেলে কতটুকু শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন? আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ফেল। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এসব কুলাঙ্গারদের পুরস্কৃত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাকে চরমভাবে কলঙ্কিত করেছে। চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা বলেন, ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ১৯৭১-এ যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কাপুরুষ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্বাধীনতা পদক বাতিল ও পদক ফেরত নিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন। ৭১-এ যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কাপুরুষ আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু
আলোকিত প্রতিদিন/এপি