আজ সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২৩ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 539

এবার আন্দোলনে ভিন্ন কৌশলের চিন্তা বিএনপির

আলোকিত ডেস্ক:

ভাঙন ঠেকাতে দলের ‘কৌশল’ সফল হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। চাপ ও নানা প্রলোভনে ফেলতে পারেনি নেতাদের। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে রাতে সিনিয়র নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে হরতাল ও অবরোধের পাশাপাশি ভিন্ন কর্মসূচিও পালন শুরু করেছে দলটি। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করার চিন্তা করছে। গুম-খুন, সাজা, কারাবন্দি ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদেরও এ কর্মসূচিতে রাখার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে সমমনা দল ও জোট নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে। এছাড়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত মোট ৬০টি দল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। এসব দলকে বিএনপির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে তাদের সঙ্গে যোগযোগ শুরু করেছে দায়িত্বশীল নেতারা। দাবি আদায়ে এক মঞ্চ কিংবা পৃথকভাবে দলগুলো যেন মাঠে সোচ্চার থাকে, সেজন্য কাজ করছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন বিরতি দিয়ে হরতাল ও অবরোধ পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে বিএনপির। বিরতির দিনে ভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করছে দলটি। সেক্ষেত্রে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে ১০ ডিসেম্বর রোববারের পরিবর্তে সরকারি ছুটির দিন শনিবার ৯ ডিসেম্বরও সমাবেশ হতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা অনেক কর্মসূচি নিয়েই আলোচনা করি। কাজেই শেষ পর্যন্ত কোনটা যে স্থির হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সমাবেশ করার বিষয়টি আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে। দু-তিন দিনের মধ্যে এ নিয়ে আমরা বসব। সেখানেই চুড়ান্ত হবে। একই কথা জানান ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই জানানো হবে। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান জানান, নির্বাচনে নিতে কেন্দ্রীয় নেতা, দলের সাবেক সংসদ-সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের টার্গেট করা হয়েছিল। ভয়ভীতি ও নানা প্রলোভনও দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ড থেকে সবাইকে আত্মগোপনের পরাপর্শসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এমন কৌশল সফল হয়েছে। বিএনপিকে ভাঙা তো দূরের কথা, গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতাকেই নির্বাচনে নিতে পারেনি, ভিন্ন কোনো দলেও ভেড়াতে পারেনি। ভার্চুয়াল বৈঠকে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে দুজন সিনিয়র নেতা তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে এক মামলায় হঠাৎ করে শাহজাহান ওমরকে জামিন দেওয়ার পর তারা ধরেই নিয়েছিলেন তিনি নির্বাচনে যাচ্ছেন। ওইদিন কিংস পার্টিখ্যাত একটি দলে যোগদানের গুঞ্জনও ছিল। কিন্তু তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগেরই ক্ষতি হয়েছে। ঝালকাঠিতে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন তাদের (আ.লীগ) তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে এ বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ভাঙার এবং বিএনপি জোট থেকে কিছু দলকে লোভ দেখিয়ে প্রহসনের নির্বাচনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিছু নিকৃষ্ট লোভী ছাড়া কেউ সরকারের এই হীনকর্মের সঙ্গী হয়নি। সরকার ভুঁইফোঁড় দলগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টায় প্রমাণ হয়েছে তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থ হয়েছে। এই একতরফা নির্বাচন তাদের বাঁচাতে পারবে না, তাদের নির্বাসনে পাঠাবে। যারা লোভে পড়ে সরকারের পাতানো নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা রাজনীতির আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হবেন। সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যে তাদের বেইমান হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রসঙ্গ

আলোকিত ডেস্ক:

বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে জঙ্গি দমন অব্যাহত রাখায় ২০২২ সালে এ দেশে এ ধরনের অল্প কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গোষ্ঠী, যেমন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং ইসলামিক স্টেটসংশ্লিষ্ট (আইএস) নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম–২০২২’–এর বাংলাদেশ অংশে এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা প্রায়ই সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে জিরো টলারেন্সের (শূন্য সহিষ্ণুতা) ওপর জোর দেন। তবে বাংলাদেশ বরাবরই আল–কায়েদা ও আইএসের মতো বৈশ্বিক জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতি অস্বীকার করে আসছে। ২০২২ সালের ঘটনাবলির ওপর তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নির্মূলে অভিযানের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। অবশ্য নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য অংশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রতিবেদনে ২০২২ সালে বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠীসংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিরুদ্ধে অভিযান ছাড়া ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়, আল-কায়েদা অনুপ্রাণিত গোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করছিল। এ অবস্থায় ওই বছরের অক্টোবরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, জঙ্গিগোষ্ঠীটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বছরের বাকি সময়জুড়ে বেশ কয়েকজন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সদস্যকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেয়। ২০২২ সালের অপর ঘটনায় ২০ নভেম্বর জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়ে মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেন। তাঁরা দুজনই ২০১৫ সালে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় আনসার আল-ইসলামের ২০ জন সন্দেহভাজন সদস্যকে অভিযুক্ত করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টারটেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ) এবং বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটকে (এটিইউ) এবং দেশজুড়ে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটকে নানা ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের (এটিটি) বিচারক ও কৌঁসুলিদেরও প্রশিক্ষণ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। নথিপত্র ব্যবস্থাপনা, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা, সন্ত্রাসীদের বিচার করা এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নবিষয়ক মামলা পরিচালনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

শিবচরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে একটি বসতবাড়ি পুরে ছাই

মোঃ রাশেদুল ইসলাম :

আঁধারে পুরে ছাই হয়ে গেলো এক পরিবহণ চালকের বসতবাড়ি! গত দিনগত রাত (২ ডিসেম্বর) ১.টা ৪০ মিনিটের দিকে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাখরেরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্র নামক এলাকায় ওই দূর্ঘটনাটি ঘটে। সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দিনগত রাতে পোড়া গন্ধ পেয়ে আশেপাশে দেখতে গিয়ে তারা পাশের ঘরে আগুনের লেলিহান দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে ফায়ার সারর্ভিসের কর্মিরা ঘটস্থলে উপস্থিত হয়ে এলাবাসী ও তাদের যৌথ চেষ্টায় যতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণে ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু পুরে ছাই হয়ে যায়। পরবর্তিতে শিবচর থানার একদল পুলিশ গিয়ে ঘটস্থল পরিদর্শন করেন।

বাড়ির মালিকের শ্যালক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বাচ্চাদের পরিক্ষা শেষে আমরা গত ৩০ তারিখ বিকেলে ঢাকা আমার শশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ছিলাম, রাতে ফোন পেয়ে জানলাম ঘরে আগুন লেগে সব পুড়ে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেলাম! বাড়ির মালিক মোঃ মনির সরদার বলেন, রেল লাইন আর এক্সপ্রেস ওয়েতে আমার অনেক জমি চলে গছে তািই সরকার পুনর্বাসন কেন্দ্রে (আর এস-৫) এক খণ্ড জমি পেয়ে সেখানে একটা ঘর তৈরী করেছিলাম, সেখানে আমার শ্যালক থাকত। সে সামান্ন একজন প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার কষ্ট করে যা সম্পদ জুরছিল, তা সবই আজ পুরে ছাই হয়ে গেলো!

তিনি আরো বলেন, টিভি, ফ্রিজ, ওয়াসিং মেশিন, এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার নগদ টাকা চার ভরি স্বর্নালঙ্কারসহ ঘরের আসববপত্র যা ছিলো সব পুরে গেছে। শিবচর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের প্রধান তরুণ অর রশিদ খাঁন বলেন, আমরা সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পূর্বেই ঘরের আসববপত্র সব পুরে যায়। আমাদের প্রথিমিক ধারণা, বৈদ্যুতিক সট সার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে। পরে আমরা আশপাশের আর কোনো ঘরের যেন ক্ষতি হতে না পারে, সেই চেষ্টা করেছি। পাশের কোনো ঘরের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

০২ ডিসেম্বর ২০২৩

মারা গেলেন নাগরপুরে আ.লীগ সহ সভাপতি মতিয়ার রহমান মতি

আনোয়ার হোসেন :

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমান মতি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে হঠাৎ স্ট্রোক জনিত কারণে মেঘনা-পানান বাজারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬২ বছর। মরহুমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইল ৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি, টাঙ্গাইল জেলা আ.লীগ সহ সভাপতি তারেক শামস খান হিমু, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) পরিচালক ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা ই রাকিব, নাগরপুর উপজেলা আ.লীগ সভাপতি মোঃ জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম, নাগরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক মো কুদরত আলী সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজ। তিনি এক স্ত্রী, দুই ছেলে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী এবং আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন।

