প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার চারটি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারত ফেরত ১৫০ বাংলাদেশী অর্থকষ্টে পড়েছেন। যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে ফেরা ওই পাসপোর্ট যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে সাতক্ষীরা শহরের পৃথক চারটি আবাসিক হোটেলে। বুধবার (৫ মে) সন্ধ্যায় দেশে আসা এসব যাত্রীদের মধ্যে ৫০ জনকে আবাসিক হোটেল উত্তরায় রাখা হয়। বাকি ১০০ জনের মধ্যে ৩০ জনকে হোটেল টাইগার প্লাস, ২০ জনকে হোটেল হাসান ও ৫০ জনকে হোটেল আল কাশেম-এ রাখা হয়। তাদের প্রত্যকেরই পাসপোর্ট সদর থানায় জমা রাখা হয়েছে। তাদের সবার বাড়ি সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। আগামী ১৯ মে পর্যন্ত তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে তিনদিন অতিবাহিত হয়েছে। এখনো ১১দিন তাদের থাকতে হবে। ভারতে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে কাছে থাকা অর্থ। তাই অর্থের অভাবে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার জনৈক কাউন্সিলর জানান, ভারতে মহামারি করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট সংক্রমনে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই ভারত থেকে আসা এসব পাসপোর্ট যাত্রীদের হোটেলগুলোতে আবাসনের ব্যবস্থা না করে যদি তাদের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ৫ম তলা ভবনে রাখা যেতো তবে কিছুটা শঙ্কামুক্ত থাকা যেতো। ভারত থেকে আসা এসব বাংলাদেশী নাগরিকদের অভিযোগ, আবাসিক হোটেলে আনার পর হোটেল ভাড়া ও খাওয়া খরচ তাদের নিজেদের বহন করতে হচ্ছে। এরফলে অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন। তারা আরও জানান, তাদের অধিকাংশ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। সেদেশে ডাক্তার দেখানোর পর তাদের কাছে আর কোন টাকা নেই। এখন তারা অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাদের এখন কিছু হলে তাদের দায়ভার কে নিবে-এ প্রশ্ন তাদের ? তাদেরকে স্ব স্ব জেলায় পাঠিয়ে সেখানে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করাসহ তাদের স্বজনদের কাছে খবর দেওয়ার দাবি জানান তারা।
এদিকে, ভারতে মহামারি করোনার ভেরিয়েন্ট সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ার সে দেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা পাসপোর্ট যাত্রীদের সাতক্ষীরার শহরের বিভিন্ন হোটেলে রাখার খবরে আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। করোনায় ভারতে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে এতে বাংলাদেশে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। যদিও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে দাবী করেছেন। সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ভারত থেকে বেনাপোল কাস্টমস অফিস দিয়ে দেশে ফেরা ১৫০ জন বাংলাদেশী সাতক্ষীরায় অবস্থান করছেন। শহরের ৪টি আবাসিক হোটেলে তারা রয়েছেন। এখানে কিভাবে থাকবেন সে বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে বিশেষ পাশ নিয়ে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী হাইকমিশনে তারা বন্ড দিয়ে এসেছেন। প্রশাসন যেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করবেন সেখানেই তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং তারা নিজ খরচে থাকবেন। তারা সেভাবেই সেখান থেকে বন্ড দিয়ে এসেছেন।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাদেরকে বেনাপোল থেকে সাতক্ষীরায় আনা হয়েছে। বেনাপোল ও যশোরে প্রায় এক হাজার ভারত ফেরত বাংলাদেশী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বাকীদের সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তবে, এখানে যারা রয়েছেন তাদের সুব্যবস্থাপনার জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছেন। এছাড়া অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও সেখানে নিয়োগ করা হয়েছে। তারা যাতে বাইরে না আসতে পারে সেটি আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তারা ভিতরে থাকলে তাদের যে খাদ্য খরচ সেটিও তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে।
আলোকিত প্রতিদিন / সা হা
