আজ সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২৩ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 2170

কিমকে নিয়ে নিশ্চুপ উত্তর কোরিয়া, বাড়ছে জল্পনা

:: প্রতিবেদন, রয়টার্স ::
জনসম্মুখে দু’সপ্তাহ ধরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের অনুপস্থিতি এবং তার অসুস্থতা নিয়ে যে সব খবর পাওয়া যাচ্ছে সে ব্যাপারে দেশটির গণমাধ্যমগুলো নিশ্চুপ থাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র জল্পনা দেখা দিয়েছে।
উত্তর কোরিয়া থেকে সরাসরি কোনো খবর না মেলায় ভাসা ভাসা কিছু খবর এবং স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর থেকে নানারকম জল্পনা ডালপালা মেলছে। শোনা যাচ্ছে নানা কথা।
পায়ের গোড়ালিতে সামান্য আঘাত পাওয়া থেকে ধীরে ধীরে কিম সুস্থ হয়ে উঠছেন এমন জল্পনা থেকে শুরু করে হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর তার ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়া, চিকিৎসা করতে আসা কোনো চীনা ডাক্তারের কাছ থেকে কিমের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া এমনকী তিনি মানসিকভাবে অবসন্ন হয়ে পড়েছেন, অচেতন হয়ে আছেন, কোমায় চলে গেছেন এবং মারা গেছেন বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ম্যসেজিং অ্যাপ-এ এও বলা হচ্ছে যে, ফরাসি ডাক্তাররা কিমকে কোমা থেকে বের করে আনতে পারেননি। এ অবস্থায় দেশটির ক্ষমতা দখল করেছেন কিম জং উনের চাচা কিম পিয়ং ইল।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার অবশ্য এইসব অনিশ্চিত খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমগুলো বেশির ভাগ খবরকেই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে খবরগুলো একেবারে ভুয়া বলে নাকচও করা যাচ্ছে না। কারণ, উত্তর কোরিয়া এত কঠোরভাবে গোপনীয়তা বজায় রাখে যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কিমের ঘনিষ্ঠমহলের ভেতরের খবর জানতে পারে না।
গত ১১ এপ্রিলে একটি পলিটব্যুরো বৈঠকে কিম জং-উনকে সর্বশেষ সভাপতিত্ব করতে দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে উত্তর কোরিয়ার কোনও রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেই তার ছবি দেখা যায়নি বা ভাষণ প্রকাশিত হয়নি। তার শরীর-স্বাস্থ্য নিয়েও পিয়ংইয়ংয়ের কোনো সংবাদমাধ্যম মুখ খোলেনি। গত ১৪ এপ্রিল কিমকে তার দাদা কিম ইল-সাং এর জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি। তখন থেকেই কিমের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে ‘কিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে পারে’ বলে গুঞ্জন উঠে। দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট এনকের খবরেও ১২ এপ্রিলে কিম জং-উনের হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে বলা হয়। এ অস্ত্রোপচারের পর কিমের গুরুতর অসুস্থতার খবরে শোরগোল পড়ে যায়।
কিম সত্যিই গুরুতর অসুস্থ? নাকি রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে কিছুটা দূরের কোনও শহরে? এমন জল্পনা নতুন মাত্রা পায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের বিশেষ ট্রেনকে রিসর্ট শহর উনসানের একটি স্টেশনে ২১ এবং ২৩ এপ্রিলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। স্যাটেলাইটের ছবিতে তা ধরা পড়েছে বলে দাবি করে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উত্তর কোরিয়া পর্যবেক্ষণ সংগঠন ‘থার্টিএইট নর্থ’।
কিম ও তার পরিবারের সদস্যরা যাওয়া-আসা করেন এই বিশেষ ট্রেনে। কিন্তু সেই ট্রেনে কিম ছিলেন কি না বা তিনি উনসানেই আছেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এরপর শনিবারই সামনে আসে কিম জংয়ের ‘মৃত্যুসংবাদ’। যুক্তরাষ্ট্রের টিএমজেড ট্যাবলয়েড নিউজ ওয়েবসাইট জানায়, “উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের পর মারা গেছেন।” হংকংয়ের একটি টিভি চ্যানেলও কিমের মৃত্যুর খবর প্রচার করেছে বলে শোনা গেছে।
কিমের মৃত্যুর খবর নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে নেট দুনিয়ায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা এমন খবরের সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা বলছে, উপগ্রহের ছবিতে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, কিমের বিশেষ ট্রেন গত কয়েকদিনে রিসর্ট শহরে গেছে।
‘লিডারশিপ স্টেশন’ এ ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিম তাতে আছেন বা তা থেকে ওঠা-নামা করেছেন সেটি নিশ্চিত না হওয়া গেলেও এমনকী তার শরীর-স্বাস্থ্যের কথা বলা না গেলেও কিম উনসানে থাকতে পারেন বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, এ থেকে সে ধারণা অমূলক বলে উড়িয়েও দেওয়া যায় না।

করোনাভাইরাসে প্রথম ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যু

:: নিজস্ব প্রতিবেদক ::
নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে এই প্রথম একজন ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন। এই কর্মকর্তা বেসরকারি সিটি ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগে এফভিপি ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ওই কর্মকর্তার মরদেহ স্বজনদের কাছে দেওয়া হয়নি। ওই কর্মকর্তার মৃত্যুতে সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানো হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংক খোলা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যাংকার আক্রান্তও হয়েছেন। তবে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম।
আজ রোববার (২৬ এপ্রিল) সকালে ঢাকার মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে বলে সিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তিনি করোনাভাইরাসের রোগী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ বিষয়ক টিমের ফোকাল পার্সন সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান।
সিটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধি অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাজধানীর তালতলা কবরস্থানে দাফন করে।
সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কয়েকদিন ধরে ওই কর্মকর্তা সর্দি-কাশি এবং জ্বরে ভুগছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শে দুই বার তিনি নমুনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তবে দুবারই ‘নেগেটিভ’ আসে। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি।
অসুস্থতা বাড়লে শনিবার সকালে আবারও মুগদা হাসপাতালে যান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করে নেন। নমুনা আবার পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস ‘পজিটিভ’ আসে।
ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তিনি কোভিড-১৯ রোগী ছিলেন। আজ সকাল ১০টায় তার মৃত্যু ঘটে।’ সিটি ব্যাংকের ওই কর্মকর্তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরই মোবাইল ফোনে তার পরিবারকে কল করে তার সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুর পর তার পরিবারের সদস্যদের বলা হয়েছে বাড়িতে থাকতে।

গাজীপুরে খুলেছে ৫ শতাধিক পোশাক কারখানা, হয়েছে বিক্ষোভ, সবখানে কি মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি!