০২ ডিসেম্বর ২০২৩

নেত্রকোনায় শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্ররে জেলা কর্মশালা অনুষ্ঠিত

শহীদুল ইসলাম রুবেল :

“টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং নৈতিক শিক্ষার প্রসারে মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম শীর্ষক প্রকল্পের ভূমিকা” এর আওতায় জেলা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় স্হানীয় পাবলিক হলে জেলা প্রশাসন এবং মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ৬ষ্ঠ পর্যায় এই জেলা কর্মশালার আয়োজন করে। নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিপিন চন্র বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে জেলা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট অসিত কুমার সরকার সজল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা জেলা মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম এর সহকারী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির, অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান, নেত্রকোনা জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট হাবিবুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সিতাংশু বিকাশ আচার্য, সাধারণ সম্পাদক লিটন পন্ডিত, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক মানিক রায়, শিক্ষক ঝুমা রানী দত্ত, রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি প্রদীপ কুমার সাহা প্রমূখ। কর্মশালায় বক্তারা, “ভিশন ২০৪১” বাস্তবায়ন করতে হলে সকল শিশু কিশোরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় সু শিক্ষিত করে গড়ে তুলার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

০২ ডিসেম্বর ২০২৩

বাড়ছে ভূমিকম্পের ঝুঁকি, মোকাবিলায় প্রস্তুতি কম

আলোকিত ডেস্ক:

