আলোকিত ডেস্ক:
এ বছরের শুরুতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ঘিরে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে নতুন করে যে ‘শীতল যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে, তার রেশ এবার এসে পড়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি। ভোটের ঠিক আগ মূহুর্তে হঠাৎ করে রাশিয়া দূতাবাস গত বুধবার ফেসবুকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বিষয়ে বিবৃতি প্রচার করে। যেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে মন্তব্য করা হয়। তার এক দিন পর ওই বিবৃতি নিয়ে পাল্টা একটি বক্তব্য প্রকাশ করে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। এ নিয়ে নানা মহলে এখন চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ।
বিদেশিদের সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারবে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো প্রভাব খাটাচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গত বুধবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন। শনিবার ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ইংরেজিতে লিখিত আকারে জাখারোভার বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। এদিকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলকে সমর্থন করে না, তারা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। অপরদিকে রাশিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষে এই প্রতিক্রিয়া জানান। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, বিদেশি শুভাকাঙ্খীদের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশ নিজেদের আইন মোতাবেক স্বাধীনভাবে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ নির্বাচন করতে সক্ষম, এ নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো সন্দেহ নেই। স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘অক্টোবরের শেষের দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং বিরোধীদলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের বিষয়ে খবর পাওয়া যায়। বৈঠকে তারা দেশে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে, বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক ও বিশ্লেষক শাহাব এনাম খান- তারা দু,জনেই বলছেন ভূ-রাজনৈতিক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি একই কারণে রাশিয়াও সক্রিয় হয়েছে। একই সঙ্গে তারা দুজনেই মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কার্যক্রমকে রাশিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার বা হস্তক্ষেপ হিসেবে বলছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে রাশিয়া নিজেও পাল্টা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়ান ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তিক্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিফলনটাই প্রকাশ পাচ্ছে এখানে এবং এর ফলে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে তাদের পারস্পারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি মঞ্চ। ওদিকে বিরোধী দল বিএনপি শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে ‘রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মন্তব্য একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক।
যা বলছে বিএনপি: রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এ ধরনের বক্তব্য বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের পক্ষে এই প্রতিক্রিয়া জানান। মারিয়া জাখারোভার বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বিএনপি নেতা রুহুল কবির বলেন, একটি স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সঙ্গে রাশিয়ার মুখপাত্রের বক্তব্য সাংঘর্ষিক। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে রাশিয়ার মুখপাত্রের বক্তব্যকে ভ্রান্ত ও অপব্যাখ্যা উল্লেখ করে বিবৃতিতে রুহুল কবির বলেন, ‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কলঙ্কিত ইতিহাস তৈরি করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় রেখে বাংলাদেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিএনপি আরও বলেছে, শান্তিপূর্ণ ও অহিংস কর্মসূচিগুলোয় জনগণের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। বিএনপির সমাবেশ আয়োজনে কোনো বিদেশি কূটনীতিক সহায়তা করেছেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত অভিযোগ আগে উত্থাপিত হয়নি। এ ধরনের বাস্তবতা-বিবর্জিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে প্রতীয়মান হয়। রাশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সম্মান করবে বলে এ দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। এ ছাড়া গণ-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্র, বর্তমান সরকারকে অযাচিত সমর্থন করবে না বলেও বিএনপি মনে করে।
যা বলা হয়েছিল রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতরের ব্রিফিংয়ে: বাংলাদেশের রাশিয়ার দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় মস্কোতে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার বক্তব্য ছবিসহ উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, আমরা বারবার একটি বিষয় তুলে ধরছি যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আড়ালে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তার অভিযোগ ‘অক্টোবরের শেষের দিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস একটি সরকার বিরোধী সমাবেশ আয়োজনের জন্য স্থানীয় বিরোধী দলীয় এক সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। প্রসঙ্গত, গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ছিলো এবং সেটি পর্যন্ত পণ্ড হয়ে গিয়েছিলো। এরপর থেকে বিএনপি ধারাবাহিক ভাবে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে ঘোষণা করা আসছে। এর মধ্যেই গত ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠিও দিয়েছেন। জবাবে আওয়ামী লীগ বলেছে এ ধরণের সংলাপের জন্য এখন সময় নেই। অন্যদিকে বিএনপি বলেছে সংলাপের পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব সরকারের। দল দুটির এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এদিকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন, নির্বাচন বা রাজনীতি নিয়ে দুই দেশ কথা বললেও মূল বিষয় হলো ভূ রাজনৈতিক। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিছু বললে রাশিয়াও তার অবস্থান ব্যক্ত করছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের সমালোচনা করলেও চীন, ভারত এবং রাশিয়া সেটি করেনি।