:: প্রতিনিধি, গাজীপুর::
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে জেলাজুড়ে দেওয়া লকডাউনের মধ্যেই গাজীপুরে চালু হয়েছে পাঁচ শতাধিক পোশাক কারখানা। পোশাক কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে আজ রোববার (২৬ এপ্রিল) কারখানার আশেপাশে অবস্থান করা শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, কাজে যোগ দিতে ছুটে এসেছেন সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়া শ্রমিকরাও। এদিন প্রতিটি কারখানায় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও হাতধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বেশিরভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ভেতরে সামাজিক সুরক্ষা মেনে শ্রমিকদের প্রবেশ করিয়ে কাজ করানো হয়েছে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এদিকে কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, টেবিলে লোক কমানো হলেও সামাজিক দলগত কাজে সামাজিত দূরত্ব বজায় রাখা অনেকটাই দুঃসাধ্য। অন্যদিকে শ্রমিক কমিয়ে আনার কারণে অনেকেই হয়েছেন চাকুরিচ্যুত বলেও রয়েছে অভিযোগ। এনিয়ে বিক্ষোভ করতেও দেখা গিয়েছে।
সরেজমিন বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে শ্রমিক পৌঁছানোর পরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ও প্রত্যেককে মাস্ক পরিয়ে কারখানার প্রবেশ গেটে আনা হচ্ছে। সেখানে অনেক প্রতিষ্ঠান আগেই পাত্রভর্তি জীবানুনাশক পানি রেখে দিয়েছে। শ্রমিকরা সে পানিতে নিজের পা ও জুতা চুবিয়ে পরিষ্কার করে যাচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীর কাছে। তিনি থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পোশাক কর্মীদের তাপমাত্র মাপার পর তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন। এরপরেই ভেতরে কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান বেসিনে আবার কোনও কোনও প্রতিষ্ঠান সাপ্লাই পানির লাইনে একাধিক ট্যাপ লাগিয়ে ও সাবার রেখে শ্রমিকদের হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করেছে। এরপরই তারা কাজের জন্য কারখানার ভেতরে প্রবেশ করছে। তবে কাজের জায়গাটিতে কতটা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে সে তথ্য পোশাক কারাখানাগুলো গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় দেখা যায়নি। তবে কারখানাগুলো দাবি করেছে সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে ফঁকা ফাঁকা বসে কাজ করেছে শ্রমিকরা। যেহেতু সব শ্রমিক এখনও আসেনি তাই এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি অনেক কারখানা মালিকের। অনেক কারখানা প্রয়োজনে একাধিক শিফটের ব্যবস্থা করতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছে।
গতকাল থেকেই গাজীপুরের কারখানাগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগ উপস্থিত হন বিভিন্ন উপায়ে। যদিও বিজিএমই-র নির্দেশনা ছিল, শুধু আশেপাশের শ্রমিকরাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় কাজে যোগ দেবে। দূরে গ্রামে থাকা শ্রমিকদের এই মুহূর্তে না এলেও চলবে। এজন্য তাদের চাকরিচ্যুত করা যাবে না। তবে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, দূরে থাকলেও গত দুদিন ধরে তাদের ফোন করে আসতে বলা হয়েছে। এজন্য তারা চলে এসেছেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরা অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা, ভ্যান, মাছের ট্রাক ও সবজির ট্রাকে করেও বিভিন্ন জেলা থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানায় তারা কাজে যোগদান করেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা বলেন, না এসে উপায়ও নেই। হয় ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়তে হবে, না হলে বেতন-বোনাস আটকিয়ে রাখবে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাই সব দিক বিবেচনা করেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে আমাদের। আবার দুই একজন কারখানায় এসে ছাঁটাই হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
গাজীপুর সদর উপজেলার তেলিপাড়া এলাকার এডিশন ফুট ওয়্যার লিমিটেড কারখানার শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, রবিবার থেকে কারখানা খোলা। সকালে কারখানায় এসে জানতে পারি আমার চাকরি নাই। আমি এখানে যোগদান করেছি দুই মাস হয়েছে। তাই চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আমাকে কারখানায় ঢুকতে দেয়নি। তাহলে কারখানা কর্তৃপক্ষ কেন আমাকে ফোন দিয়ে এত কষ্ট করে বাড়ি থেকে আসতে বললো? গার্মেন্টস শ্রমিক বলে আমাদের জীবনের কি কোনও মূল্য নেই?
গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার হান্নান গ্রুপের লিংকিং অপারেটর আলম মিয়া বলেন, গত শুক্রবার কারখানার সুপারভাইজারকে ফোন দিলে তিনি কারখানায় আসতে বলেন। পেটের তাগিদে করোনা ঝুঁকি নিয়েই আমরা কাজে যোগ দিয়েছি।
গাজীপুরের পিমকি অ্যাপারেলস কারখানার কাটিং অ্যাসিস্ট্যান্ট মোমিন মিয়া বলেন, একদিকে বাড়ি থেকে আসতে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। অপরদিকে, রবিবার সকালে কারখানায় কাজে যোগ না দিলে চাকরি যাওয়ার হুমকি ছিল। এ কারণে অসুবিধা হলেও আমাদের আসতে হয়েছে।
কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই পোশাক কর্মী রুবিনা আক্তার ও তানজিলা আক্তার বলেন, আমাদের ফোন করে বলা হয়েছে রবিবার সকাল ৭টার মধ্যে গার্মেন্টস খুলবে। সকাল ৭টার আগেই কাজে যোগদান করতে হবে। আমরা যদি সঠিক সময়ে না যাই চাকরি চলে যাবে। তাই শত কষ্ট হলেও কাজে যোগ দিয়েছি।
কারখানায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, তাপমাত্রা মাপা ও হাতধোয়ার নির্দেশ মানা হয়েছে। তবে ভেতরের পরিবেশ কেমন সেটা কেবল আমরাই বলতে পারবো। মানছে না কারখানা কর্তৃপক্ষ। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও জীবন হাতে নিয়ে যথা সময়ে কারখানায় উপস্থিত হয়েছি। আমরা শ্রমিকরা কারখানা মালিকের নির্দেশ মেনেছি, এবার আমরা চাই কারখানা মালিকরা আমাদের বাঁচাতে সরকারের সব নির্দেশ মানুক। আমাদের পুরো নিরাপত্তা দিয়ে কাজ করতে বললে তো আামাদের আপত্তি নাই। আর যদি তারা নির্দেশ না মানেন, আর কোনও শ্রমিক যদি আক্রান্ত হই তাহলে পুরো কারখানাই আবার লকডাউন হয়ে যাবে। মালিকরাও নিশ্চয় এই রিস্ক বুঝবেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) সুশান্ত সরকার জানান, আজ রোববার থেকে গাজীপুরে প্রায় সাড়ে চারশ’ পোশাক কারখানা স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আমরা এসব কারখানায় মনিটরিং করছি যেন কারখানাগুলো শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রমিকদের কাজ করায়।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, জেলার বেশিরভাগ কারখানা’ই কমপ্লায়েন্স নিয়ম মেনে চলে। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক মোবাইল টিম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের কর্মকর্তা ও শিল্প পুলিশ রয়েছে। তারা সবসময় কারখানাগুলোর দিকে নজর রাখছে যেন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনা মেনে ওইসব কারখানা শ্রমিকদের কাজ করায়।
তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে না,এরকম কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। শর্ত সাপেক্ষে শ্রমিক নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকারি নির্দেশ সবাইকে মেনে চলার ও সচেতন থাকার পরামর্শও দেন তিনি।