দিনকে দিন ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা নেই। ভূমিকম্পের এমন ঝুঁকি থাকলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি অনেকটাই কম রয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। গত ৭ মাসে দেশে অন্তত ১০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সবশেষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রবিউল হক। তিনি বলেছেন, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এদিকে কুমিল্লায় ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এ রিপোর্ট লেখা পযর্ন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি মাথায় রেখে অবিলম্বে পর্যাপ্ত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বাংলাদেশের। কারণ ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বাংলাদেশে, যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ভূমিকম্প মোকাবিলায় তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। বড় ভূমিকম্প এদেশে হলে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার মতো বড় শহরগুলোয় যে পরিমাণ বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে তাতে ভূমিকম্পে এসব ভবন ধসে পড়লে শহরগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। যার কারণে ব্যাহত হবে উদ্ধার কাজ। রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও শুধু ভবন ধস নয়, ঢাকার অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও গ্যাসলাইন এই নগরকে একটি অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে। মৃত্যু হতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের। কারণ, আমাদের ভবনগুলো এখনো নিরাপদভাবে তৈরি হচ্ছে না। ঢাকা শহরের প্রায় সব বাড়িতে তিতাস গ্যাসের লাইন আছে। প্রয়োজন ছাড়া গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা ভূমিকম্পের দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ভয়ংকর। এমএমআইয়ের ৮ স্কেলের ঝাঁকুনিতে রান্নাঘরের গ্যাস বার্নার থেকে মুহূর্তে আগুন ধরে যেতে পারে। গত মাসে দেশে ১০ বার ভূমিকম্প : এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি সেদিন কেঁপে ওঠে সিলেট। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। এদিকে ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চট্টগ্রাম। ৫ মে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটির গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। গত ১৬ জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঐ ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা কেঁপে ওঠে। মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫ দশমিক ৫, যা মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এরপর ১৪ আগস্ট আরেক বার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। দুইদিন পরেই ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এছাড়া ১৮ সেপ্টেমর পর্যন্ত ঢাকা ও এর উত্তরের কয়েকটি জেলায় হালকা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২, যা মাত্রা অনুযায়ী হালকা ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। এদিকে বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী মনে করেন, ছোট ও মাঝারি ভূকম্পনে বড় শক্তি বের হওয়ার একটা প্রবণতার লক্ষণ দেখা গেছে। তার মানে, যে কোনো সময় একটি বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। তবে এই বড় ভূমিকম্প কবে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। জাতিসংঘ বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা একটি। এছাড়া বাংলাদেশ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত বিধায় প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে মাঝে মধ্যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। উপরন্তু হিমালয় রেঞ্জ হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। যদিও সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণ শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি। ছোট ভূমিকম্প কি বড় ভূমিকম্পের আলামত : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ভূমিকম্পের মূল যে জায়গা ধরা হয় সেটি হচ্ছে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল যা সিলেটের অন্তর্গত। এই অঞ্চল টেকটোনিক প্লেটের কাছাকাছি। এ ছাড়া আসাম, শিলংয়ে প্লেট আছে। এসব জায়গায় ভূমিকম্প হলে সেটির প্রভাব পড়ে দেশের মধ্যে। তবে এমন ছোট ছোট ভূমিকম্পের ধারাবাহিকতায় হঠাৎ বড় ভূমিকম্প হবে কি না সেটি নিয়ে আগে থেকেই কিছু বলা যাবে না।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভেতরে ও সীমান্তের কাছাকাছি ৫টি ফল্ট জোন (ভূ–চ্যুতি অঞ্চল) সক্রিয় আছে। এ ফল্ট জোনগুলো বগুড়া ফল্ট জোন, ত্রিপুরা ফল্ট জোন, ডাউকি ফল্ট জোন, আসাম ফল্ট জোন এবং শিলং মালভূমি ফল্ট জোন। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হতে পারে ডাউকি ফল্ট জোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড সুব্রত কুমার সাহা  বলেন, এমন ভূমিকম্প সাধারণ বিষয়। বছরে ওই অঞ্চলে ২০ থেকে ২৫ বার এমন কম্পন অনুভূত হয়। গত ১৬ জুনের ভূমিকম্পের উৎপত্তি ডাউকি ফল্টের কারণে হয়েছে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এমন ছোট ছোট ভূমিকম্প মূলত বড় শক্তি নিয়ে ভূমিকম্প হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। আর বড় কোনো কিছু হলে আগে ছোট কিছু বিষয় ধরা পড়ে। তবে সুব্রত কুমার সাহা বলেন, ‘ছোট কম্পনের ফলে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমে যেতে পারে। আবার বাড়তেও পারে। দেশে এই দুই ধরনের পর্যালোচনা আছে। অনেকেই মনে করেন, ছোট ভূমিকম্প হলে বড় কিছু হতে পারে। আবার অনেকেই ভাবেন, এর ফলে প্রেশার কমে যায়, যাতে বড় ভূমিকম্প না হয়। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিলেটের ফল্ট লাইনে দিনের বেলা ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হলে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫ ভবন ধসে পড়তে পারে। ১৬ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার সমমূল্যের। ২০০৯ সালে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিডিএমপি) ও জাপানের সহায়তা সংস্থা জাইকার যৌথ জরিপে বলা হয়, ঢাকায় সাত বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ভবন ভেঙে পড়বে। ১ লাখ ৩৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তৈরি হবে ৭ কোটি টন কংক্রিটের স্তূপ।  রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মোট ভবন ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯ টি। এর মধ্যে পাকা ভবন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৭টি। আর নির্মাণাধীন ২০ হাজার ৩২ টি।  