শরীয়তপুরে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা

0
954
:: প্রতিনিধি, শরীয়তপুর ::
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নে ভিজিডির চাল আটক বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার সময় স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলার স্বীকার হোন শরীয়তপুরে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) বিকালে বড়কান্দি ইউনিয়নের মালকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে । এ বিয়য়ে থানায় একটি মামলাও হয়েছে ।
মামলার বিবরণ ও ঘটনাসূত্রে জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের মালকান্দি গ্রামে ভিজিডি কার্ডের কিছু বস্তা চাল একটি পরিত্যক্ত ঘরে পাওয়া যায়। যা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য বৃহস্পতিবার অনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন খান (দৈনিক সকালের সময়), সাংবাদিক সাইফ রুদাদ (দৈনিক আজকের দর্পণ), সাংবাদিক ইমরান হোসেন (দৈনিক আজকের পত্রিকা), সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম (দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন), সাংবাদিক মাশহুর খান (দৈনিক গণকথা), সাংবাদিক শাওন বেপারী (দৈনিক ভোরের পাতা) ঘটনা স্থলে স্থানীয় ও অভিযুক্তদের বক্তব্য সংগ্রহ করেন । এক পর্যায়ে স্থানীয় অনু মাল (৪০) সাংবাদিকদের ফলো করতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে তাদের গতিরোধ করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। সেখানে অনু মালের বক্তব্য নিয়ে পরবর্তীতে ভিজিডি কার্ডধারী কয়েকজনের বক্তব্য সংগ্রহ করতে যান সাংবাদিকবৃন্দ। যখনই বড় কান্দি ইউনিয়নের মালকান্দি গ্রামের আব্দুল লতিফের বাড়িতে ভিজিডি কার্ডধারী একজনের বক্তব্য সংগ্রহ করছিলেন, এমন সময় হঠাৎ করে অনু মাল, রাব্বি মাল ও আশাদুল মালসহ ৭/৮ জন এসে ফেসবুক লাইভে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রথমেই জামাত শিবিরের এজেন্ডা, ভুয়া সাংবাদিকসহ বিভিন্ন আজে বাজে ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। সাংবাদিকরা গালিগালাজের কারণ জানতে চাইলে অনু মাল বলে, আশ্রাফ মাল হুকুম দিছে শালাদেরকে মেরে ফেল, দেখি কে কী করতে পারে। সাংবাদিকরা প্রশাসনকে জানাবে বললে, অনু মাল ওসিকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে বলে ওসিকে গিয়ে বল আমি অনু মাল। এরপর অনু মাল, রাব্বি মাল, আশাদুল মালসহ ৭/৮ জন এসে সাংবাদিকদের এলোপাথারিভাবে কিল-ঘুসি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এতে তাদের শরীরে ফুলা, নীলা ও জখম হয়। এসময় আনু মাল সাংবাদিক মাশহুর খানের নিকট থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। রাব্বি মাল সাংবাদিক মাশহুর খানের নিকট থেকে মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, যার মধ্যে ৮,৫০০ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিলো । এরপর রাব্বি মাল সাংবাদিক ইমরান হোসেনের কাছ থেকে মানিব্যাগ ও গলার স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিয়ে যায়, ইমরানের মানিব্যাগের মধ্যে ১৪, ৩০০ টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিলো।
স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সাংবাদিকরা রক্ষা পায় ও প্রশাসনকে অবগত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে জাজিরা থানায় এসে সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন খান একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, মালকান্দি গ্রামের দবির মালের পুত্র অনু মাল, আশ্রাফ মালের পুত্র রাব্বি মাল, নুরুদ্দীন মালের পুত্র আশাদুল মালসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮জন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালবান্দি গ্রামের মাল পরিবার একটি সন্ত্রাসী ও দাঙ্গাবাজ পরিবার। এই পরিবারের আশ্রাফ মাল আপন ভাই হত্যা মামলার আসামী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। আপন ভাই নৌকার পক্ষ নেওয়ায় আশ্রাফ মাল তার দলবল নিয়ে তাকে খুন করে। ২০০১ সালের নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেন। বর্তমানে আশ্রাফ মাল আওয়ামীলীগের সাথে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন।
মাল পরিবারের সন্ত্রাসীদের দ্বারা সাংবাদিরা নির্যাতিত হওয়ায় সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনসহ দেশের জাতীয় ব্যক্তিত্বরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আলোকিত প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল-২০২১/জেডএন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here