চাকরি ফিরে পেতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ::
গাজীপুরের মির্জাপুর (তালতলী) এলাকার এডিসন ফুটওয়্যার লিমিটেডের শ্রমিকেরা চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। রবিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চলতি বছরে নিয়োগ পাওয়া শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে।

শ্রমিকেরা জানান, গত ১১ এপ্রিল আন্দোলন বিক্ষোভে বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ ১৬ এপ্রিল কিছু শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করেন। কিন্তু যেসব শ্রমিক চলতি বছর নিয়োগ পান এরকম কমপক্ষে পাঁচশ’ শ্রমিকের কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ ছাড়াই জোর করে সাদা কাগজ, আবার কারও পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নিয়ে পরিচয়পত্র রেখে দেন। এরপর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ২৬ এপ্রিল কারখানায় যোগদান করতে বলেন। কর্তৃপক্ষ শুক্র ও শনিবার ফোন করে অনেক শ্রমিককে রবিবার থেকে কারখানায় যোগদান করতে বলে। ওই কারখানায় দুই হাজারের অধিক শ্রমিক রয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রবিবার সকাল সাতটার দিকে পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শ্রমিকেরা কারখানায় যোগ দিতে যায়। যেসব শ্রমিক চলতি বছর নিয়োগ লাভ করেন তাদেরকে কর্তৃপক্ষ কারখানায় ঢুকতে দেয়নি। এ নিয়ে শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে শ্রমিকেরা ভেতের ঢুকতে কারখানার গেটে হামলা করে।

এ ব্যাপারে এডিসন ফুটওয়্যার লিমিটেডের সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) বিপুল বরণ ঘোষ বলেন, সকল শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। কারও বেতন বকেয়া রাখা হয়নি। শ্রমিকদেরকে রবিবার আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু গাজীপুর এলাকায় ২ মে কারখানা খোলার নির্দেশ পাওয়ার পর গাজীপুর সদর থানা পুলিশ বিষয়টি তাদের অবহিত করলে কারখানা ছুটি দেওয়া হয়।

গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম বলেন, যেসব শ্রমিকের পরিচয়পত্র রেখে দিয়েছিল তাদের পরিচয়পত্র ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেকের পরিচয়পত্র ফেরত দেওয়া হয়েছে। তাদের চাকরি থেকেও বাদ দেওয়া হবে না। কারখানা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে এরকম নিশ্চয়তা দেওয়ার পর শ্রমিকেরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) জালাল আহমেদ বলেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি। কারখানা চালু রাখার জন্য সরকারি নিয়ম মেনে চলার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ শ্রমিকদের মানবিক বিষয় নিয়েই কথা বলেছে।

জামালপুরে ৬ চিকিৎসকসহ ১৮ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত

:: সংবাদদাতা, জামালপুর ::

জামালপুরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা একের পর এক নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এ জেলার স্বাস্থ্যসেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সারা জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৪৬ জন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ছয় জন চিকিৎসকসহ মোট ১৮ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত। এছাড়া অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। ফলে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
এ জেলার সাতটি উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চারটি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, ব্রাদার, ওয়ার্ড বয়, বাবুর্চি, আয়া, ড্রাইভার ও এমএলএসএস করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক, এক নার্স, দুই ওয়ার্ড বয়, একজন এমএলএসএস, একজন ব্রাদার ও একজন বাবুর্চি করোনায় আক্রান্ত। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মোট ৩০ জন চিকিৎসক এবং ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. উত্তম কুমার সরকার। তিনি বলেন, হাসপাতালের যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তার মধ্যে ৩০ জন চিকিৎসক এবং ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী হোম কোয়ারেন্টিনে। কোয়ারেন্টিনে থাকা চিকিৎসকদের নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্টে যাদের নেগেটিভ এসেছে, তাদের মধ্যে ১০ জন চিকিৎসক রবিবার (২৬ এপ্রিল) যোগ দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে গড়ে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিতেন। এখন রোগী আসছেন মাত্র ৩০ জন। ইনডোরে ৫০০ রোগীর মধ্যে এখন ভর্তি আছেন মাত্র ৫৪ জন। সরকারি নির্দেশ মতো প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, সব হাসপাতালেই জরুরি ও স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে। যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসেনি, তাদের দিয়ে বর্তমানে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সাড়ে ৬শ’ পরিবারকে রমজানের উপহার তুলে দিয়ে ‘মানবিক কমলাপুর’ এর আত্মপ্রকাশ

:: ব্যুরো প্রধান, ঢাকা ::

করোনাভাইরাস পরিস্থি মোকাবেলায় সর্বদা জনগণের পাশে থাকলে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন একটি সামাজিক সংগঠন। রমজানের প্রথম দিনে ‘মানবিক কমলাপুর’ নামে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করেই গতকাল শনিবার (২৫ এপ্রিল) জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। কমলাপুরের অর্ধসহস্রাধিক পরিবারের মধ্যে তুলে দিয়েছে মাহে রমজানের উপহার।
গতকাল সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘মানবিক কমলাপুর’ মতিঝিল থানার ৮ নং ওয়ার্ড বৃহত্তর কমলাপুর এলাকায় মধ্যবিত্ত পরিবার ও অসহায় মানুষদের মাঝে রমজানের উপহার পৌঁছে দেয়। এলাকার ৬৫০টি পরিবারের মধ্যে এই উপহার বণ্টন করা হয়।
এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
তারা জানান, ‘রোজদারদের কথা মাথায় রেখে এই উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’ এছাড়া আগামীতেও আত্মমানবতার সেবায় তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা ও উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা আছে বলে জানা যায়।

