ছিনতাই মামলায় শাহ আলী থানার দুই এস আই আটক
ভোট বর্জনের আহ্বান জানাল বিএনপি
আলোকিত ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি সারাদিন ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি আজ থেকে সরকারকে ‘সবক্ষেত্রে’ অসহযোগিতা করার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ এক ভিডিও বার্তায় দলের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে আজ রিজভী দলের অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি জানান। রুহুল কবির রিজভী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে’ ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এই আহ্বানের পেছনে যুক্তি দিয়ে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের নামে বানর খেলায় যাবেন না। ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। নির্বাচনে কারা এমপি হবেন সেই তালিকা তৈরি হয়ে গেছে।’ এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে সব প্রকার কর, খাজনা, পানি, গ্যাস বিদ্যুৎ বিল দেওয়া স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
আলোকিত প্রতিদিন/ ২০ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি
তেজগাঁওয়ে পৌঁছার আগে আগুন দেখা যায় ট্রেনে
আলোকিত ডেস্ক:
মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি টঙ্গী স্টেশনে থামেনি। থেমেছিল ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। এর আগে ট্রেনটির স্টপেজ ছিল গফরগাঁও এবং ময়মনসিংহ জংশনে। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছাতে সময়ের হিসাবে দূরত্ব ১৮ মিনিটের। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিতে আগুন দেখা যায়নি। কিন্তু তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার আগে টের পাওয়া যায় ট্রেনে আগুন লেগেছে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাবের আগে ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত দুই শতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য মতে, ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সকাল পৌনে ৭টার দিকে আগুন নির্বাপণ হয়। পরে একটি বগি থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার ফাইটাররা।
তাদের মধ্যে একজন শিশু, একজন নারী এবং দুজন পুরুষ ছিলেন। এর মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন– নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার তিন বছরের শিশুসন্তান ইয়াসিন। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন এবং চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা রেলওয়ে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং হত্যার পৃথক ধারায় একটি মামলা (মামলা নং- ৭) হয়েছে। মামলার আসামিরা অজ্ঞাত। বাদী ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) খালেদ মোশাররফ।ছায়াতদন্ত শুরু করেছে র্যাব, থানা পুলিশ, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার এসপি বলেন, ‘রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। যদিও আমরা এখন পর্যন্ত জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারিনি।’ যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। উত্তরা, গুলশান এবং তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে। আমরা এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি, চেষ্টা চলছে।’ তবে,গুলশান গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বলেন, ‘আমরা প্রথমত ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত আমাদের অবজারভেশন, মিডিয়াতে যেভাবে আসছে তা সঠিক মনে হয়নি। আমরা এর প্রমাণও পেয়েছি। অর্থাৎ আগুন কোন এলাকায় লাগানো হয়েছে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সিসিটিভি ফুটেজে।’ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে কোনো আগুন বা ধোঁয়ার আলামত পাইনি। তবে, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে আগুনের আলামত স্পষ্ট দেখা গেছে।’

ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সৈনিক ক্লাব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর এটি স্পষ্ট মনে হয়েছে যে, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয় ট্রেনটিতে।’ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘সৈনিক ক্লাবের আগের কোনো সিসিটিভিতে আমরা ট্রেনটিতে আগুন কিংবা ধোঁয়ার আলামত দেখতে পাইনি। এ ছাড়া, ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই ট্রেনটি স্টেশন ত্যাগ করে।’ বিমানবন্দর থেকে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটিতে আগুন লাগানো হয়নি— উল্লেখ করে মি: ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে, বিমানবন্দরে দুজন নেমে যাওয়ার পরপরই আগুন দেখা যায়। তার মানে, তারা আগুন দিয়ে বিমানবন্দরে নেমে গেছেন। এটি আসলে সঠিক নয়। কারণ, বিমানবন্দর থেকে মহাখালী বা তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছার দূরত্ব ১৮ মিনিট। আগুন ১৮ মিনিট আগে লাগলে পুরো ট্রেন পুড়ে ছাই হয়ে যেত।’ ‘ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের আগে ট্রেনটির যাত্রাবিরতির স্টেশন ছিল গফরগাঁও এবং ময়মনসিংহ জংশনে। টঙ্গীতেও ট্রেনটি থামেনি। আর বাইরে থেকে দেখার সুযোগও নেই যে কেউ আগুন লাগাচ্ছে কি না। আমাদের ধারণা স্পষ্ট, আগুন বিমানবন্দর স্টেশনে দেওয়া হয়নি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পর আগুন দেওয়া হয়। আমরা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মাস্টার, লাইনম্যান, সিগন্যালম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। তারা ক্লিয়ার পাস দিয়েছেন। তারাও তখন আগুন দেখেননি। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন ভিজিবল (দৃশ্যমান) হয়েছে।’
প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে অভিবাসী পরিষদ এর আত্মপ্রকাশ
এম এইচ চৌধুরী :
প্রবাসীদের দেশে-বিদেশে নানা রকম হয়রানি, বঞ্চনার অভিযোগ অনেক দিনের হলেও তাদের জন্য সহযোগিতা মূলক কোন সংগঠন গড়ে উঠেনি দীর্ঘদিনে। দেশের মাটিতে বা প্রবাসের মাটি কোনটিতেই মানবিক সহযোগিতা পায়নি দেশের সূর্য সন্তান রেমিট্যান্স যোদ্ধারা, বরং তাদের’কে ব্যবহার করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছে কিছু নামধারী লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন বা সংস্থা। প্রবাসীদের এই ক্ষোভ-বিক্ষোভ থেকে নিজেদেরকে আত্মরক্ষা ও মানবিক অধিকার সুরক্ষা জন্য সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে প্রবাসী অধিকার পরিষদ।
প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবী আদায়ে পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের তত্বাবধানে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে একটা আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে ওঠে কয়েক বছর আগে। যার প্রধান উপদেষ্টা হলেন নুরুল হক নুর। কিন্তু কয়েক মাস আগে ভিপি নুরের দল বাংলাদেশ গন অধিকার পরিষদের তৎকালীন আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়াসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের প্রেরিত অনুদান, অর্থ সাহায্য আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠে ভিপি নুরের বিরুদ্ধে। ফলশ্রুতিতে গন অধিকার পরিষদই ভিপি নুর গ্রুপ ও ড. রেজা কিবরিয়া গ্রুপে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের উপরে।
প্রবাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের তাবেদারি না করে প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ে সংগঠিত থাকার প্রয়োজনীয়তা সামনে রেখে দীর্ঘদিন সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র, অরাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে তুলতে একমত হন এবং নুর গ্রুপ রেজা কিবরিয়া গ্রুপ কোন গ্রুপেরই সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিভিন্ন মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে গত ৪ ডিসেম্বর ইউ কে প্রবাসী সাবেক ছাত্রনেতা দেলোয়ার হোসাইন সৈয়দকে আহ্বায়ক ও সৌদি আরব প্রবাসী ফজলুল হক মুন্নাকে সদস্য সচিব করে সম্পূর্ন অরাজনৈতিক সংগঠন “বাংলাদেশী প্রবাসী ও অভিবাসী পরিষদ” এর ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত হয়।