রাশিয়ার অভিযোগ নতুন নয়: বাংলাদেশকে ঘিরে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া ব্যাপকভাবে নজরে এসেছিলো গত বছরের শেষের দিকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তাদের কূটনীতিকদের কার্যক্রম নিয়ে দুই পরাশক্তি তখন একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য দিয়েছিলো। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় একজন নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাসায় ঘিয়ে ফেরার পথে একদল ব্যক্তির বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক বিবৃতিতে ওই ঘটনার বিষয়ে বলেছিলেন, একজন মার্কিন কূটনীতিকের কার্যক্রমের প্রত্যাশিত ফলাফল এই ঘটনা, যিনি বাংলাদেশের জনগণের অধিকারের যত্ন নেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর রুশ দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয় ‘বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিকে সব সময় মেনে চলায় রাশিয়া ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। আবার রাশিয়ার দূতাবাসের ওই বিবৃতির খবর শেয়ার করে মার্কিন দূতাবাস ২১ ডিসেম্বর টুইট করে লেখে ‘এটা কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? এ নিয়ে আরও কয়েকবার পাল্টাপাল্টি টুইট করে ঢাকার রুশ ও মার্কিন দূতাবাস। তখন ২২ ডিসেম্বর মারিয়া জাখারোভা আবার মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি তার (পিটার হাস) ব্রিটিশ ও জার্মান মিশনের সহকর্মীরাও একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন এবং আগামী বছরের শেষে অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার বিষয়ে প্রকাশ্যে বলে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার মূলনীতিকে লঙ্ঘন করার এমন কর্মকাণ্ড অগ্রহণযোগ্য। মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন দুই পরাশক্তির মধ্যে একটি প্রতিযোগীতার প্রবণতা রয়েছে। এই কৌশলগত দিক বিবেচনা করলে বলতে হয় যে ওয়াশিংটনকে বিপাকে ফেলতে যে কোন জায়গায় সম্ভাব্য সব সুযোগকে মস্কোর কাজে লাগানোর বিষয়টা বিস্ময়কর কিছু নয়। রাশিয়া জানে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ঢাকা পছন্দ করছে না। সে কারণেও তারা সানন্দে এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে।
যা বলছেন বিশ্লেষকেরা: ঢাকায় বিশ্লেষকরা মনে করেন রাশিয়ার সক্রিয় হয়ে ওঠার মূল কারণ হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাশিয়া কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে এবং ইতোমধ্যে ইউরেনিয়ামের চালানও বাংলাদেশে এসে গেছে। সবেক সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন এর আগে দু’দেশের মধ্যে এক্সচেঞ্জ কর্মসূচিগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছিলো কিন্তু রূপপুরের মাধ্যমে সেটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। রূপপুর দিয়েই পরিবর্তনটা এসেছে। এখন তাদের জন্য বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। স্থিতিশীলতা বলছে রাশিয়ানরা মনে করে এক সরকার অনেকদিন ক্ষমতায় থাকলে তাদের জন্য কাজের সুবিধা। শাহাব এনাম খানও এ বক্তব্যের সাথে একমত। তিনি বলেন রাশিয়া বাংলাদেশে সিভিল নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সাপ্লাই করছে এবং সে কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং তাদের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ভূ-কৌশলগত ভাবে বাংলাদেশ আগের যে কোন সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কোন সময়ের চেয়ে। এর এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ইউরেনিয়াম এখন বাংলাদেশে। তারা যাদের ইউরেনিয়াম সরবরাহ করে সেসব দেশের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্কের বিষয়টিও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তৌহিদ হোসেন অবশ্য বলছেন বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আসার কারণেও রাশিয়ার তৎপরতা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক মেরুকরণ এখন অনেক বেশি স্পষ্ট। চীন রাশিয়ার কৌশলগত মিত্র। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য রাশিয়া গ্রহণ করতে চায় না। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছে না রাশিয়া। তৌহিদ হোসেন ও শাহাব এনাম খান দুজনেই বলছেন বাংলাদেশের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অন্যের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও কার্যত উভয় দেশই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েই কথা বলে যাচ্ছে। মাইকেল কুগেলম্যান বলছেন মস্কো এখন বাংলাদেশের সাথে তার উষ্ণ সম্পর্ক এবং বাংলাদেশে তার বিনিয়োগের বিষয়টি উপভোগ করছে। এটা এমন একটা দেশ (বাংলাদেশ) যেটিকে রাশিয়া তার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। সেটিও রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করতে উৎসাহিত করেছে। এর আগেও বাংলাদেশকে নিয়ে টুইটারে একে অন্যের বিরুদ্ধে বলতে দেখেছি দুই দেশকে।
আলোকিত প্রতিদিন/২৫ নভেম্বর ২৩/এসবি