চাল চোরদের জেলে দিন বিদায় হোন ব্যর্থরা

না, অপেক্ষা করতে পারব না। চাল চোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন। ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেল। প্রজ্ঞাপন জারি করুন, জনপ্রতিনিধি থাকার কোনো অধিকার তাদের নেই। চোরের রক্ষকদেরও ছাড় দেওয়া যাবে না। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়কে বসে থাকলে হবে না। নির্দেশ জারি করতে হবে জনপ্রতিনিধি পদ থেকে ওদের চিরতরে বিদায়ের। শুধু বিদায় নয়, আর কোনো দিন এই চোরেরা ভোট করতে পারবে না। কঠোর হাতে চোর দমন চাই। প্রয়োজনে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে কমিটি হোক। একজন অতিরিক্ত সচিব কমিটির নেতৃত্বে থাকুক। এ কমিটির কাজ শুধুই চাল চোরদের বাদ দেওয়া। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সেল থাকবে। এ সেলের কাজ ওদের জেল নিশ্চিত করা। আইন মন্ত্রণালয়ের সেল কাজ করবে জামিন বন্ধের। এই কঠিনতম সময়ে কোনো সুস্থ মানুষ গরিবের ত্রাণ চুরি করতে পারে না। চোর দমনে মাননীয় এমপি সাহেবরা কী করছেন? তারা কি নিজের এলাকার খোঁজ রাখেন? এত চোর কোথা থেকে এলো? কীভাবে এলো? এত দিন তারা কী করেছেন? জবাব সবাইকে দিতে হবে। অনেক এমপি নিজেই লকডাউন হয়েছেন। ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। চাল কীভাবে বণ্টন হচ্ছে নিজেই জানেন না। জানলেও দলের লোকদের আশকারা দিচ্ছেন। চুরিতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। দয়া করে কেউ চোরদের আশকারা দেবেন না। সাতক্ষীরার এমপি জগলু, কুমিল্লার সীমাসহ অনেক এমপির মতো মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিন। আপনি না পারেন দলের ভালো লোকদের কাজে লাগান। চোরদের নিয়ে ঘরবসতি বন্ধ করুন। অন্যথায় মানুষ ক্ষমা করবে না। মানুষ ক্ষমা করলেও আল্লাহ রেহাই দেবেন না।

চারদিকের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষ ভালো নেই। বিশ্ব আজ কাঁদছে। চারদিকে অশ্রু আর হাহাকার। সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগামীর পৃথিবী টিকবে কিনা কেউ জানি না। দুনিয়ার দিকে একবার তাকান। লোভ করে কী হবে? কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে একটি লাশ পড়েছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি। পুলিশ এসে লাশ দাফন করে। রাজবাড়ীতে একই চিত্র। পুলিশ ছাড়া কেউ আসেনি। আত্মীয়-পরিজন কারও খবর ছিল না। ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনকে ফোন করা হয়। কেউ সাড়া দেয়নি। এক পর্যায়ে ফোনের সুইচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নরসিংদীতে লাশ পড়ে ছিল নৌকার ভিতর। দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা লাশের পাশে কেউ এগিয়ে আসেনি। নারায়ণগঞ্জে রাস্তায় কত ঘণ্টা পড়ে ছিল লাশ? বিশ্বাস করুন, একজন মানুষও আসেনি। পুলিশ এসে লাশ দাফনে নিয়ে যায়। দুনিয়ার সব হাসপাতালের একই চিত্র। আমেরিকায় গণকবর খোঁড়া হচ্ছে। নিকটজনেরা কেউ এগিয়ে যাচ্ছে না লাশ দাফনে। পৃথিবী আজ বদলে গেছে। তার পরও লোভ করবেন ত্রাণের সামগ্রীতে? কে খাবে আপনার এ সম্পদ? ব্যাংক লুটেরা, শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়করা কি একবারও ভেবেছেন এসব? ত্রাণ লুটেরা ধরা পড়ছে। জেলে যাচ্ছে। পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হচ্ছে। টিভিতে চোর হিসেবে খবর দিচ্ছে। কীসের জনপ্রতিনিধি আপনারা? আপনাদের, তোমাদের, তোদের একটি পরিচয়- চোর। আর কিছু নয়। চোরদের কোনো দল নেই, দেশ নেই, সমাজ নেই। ওরা মানবতার শত্রু। ওদের বাদ দিয়ে ত্রাণ বণ্টন হোক সিভিল প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সেনা, পুলিশ, র‌্যাবের মাধ্যমে। গরিব মানুষের তালিকা ধরে ত্রাণ পৌঁছে দেবে বাড়ি বাড়ি। মানবতার জয়গান ফিরে আসুক। স্বস্তি ফিরে আসুক সবখানে। মানুষকে ভালো রাখতে হবে।