আহবায়কঃ দেলোয়ার হোসেন সৈয়দ (ইউ.কে) যুগ্ম আহ্বায়ক বৃন্দঃ মোঃ অলি হোসাইন তালুকদার (ডেনমার্ক), জাফর চৌধরী (আমেরিকা), মাহবুবুল করিম সুয়েদ (ইউ.কে), শাকিল আদনান (সৌদি আরব), আরিফ রশিদ (কানাডা), ইমরান সাদিক আদনান (পর্তুগাল), মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (ইউ.কে), সোহাগ মাহমুদ সাইফ (সুইডেন), মাওলানা ফরিদউদ্দিন মজনু (ইউ,কে), দেলোয়ার রাজা চৌধুরী দারা (স্পেন), এনাম আহমেদ (ইউ.এ.ই), সদস্য সচিবঃ ফজলুল হক মুন্না (সৌদি আরব) যুগ্ম সদস্য সচিববৃন্দঃ মজহারুল ইসলাম শাকিল (কুয়েত), শাহ আজম স্বাগর (মালয়েশিয়া), শাহদাৎ হোসেন (জার্মানি), কামাল পাশা (ওমান), জুলহাস সিকদার (মালদ্বীপ), মিস হেলেন বেগম (ইউ.কে), আলাল আহমদ জীবন (সৌদি আরব), হাফেজ মাওলানা আবদুর রহমান চৌধুরী (অর্থ) (ইউ.কে), অনুপম রাজিব (ইউ.কে), ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল হাসান (ইউ.এ.ই), রুবেল আহমেদ (পর্তুগাল) সদস্যবৃন্দঃ মাওলানা রুহুল আমিন (ইউ.কে), আবদুল হক চৌধুরী (সৌদি আরব), মোহাম্মদ শিবলু তালুকদার (ফ্রান্স), অনিক চৌধুরী (মালয়েশিয়া), মুজাহিদ খান (ইউ.কে), সেলিম খান (সৌদি আরব), সৈয়দ শাহরিয়ার হোসেন (কানাডা), মনিরুজ্জামান খান (ইউ.কে), জোবায়ের হোসেন (ফ্রান্স), আবদুল মুকসিত চৌধুরী রাজিব (ইউ এস এ), জুয়েল শফিকুল (সিংগাপুর), মোঃ শামীম আহমেদ (মালদ্বীপ), মোঃ জাকির হসেন (ইটালি/ইউ.কে), হুমায়ুন খান (ইউ.কে),মোহাম্মদ লুতফুর হোসেন (ইউ.এস.এ), তাজুল ইসলাম নিটু (ইউ.কে), আশরাফ জনি (ইটালি/ইউ.কে), এম এন আহমেদ নানু (ইউ.কে), মোঃ আজমত কাজী (ইটালি/ইউ.কে),মুজিবুর রহমান (স্পেন), তারেক আহমেদ (ইউ. কে), শাহদাৎ খান (ইউ.এস এ), ইবাদ চৌধুরী (কানাডা), মোহাম্মদ সুমন (বাহরাইন), ডাঃ তাজুদ ইসলাম (ইউ.কে), মেহেদী হাসান (সৌদি আরব)সহ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়।
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
কালীগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে বিশেষ উদ্যোগ
চট্টগ্রাম ০৯ আসনের নির্বাচনে দুই ব্যারিস্টারের লড়াই
মুহাম্মদ জুবাইর :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে কোতোয়ালী চট্টগ্রাম-৯ আসনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সংসদীয় আসনে পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্য বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, মেডিক্যাল কলেজ, নামী-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত, সিটি করপোরেশন, সিডিএ প্রধান কার্যালয়, পুলিশ, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশাসনিক অফিস। তাই চট্টগ্রামে সব দলের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ এই আসনটি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম- ৯ সংসদীয় আসন।
এই আসনে গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রথম এ আসনে এক ব্যারিস্টারের মুখোমুখি হচ্ছেন আরেক ব্যারিস্টার। শুধু পেশাগত মিলই নয়, তারুণ্যের দিক থেকে বয়সও কাছাকাছি এই দুই নেতার। এ নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। এ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নৌকার টিকিট পেয়ে নির্বাচন করছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি। তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা মরহুম আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন জাতীয় নেতা ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং চট্টগ্রামে প্রথম তিন-তিনবার বিজয়ী হয়ে ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। অন্যদিকে, নির্বাচনী মাঠে ৭জন প্রার্থীর মধ্যে ব্যারিস্টার নওফেলের প্রধান শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রামের সম্ভ্রান্ত ও রাজনৈতিক চৌধুরী পরিবারের বড় সন্তান।