দুনিয়ার কোথাও মানুষ ভালো নেই। সময়টা কারও জন্যই ভালো নয়। ভুল করে কেউ টিকছে না। থাকতে পারছে না মন্ত্রিত্বে। নিউজিল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্লাপ নিজেই লকডাউন ভাঙলেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে গেলেন সমুদ্রসৈকতে। বিষয়টি প্রকাশ পেয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে মন্ত্রী নিজেকে বললেন, নির্বোধ! তারপর পদত্যাগ করলেন। মন্ত্রিসভা ছাড়লেন। বিদায় নিলেন। বারবার প্রকাশ করলেন অনুতাপ। একইভাবে মন্ত্রিসভা ছাড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের এক মন্ত্রীকে। এ সময়টা বিনোদনের নয়। আনন্দ আর অবহেলার নয়। বাস্তবতা অনুধাবন করুন। মানুষের পাশে দাঁড়ান। মানুষ না থাকলে এমপি, মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার কাউকে দরকার নেই। প্রয়োজন মানবতাকে জাগিয়ে তোলার। একজন চেয়ারম্যান ত্রাণ দিয়ে ছবি তুললেন। ছবি তোলা শেষে ত্রাণ কেড়ে নিলেন! এরপর তিনি কী থাকতে পারেন? আপনাদের বিবেক কী বলে? নিজের বিবেককে জাগিয়ে তুলুন। কঠিন ডেঙ্গুর সময় আমাদের মন্ত্রী সাহেব যান প্রমোদভ্রমণে মালয়েশিয়া। তিনি বিদায় নেন না। তাকে বিদায় করা হয়ও না। পিয়াজের দাম বাড়ার সময় আরেক মন্ত্রী সাহেব ঘুরে বেড়ান অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। কাকে দোষারোপ করব? আপনি মন্ত্রী, গার্মেন্ট চলবে কি বন্ধ থাকবে ঘোষণা দেওয়ার দায়িত্ব আপনার। এটুকু না বুঝলে আছেন কেন? আপনি মন্ত্রী আপনারই দায়িত্ব ক্রাইসিসকালীন সমন্বয়ের। আপনি কী করে বলেন, জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পরও আপনাকে কোনো কিছু জানানো হয় না? এরপর আপনি কী করে থাকেন? হায়রে মন্ত্রী! হায়রে মন্ত্রণালয়! আপনি মন্ত্রী হলে আপনাকে জানতে হবে। আপনার দক্ষতা, মেধা, মনন, ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটির প্রমাণ আপনাকেই দিতে হবে। না পারলে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকুন। মানুষের সামনে হাস্যকর কথা বলবেন না। এই কঠিনতম সময়ে মানুষ কষ্টে আছে। নতুন করে কষ্ট বাড়াবেন না। মানুষের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনুন। কাঁদতে ভুলে গেছে মানুষ। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে না। চারদিকের অবস্থায় বোবা আর্তনাদের মতো বাজছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রের শেষ আর্তনাদ জানিয়ে দিয়েছে আমাদের অবস্থান। পাহাড়ের মেধাবী ছেলেটি ঢাকায় এসে ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবারের মাঝে স্বপ্ন তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এ ছেলেই বদলে দেবে সবাইকে। কিন্তু হায়! হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল। ক্যান্সার ধরা পড়ল সুমনের। নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হতো চিকিৎসার জন্য। করোনাভাইরাসের আক্রমণ বাংলাদেশে আসার পরই বদলে গেল হাসপাতালের চিত্র। সুমন ঘুরছে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। কেউ এগিয়ে আসছে না। চিকিৎসা দিচ্ছে না। ডাক্তার-নার্স সরে যাচ্ছে দূরে। সবাই বলছে, আমাদের প্রটেকশন নেই। জবাবে সুমন বলছে, আমি করোনা রোগী নই। আমাকে চিকিৎসা দিন। আমাকে বাঁচান। কিন্তু সেই ডাকে কেউ সাড়া দেয়নি। ঢাকায় সুমনের কেউ থাকে না। ক্যান্সার ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। বিপর্যস্ত সুমন নিজের ফেসবুকে লিখলেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যই আমাকে মারা যেতে হবে।’ তাই হয়েছে। হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত সুমন। সহ্য আর করা যায় না। বাবা-মাকে ফোন করে চলে যায় গ্রামের বাড়ি। পর্যাপ্ত ওষুধ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেনি। পাহাড়ি এলাকায় ওষুধ ম্যানেজ করতে পারেনি পরিবার। সুমন চলে গেল বিনা চিকিৎসায়। সুমনের জন্য আজ সবাই কাঁদছে। পাহাড় কাঁদছে। মানুষ কাঁদছে। কিন্তু সুমন তো আর ফিরবে না। তার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলবেন সব ঠিক আছে! কোথাও কোনো সমস্যা নেই। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মালিকরা গিয়ে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নেই। এ বৈঠকটি কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আগে ডাকলেন না? তারপর যদি বলেন, আপনি ডেকেছেন তারা আসেননি, তাহলে বলব আপনার থাকার কোনো দরকার নেই। অবশ্যই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সবার আগে। কিন্তু কাজটা কে করবে? কে তাদের আশ্বস্ত করবে? কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে? মাননীয় মন্ত্রী আপনিই বলুন। মাঝেমধ্যে ইরাকে সাদ্দামের তথ্যমন্ত্রী সাহাফের মতো বেরিয়ে এসে আপনি বাণী দেবেন। তারপর আবার হাওয়া হয়ে যাবেন। কিছুই বলার নেই।

এই দুঃসময়ে আমরাও ভালো নেই। মিডিয়াকর্মীরাও ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। জানি না আগামী দিনের দুনিয়ায় কে বাঁচব কে মরব। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ছে।  রুদ্র লিখেছেন-

‘হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা অজানা পাখি

অজান্তেই চমকে উঠি

জীবন, ফুরালো নাকি!

এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…’

চলে তো যেতেই হবে। চাইলেও কেউ থাকতে পারব না। জানি না আগামীর পৃথিবীতে কে থাকব আর কে থাকব না। শুধু প্রশ্ন- এ কেমন যাওয়া? চোখের সামনে বাবার মৃত্যু হচ্ছে। সন্তান কিছুই করতে পারছে না। লাশ দাফনে যেতে পারছে না। চিৎকার করে কাঁদতেও পারছে না। গুমরে গুমরে নিজের ভিতরের চাপাকান্না জমিয়ে রাখতে হচ্ছে। কাউকে জড়িয়ে ধরে মনের কষ্ট লাঘব করতে পারছে না। অসুস্থ প্রিয়জনদের পাশে হাসপাতালে আজ কেউ নেই। সন্তান মায়ের খবর নিতে পারছে না। মা পারছেন না সন্তানের পাশে দাঁড়াতে। লাশের খাটিয়া অজানা মানুষের হাতে। আহারে শেষ গোসল হলো কি? জানি না কেউ। পৃথিবী আজ নিষ্ঠুর। থাকব কার অপেক্ষায়? কোথাও কেউ নেই। মেয়েরা বাবার লাশ বহন করে নিয়ে গেছে দাহ করতে। ভারতের ঘটনাটি বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। মুসলমানরা দাহ করতে নিয়ে গেছে হিন্দু ভাইয়ের লাশ। এখন আর লাশের কোনো জাতপাত নেই। কোন ধর্মমতে শেষ অন্ত্যেষ্টি হচ্ছে সেই প্রশ্নও নেই। গণকবরের খবর আসছে উন্নত বিশ্বে। কোনো খবরই এখন আর কাউকে আঘাত করে না। চারদিকে শুধু বুকভাঙা আর্তনাদ। এক অজনা পথের দিকেই এগিয়ে চলেছি আমরা। কোথায় গিয়ে থামব, শেষ পরিণতি কী? কিছুই জানি না।

মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে পৃথিবী কি চিরতরে শেষ হয়ে যাবে? এমন তো আগেও হয়েছে। ইউরোপে ভয়াবহ প্লেগ হানা দিয়েছে বারবার। কালো প্লেগ খ্যাত সেই অসুখ ইউরোপের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে নিয়ে যায় তেরো শর মাঝামাঝি। এর আগে-পরেও প্লেগ দুনিয়াবাসীকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। আমাদের এ ভূখন্ডে ভয়াবহতায় ছিল কলেরা। সেই সময়গুলো মানুষ পার করেছে। কিন্তু এখন যে সময় যেতে চায় না। থমকে আছে সবকিছু। মানুষ বড্ড অসহায়। হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, ‘কিছু কিছু মানুষ সত্যি খুব অসহায়। তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা, ব্যথা-বেদনাগুলো বলার মতো কেউ থাকে না। তাদের কিছু অব্যক্ত কথা মনের গভীরেই রয়ে যায়, কিছু স্মৃতি একসময় পরিণত হয় দীর্ঘশ্বাসে।’ একটা বেদনাবিধুর দীর্ঘশ্বাস নিয়েই এ সময়গুলো কাটছে। অমাবস্যার অন্ধকারে শ্মশানের পাশ ঘেঁষে যেতে একটা ভয় হতো। সেই ভয়টা এখন আবার পেয়ে বসেছে নাগরিক জীবনের আলোক উজ্জ্বলতায়। কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভাষায়, ‘বিদায়ের সেহনাই বাজে/নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে’।

প্লেগ একসময় থেমে গিয়েছিল। কলেরা আর মহামারী হিসেবে থাকেনি। হয়তো একদিন এ মহামারীও থেমে যাবে। একটি সাধারণ সিজনাল অসুখ হিসেবেই দেখব আমরা করোনাভাইরাসকে। কিন্তু তত দিন এ ধাক্কা কীভাবে সামলে উঠবে পৃথিবী। আর সামলে উঠলেও ক্ষতটা থেকে যাবে। সেই ক্ষত যুগের পর যুগ ভোগাবে। মানুষকে নিয়ে যাবে কঠিন এক পরিস্থিতিতে। ২০২৩ সালের আগে বিমানবন্দরগুলোর স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে না। বিশ্ব বাণিজ্য হবে না স্থির। মানুষ কি বুঝতে পারছে সবকিছু? এখনই মানুষ ধৈর্যহারা। না থাকতে পারছে ঘরে, না পারছে বের হতে। দিল্লিতে এক যুবককে পাঠানো হয় এক হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে। যুবকের ভালো লাগছিল না। তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ল নিচে। দুই পা ভেঙে আবার হাসপাতালে। নিয়ম না মেনে ঘর থেকে বের হওয়ার পরিণতি ভালো হচ্ছে না। নারায়ণগঞ্জে লাশ পড়ে ছিল রাস্তায়। ঢাকায়ও তাই হচ্ছে। কেউ সাহস করে লাশের ধারেকাছে যায়নি। ইকুয়েডরের একটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী। লাশের সারি পড়ে আছে। সেনাবাহিনী নেমেছে লাশ সরাতে। আমরা সতর্ক না হলে আমাদের অবস্থা কী হবে একবারও ভেবেছেন? বাংলাদেশ ঘনবসতির। জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়। লকডাউন কিংবা মৃত্যুর হুমকি কাউকে আটকাতে পারছে না। একবার সংক্রমণ বাড়লে এর শেষ থাকবে না। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। লাশ দাফন করার প্রতিষ্ঠানও পাওয়া যাবে না। কে মারা যাবে কে জীবিত থাকবে কেউ জানি না।

এমন মহামারী মোকাবিলায় বিশ্ব একবিন্দুও প্রস্তুত ছিল না। ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলো ছিল আত্মঅহমিকায়। নিজেদের জাহির করা নিয়ে ব্যস্ত। মহামারীর টর্নেডো নিয়ে তাদের কোনো সতর্কতা ছিল না। শুরু থেকেই তাদের বক্তব্য-বিবৃতি ছিল হতাশাজনক। বড় বড় দেশগুলোর ব্যর্থ নেতৃত্বের কবলে পড়ে বিশ্ব আজ এক ধ্বংসস্তূপ। আগামী শুধুই অন্ধকার। মহামারীর দুনিয়া কেড়ে নিয়েছে সবার ক্ষমতা। একটিবার ভাবুন না, প্রকৃতি কেন এত নিষ্ঠুর হলো? আমরা কি বাড়াবাড়িটা কম করেছি? সবার অহংকার আর নিষ্ঠুরতা আজকের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। এখন আর কেউ নিজেকে দুনিয়ার বাদশাহ দাবি করতে পারছে না। দুই দিন আগেও অহংকার ছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। এখন আর নেই। করোনাভাইরাস ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেনে না। রানীকে তোয়াক্কার সময় নেই। তাই ট্রাম্পের কণ্ঠ নমনীয়। চুপসে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। উন্নত বিশ্বের চোখ-ধাঁধানো হাসপাতালগুলোয় শুধুই মৃত্যুর বিভীষিকা। বিমানবন্দরগুলো পরিত্যক্ত। শহরগুলো খাঁখাঁ করছে। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বুঝতে পারছে না কী হবে আগামীতে। অজানা গন্তব্যের দিকে ছুটছি আমরা। সামনে থমকে দাঁড়ানোর লাইট নেই। শুধুই অনিশ্চয়তায় পথচলা। আর চিন্তা বেঁচে থাকব তো? অদ্ভুত আঁধার নেমে এসেছে। একটু আলোর সন্ধান করছি আমরা। জীবনের বহতা নদীতে সেই আলোর রশ্মি একটু যদি জ্বলে ওঠে। সামনে কূলকিনারাহীন অথৈ সাগর। পরিত্রাণ কী, কেউ জানি না। এমন বিপর্যয়ে কেউ পড়েনি কোনো দিন। এত অসহায় কখনো মনে হয়নি। এ মৃত্যুপুরীর পৃথিবী আমার নয়। এ জগৎ আমার অচেনা। এ পৃথিবী আমার অচেনা।

 

লেখক: প্রধান সম্পাদক নিউজ টোয়েন্টিফোর ও সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন।

জানালা কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি কম্পিউটার চুরি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ব্যবহৃত ১৪টি কম্পিউটারের মনিটর চুরি হয়েছে। একই সঙ্গে ছয়টি সিপিইউ বাইরে এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা গ্রন্থাগারের জানালা কাটা দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হন। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পাখিরা এখন পাহাড়ে

আর যখন সন্ধ্যার আকাশে সূর্যের গোধূলির সোনালি রঙ ছড়িয়ে পরে, তখনি শুরু হয় পাখিদের মিছিল। কিচির-মিচির ছন্দের তালে সাঁড়ি বেঁধে ফিরে যায় ওরা পাহাড়, বন ও বাঁশঝাড়ের অস্থায়ী নিড়ে। পাখিদের এমন বিস্ময়কর সৌন্দয্য শুধু পাহাড়ের দৃশ্য।