তিনি পূর্ব পাকিস্তান পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতা প্রাদেশিক আইন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম পোর্টের গভর্নর ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মরহুম এ. কে. এম ফজলুল কবির চৌধুরীর বড় নাতি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মরহুম এডভোকেট এ. বি. এম. ফজলে রশীদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। তাছাড়া তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের উপনেতা জি.এম. কাদের এমপির বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরীর মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মাসুদা এম. রশীদ চৌধুরী বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের (ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) সংরক্ষিত আসনের এমপি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্হায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও রাউজানের এমপি এ. বি. এম. ফজলে করিম চৌধুরী ও সানজীদ রশীদ চৌধুরী সম্পর্কে আপন চাচা-ভাতিজা। এদিকে ব্যারিস্টার সানজীদ এর মামা সাবেক মন্ত্রী ও বুয়েটের ভিসি ডঃ ইকবাল মাহমুদ এবং ফুপা এইচ এন আশিকুর রহমান এমপি আওয়ামী লীগের ৩৮ বছর কোষাধ্যক্ষ।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে অতীতে টানা দুইবার জয়ী হতে পারেননি কেউ। ১৯৯১ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল নোমান। ১৯৯৬ সালে নোমানকে হারিয়ে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান। ২০০১ সালে মান্নানের কাছ থেকে আসন পুনরুদ্ধার করেন ধানের শীষের নোমান। আসন সীমানায় পরিবর্তন আসার পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দুই দলই প্রার্থী বদলে ফেলে। নৌকার মাঝি হন নুরুল ইসলাম বিএসসি ও ধানের শীষে আসেন শামসুল আলম।
দুই শিল্পপতির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০১৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন বাবলু এমপি হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত এবং আওয়ামী লীগের নওফেল দুজনই ছিলেন নতুন মুখ। ডা. শাহাদাত জেলে থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট পান ১৭ হাজার ৬২৪ ভোট। আর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পান ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪ ভোট।
নতুন মুখ নওফেল প্রথমবার নির্বাচনে জয়লাভ করে উপমন্ত্রী হন। যেহেতু এ আসনে একবারের বেশি এমপি হওয়ার রেকর্ড নেই, সেই হিসেবে এ আসনের নতুন মুখ ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরীর জয় লাভের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ব্যারিস্টার সানজীদের মিষ্ট ব্যাবহার, দল-মত নির্বিশেষে এলাকার সকল ধর্মের মানুষের সাথে সৌহার্দতা, বিপদে পাশে পাওয়ায় জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিশেষ করে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ২০২০ সালে করোনার সময় এবং পরবর্তী দুস্থ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়াসহ মানবিক কাজে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছেন এই তরুণ নেতা।
তাছাড়া প্রতি রমজানে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মুহূর্তে সরব হওয়া, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিগত কল্যাণ তহবিল হতে আধুনিকায়নের ভূমিকাসহ এসব কারণে সাধারণ ভোটারদের কাছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়েট, মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট, চট্টগ্রাম চেম্বার, ফিশারীঘাট ব্যারিস্টার সানজীদের দাদার প্রতিষ্ঠিত বলে ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। সাথে আছে রাউজানের দের লক্ষ ভোটার এর ভোট ব্যাংক, ব্যারিস্টার সানজীদের শক্তি।
এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের ফলে বিশেষ সুবিধা পাবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজিদ রশীদ চৌধুরী। তাছাড়া বিএনপি ভোট বর্জন করায় বিএনপিপন্থী ভোটারদের ভোট পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে তার। সাথে যোগ হবে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর ভোটও। মুঠোফোনে ব্যারিস্টার সানজীদ রশীদ চৌধুরী বলেন, “আমি এমপি পুত্র এমপি হিসেবে, আর নওফেল মেয়র পুত্র মেয়র হিসেবে মানায়। দু’জন মিলে চট্টগ্রাম গড়বো ইনশাআল্লাহ”। তবে সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ০৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে শুধু ০৯ আসনের জনগণ নয়, এ আসনের লড়াইয়ে তাকিয়ে থাকবে সারা বাংলাদেশ। এটিই একমাত্র আসন, যে আসনে লড়াই হবে ব্যারিস্টার বনাম ব্যারিস্টার।
১৯ ডিসেম্বর ২০২৩