রাঙামাটির হ্রদ-পাহাড় ঘুরে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো শীতের শুরুতেই রাঙামাটিতে এসেছে অতিথি পাখি। সুদূর
সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীত প্রধান দেশ থেকে পাহাড়ে এসেছে ফ্লাইফেচার, জলকুট, পর্চাড, জলপিপি, পাতারী, গার্নিগি,
পাস্তামূখী, নর্দানপিন্টেলসহ নানা প্রজাতির পাখি। অতিথি পাখীদের সাথে যোগ দিয়েছে দেশীয় সরালি, ডাহুক, পানকৌরি,
বক, বালিহাঁসসহ নাম না জানা হাজারো নানা প্রজাতির পাখি।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, শুধু রাঙামাটি শহর এলাকা নয়। অতিথি পাখির দেখা মিলছে জেলার সুবলং, লংগদু, কাট্টলী,
মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি ও বরকলে।

এসব উপজেলায় পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে গেছে হ্রদের তীর ও জলে ভাসা চরগুলো। খুব ভোর বেলা আর সন্ধ্যায় কাপ্তাই হ্রদে দেখা মেলে পাতিহাস, ডাহোক, কালাম, বক, ছোট সরালি, বড় সরালি, টিকি হাঁস, মাথা মোটা টিটি, চোখাচোখি, গাং চিল, গাং কবুতর, চ্যাগা ও জল মোরগ, বইধর।

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর শুধু শীত মৌসুমের জন্য পার্বত্যাঞ্চলে বিভিন্ন দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি
পাখি আসলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য নেওয়া হয়নি দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ। তাই অতিথি পাখি আসলে সক্রিয় হয়ে ওঠে এখানকার পাখি শিকারিরা। নিরবে চলে তাদের পাখি নিধন কার্যক্রম।

করোনায় মৃত্যুর কারণ শুধু ‘শ্বাসকষ্ট’ নয়

ডা. আমিনুল ইসলাম: 

একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। করোনা রোগীদের অনেকেই রোগ ডায়াগনোসিস হবার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে মারা যাচ্ছে। রোগী আপনার কাছে এসেছে পেট ব্যথা নিয়ে, আপনি তাকে পেটের এক্স-রে করতে দিলেন। এক্স-রে তে বুকের যতটুকু দেখা যায় সেখানে দেখা গেল নিউমোনিয়ার মতো স্পট। আপনি দ্রুততম সময়ে তাকে করোনা টেস্ট করতে দিলেন- সেটা আসলো পজেটিভ। বিকালে বা পরদিন সকালে খবর নিয়ে জানলেন রোগী মারা গেছে।

দু’দিন আগে সার্জারি ওয়ার্ডে একজন রোগী ভর্তি হয়েছিল। সিস্টার তাকে ক্যানুলা করার সময় রোগী দিল কাশি। তার আগ পর্যন্ত কেউ জানতো না তার কোন কাশির সমস্যা আছে। সন্দেহবশত করোনা পরীক্ষা করানো হলো। সেটাও আসলো পজেটিভ। রোগীকে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত হাসপাতালে পাঠানো হল। কিন্তু সেখানে যাবার আগেই তার মৃত্যু ঘটে।

এত দ্রুত কেন ঘটছে মৃত্যুগুলি? যেটা আবার এক্স-রে বা সিটি-স্ক্যানের নিউমোনিয়া দ্বারা পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারও কারও অক্সিজেন কমতে কমতে খুব দ্রুত মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে যেটা আবার বুকের এক্সরে বা সিটি-স্ক্যান এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। তাহলে কি ঘটছে করোনা রোগীদের দেহে?
এখন দেখা যাচ্ছে শুধু নিউমোনিয়া বা এআরডিএস (একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রম) এ শুধু রেসপিরেটরি ফেইলিওর দিয়েই এই হঠাৎ মৃত্যুগুলি ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না, তার হঠাৎ মৃত্যু (Sudden death) এর আছে আরও বিবিধ কারণ।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে করোনা নিজে একটা hypercoagulable state অর্থাৎ এটি রক্তনালিতে জায়গায় জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। সেদিন এই ঢাকা শহরেই এক করোনার রোগী একদিকে নিউমোনিয়া আরেকদিকে ব্রেইন স্ট্রোক একই সময়ে। নিউমোনিয়া খুব একটা মারাত্মক ছিল না কিন্তু হঠাৎ করেই তার মৃত্যু ঘটে। তার বুকের সিটি-স্ক্যান ও শ্বাসকষ্টের মাত্রা অনুযায়ী এত দ্রুত মৃত্যু প্রত্যাশিত ছিল না।

ঘটনা হয়েছে কি, তার ব্রেনের রক্তনালী জমাট বেধে স্ট্রোক করেছে আর ফুসফুসের রক্তনালী জমাট বেঁধে ব্লক হয়ে গিয়ে হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে। ফুসফুসের রক্তনালী ব্লক হওয়াকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে Pulmonary embolism (PE)। হঠাৎ রহস্যজনক মৃত্যু ঘটাতে এই Pulmonary embolism এর মত অদৃষ্ট আততায়ী আর দ্বিতীয়টি নেই।

শুধু ফুসফুস বা ব্রেইন নয়, এটি হাত-পাসহ শরীরের যে কোনো রক্তনালী ব্লক করে দিতে পারে। তবে তাতে হঠাৎ মৃত্যু না হলেও জমাটবদ্ধ এরিয়াটা কালচে বা গ্যাংগ্রিন হয়ে যায়। তাই স্ট্যান্ডার্ড চিকিৎসায় সিলেক্টেড কেইস এ হেপারিন দেয়াটা রুটিন প্রেক্টিস এর মধ্যে চলে এসেছে চিকিৎসা পদ্ধতিতে।

হঠাৎ মৃত্যুর আরেকটা যে কারণ এখনো দৃষ্টির আড়ালে তা হলো এই করোনা কিন্তু হৃদযন্ত্রকেও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করতে পারে। দেখা যাচ্ছে ফুসফুসে তেমন একটা সমস্যা নাই কিন্তু রোগীর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ প্রেসার কমে যাচ্ছে। BNP (Brain Natriuretic Peptide) লেভেল দেখা গেল অনেক বেশি।

সরাসরি প্রমাণ যেটা হল ইকো পরীক্ষা, তাতে দেখা গেল তার হার্টের সক্ষমতা যেখানে থাকার কথা ৬৫% সেটা ২০, ২৫, ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। করোনার মাধ্যমে ঘটা হৃদযন্ত্রের প্রদাহ (myocarditis) জনিত হার্ট ফেইলিউরে রোগী হঠাৎ মারা যেতে পারে। অথবা সেই অসুস্থ হৃদপিন্ডের হঠাৎ ছন্দপতন (arrythmia) রোগীর হঠাৎ মৃত্যু ঘটাতে পারে।

আপাত দৃষ্টিতে তেমন সিরিয়াস না এমন রোগীও এসব কারণে হঠাৎ নাই হয়ে যাচ্ছে। তুখোড় চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে যদি কেউ বেঁচে যায় তখন দেখা যায় হৃদযন্ত্রের সক্ষমতা আবার সেই আগের অবস্থানে চলে গেছে। ভাইরাস সরাসরি হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করছে নাকি সাইটোকাইন নামের কোন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে হার্টকে দুর্বল করে দিচ্ছে সময়ের সাথে সেটা প্রতিভাত হবে। যাদের আগে থেকে হৃদযন্ত্রের সমস্যা তারা থাকেন এ হৃদযন্ত্রের প্রদাহ হবার অধিক ঝুঁকিতে।

দ্রুত মৃত্যু না ঘটালেও করোনা লিভার, কিডনিকে সমভাবে আক্রান্ত করতে পারে। আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে ভর্তি অর্ধেক করোনা রোগীর ইউরিনে, ব্লাড কিংবা প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে, যা কিডনি আক্রান্ত হবার চাক্ষুষ প্রমাণ। এক-চতুর্থাংশ হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর কিডনি ফেইল করছে, ডায়ালাইসিস লাগছে। নিউইয়র্কের মতো স্থানে ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান এর সল্পতা চলছে।

চীনের একটা কেইস- রোগী এসেছে হলুদ প্রস্রাব ও জন্ডিস নিয়ে। সব হেপাটাইটিস ভাইরাস টেস্ট নেগেটিভ। দু’দিন পর আসে জ্বর। করোনা টেস্ট করে দেখা গেল সেটা পজেটিভ।

অর্থাৎ করোনা কোনও সর্দি-কাশি নয়, কোনো বিশেষ অঙ্গের রোগ নয়। ফুসফুস, হার্ট, ব্রেইন, কিডনি, লিভার, পরিপাকতন্ত্র কোনোটাকেই ছাড় দিচ্ছে না এ সব্যসাচী ভাইরাস। এ যেন বহিরাঙ্গের পৃথিবীটার মতো শরীরের অভ্যন্তরে প্রতিটা অঙ্গে দিকেদিকে তার বিজয় পতাকা উড়ানো চাই।

লেখক: মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাণঘাতি নতুন যত ভাইরাসের আবির্ভাব

চীনে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস নামে নতুন একটি ভাইরাস। নতুন এই ভাইরাসটি চীনের উহান প্রদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। ওই এলাকায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন; মারা গেছেন তিনজন। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশও সতর্ক রয়েছে। ‘করোনা ভাইরাস’ এর বিস্তার রোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানিং শুরু হয়েছে সোমবার থেকে। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দিয়েছে আইইডিসিআর। অন্যান্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। শুধু সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস নয়, গত দুই দশকে এমন অনেক নতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। এসব ভাইরাসের আক্রমনে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্যা মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি জনসংখ্যার দেশগুলো থেকেই নতুন ভাইরাসের উদ্ভব ঘটেছে। পরবর্তীতে কোনো ওষুধ কোম্পানি প্রতিষেধক তৈরি করলে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তাই নতুন নতুন ভাইরাসের আবির্ভাবের পেছনে আছে কি কোনো ব্যবসায়িক যোগসাজোস, নাকি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। আসুন পেছন ফিরে দেখে নিই সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলা এমন কিছু ভাইরাসের আবির্ভাব।

করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে গত ডিসেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস নামে নতুন এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সরকারি হিসাব মতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত দুই শতাধিক, মারা গেছেন তিন জন। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চীন সরকারের হিসাবের চাইতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি, প্রায় ১৭শ জন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া দেখা দেয়য়। এমন এক সময়ে করোনা ভাইসারের প্রাদুর্ভাব হয়েছে যখন চীনে নববর্ষ উদযাপন চলছে। এ সময় সারা বিশ্ব থেকে চীনা নাগরিকরা দেশে ফেরেন এবং অনেক পর্যটক নববর্ষ উদযাপন দেখতে চীনে ভ্রমণ করেন। ফলে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে।

বার্ড ফ্লু (এইচ৫এন১)
১৯৯৭ সালে হংকংয়ে এইচ৫এন১ ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর ২০০৩, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৬৩০ জন বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত হয়েছেন এবং ৩৭৫ জন মারা গেছেন।

নিপাহ ভাইরাস
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার পাংকর দ্বীপের ছোট্ট শহর কামপুং তেলুক নিপাহতে নতুন একটি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। পরের বছর ওই শহরের নামে ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের মৃত্যুর আশঙ্কা ৫৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে ভারতের কেরালায় এই ভাইরাস সংক্রমণে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে অন্তত ১০ জন মারা যান।  বাংলাদেশে সাধারণত বাদুড় থেকে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। এ ভাইরাস মানুষের মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফেলাইটিস এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। সাধারণত সংক্রমণের ৪ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

সার্স
সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয় চীনে। ২০০২ ও ২০০৪ সালে এশিয়ার কয়েকটি দেশে সার্স ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আট হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হন, মারা যান প্রায় ৭৭৪ জন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট হয়। তবে ২০০৪ সালের পর এই ভাইরাসে প্রাদুর্ভাবের খবর আর পাওয়া যায়নি।

সোয়াইন ফ্লু
২০০৯ সালে প্রথম বিশ্বজুড়ে এইচ১এন১ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। শূকরের ফ্লুর সঙ্গে লক্ষণ মিল থাকায় একে সোয়াইন ফ্লু নাম দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১ থেকে ২১ শতাংশ মানুষ এ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন। দেড় লাখ থেকে প্রায় ছয়লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের মৃত্যুর হিসাব প্রকাশ্যে আসেনি। ঢাকায় নতুন বছরে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার খবর শোনা গেলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মার্স (মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম)
এটি সার্স ভাইরাস গোত্রেরই একটি ভাইরাস। ২০১২ সালে প্রথম সৌদি আরবে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। দেশটিতে মার্সে আক্রান্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ মারা যান। উট থেকে এই ভাইরাস মানবদেহে ছড়ায় বলে ধারণা করা হয়। হাঁচি, কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়ায়।