নগর পরিকল্পনাবিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর-অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘ভূমিকম্প হবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথম ধাপ হচ্ছে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও কাঠামোগত যেসব দিক নির্দেশনা আছে তা মেনে ভবন করতে হবে। যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ১৮৬৯ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে পাঁচটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ‘১০০ থেকে ১৫০ বছর পরপর ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে অনুযায়ী, বাংলাদেশে যেকোনো সময় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ও স্থাপত্য, পরিকল্পনা ও পুরকৌশল বিভাগ থেকে পাস করা সদ্য স্নাতকদের ভূমিকম্পসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ছাড়া ঢাকা শহরের ভবনগুলো ভূমিকম্প-সহনীয়ভাবে নির্মাণ ও নির্মিত ভবন কতটা ভূমিকল্প-সহনীয়, তা জানার জন্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তদারকির ব্যবস্থার পরামর্শ দেন তিনি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) সভাপতি নুরুল হুদা বলেন, ‘ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি আমাদের নেই। ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য সরকারকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে, পেশাজীবীদেরও যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সঠিক সমন্বয়ের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, রাজউকের আওতাধীন ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান কাজ করে, এগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করার জন্য একটি মহানগর সরকার করা যেতে পারে, এখানে একজন মন্ত্রী থাকবেন। যার দায়িত্ব হবে এই ৫০-এর অধিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর আইন ও বিধিমালার সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো নিরসন করা। এ ছাড়া নতুন প্রতিটি ভবন যাতে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)’ অনুযায়ী নির্মিত হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে এবং বিএনবিসি না মেনে নির্মাণ করা পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। ২০১০ সালে হাইতি ও চিলিতে ভূমিকম্পে প্রাণহানির তথ্য তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল-পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, হাইতিতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার এবং চিলিতে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরও চিলিতে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, চিলিতে ষাটের দশকে ভূমিকম্পের পর ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে এই কোড মেনেই সব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, এ জন্যই ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। বাংলাদেশেও বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু এর প্রয়োগ নেই। বিল্ডিং কোড প্রয়োগ করতে পারলেই প্রকৃত সাফল্য আসবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, বিল্ডিং কোডের পাশাপাশি অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত সব আইন ও বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক দিলারা জাহিদ বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে বলা হচ্ছে, কিন্তু ভূমিকম্প-সহনীয় ভবন নির্মাণ করতে না পারলে সব উন্নয়নই শেষ হয়ে যাবে। ধীরে চলো নীতির পরিবর্তে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করতে হবে যে আমরা ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছি। এই আতঙ্কের মধ্যে থেকেই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ঝুঁকি হ্রাসে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চের (সিএইচবিআর) নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক বলেন, ঝুঁকি হ্রাসে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে দুর্যোগকালে সেটি ১০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। ভবন নির্মাণে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করলে ভবনের ওজন বাড়ে, এতে ভবনে ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা আরও বাড়ে। ইটের পরিবর্তে তিনি ব্লক ব্যবহারের পরামর্শ দেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন বলেন, ‘আমরা স্মার্ট, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি; কিন্তু এখনো ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা দেওয়াসংক্রান্ত প্রযুক্তি স্থাপন করতে পারিনি। এখন ভূমিকম্প-সহনীয় নগর গড়ার কাজ শুরু করে দিতে হবে। ভবন যাতে ভূমিকম্প-সহনীয় হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের (যার যে দায়িত্ব) সঠিক দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তুরস্কে পেশাগত নীতিনৈতিকতা মেনে যেসব প্রকৌশলী ও ডেভেলপার ভবন নির্মাণ করেছিলেন, সেখানে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে, আমাদেরও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে পেশাগত নীতিনৈতিকতা কঠোরভাবে মানতে হবে। জিপিএইচ ইস্পাতের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) আবু সাঈদ মো. মাসুদ পদ্মা সেতু, পদ্মা রেলসেতুর উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বড় অবকাঠামোগুলো ভূমিকম্প-সহনীয় করে নির্মাণ করা হচ্ছে, তাহলে ছোট অবকাঠামোগুলো (ভবন) কেন ভূমিকম্প-সহনীয় করে নির্মাণ করতে পারব না?’ ভবনের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি মূল্যবান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে এই বোধোদয় হতে হবে যে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হলে কিছু আসে যায় না, মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। আর জীবন বাঁচানোর জন্য যা যা করার প্রয়োজন, তা আমাদের করতে হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/ ২ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূর্তিতে লংগদু জোনের দিনব্যাপী কর্মসূচী

এরশাদ আলী, লংগদু
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির ২৬ তম বর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে রাঙ্গামাটির লংগদুতে লংগদুতে  সেনা জোনে (তেজস্বী বীর)’র উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। ২ ডিসেম্বর (শনিবার)  সকাল ১০ ঘটিকায় লংগদু সেনা জোনের আয়োজনে লংগদু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে এক শান্তি বর্ণাঢ্য র‍্যালী বের করা হয়। র‍্যালীটি উপজেলার প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। লংগদু উপজেলা  পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বারেক সরকারের সভাপতিত্বে ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঝান্টু’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লংগদু জোনের জোন কমান্ডার লঃ কর্ণেল হিমেল মিয়া পিএসসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সেলিম। বক্তব্য রাখেন  লংগদু উপজেলা প্রেসক্লাবের  উপদেষ্টা মোঃ এখলাস মিয়া খান, লংগদু সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু বিক্রম চাকমা বলী প্রমুখ্য।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোন কমান্ডার বলেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমেই পাহাড়ে আমরা সকল সম্প্রদায়ের মানুষজন  বৈষম্য ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাধ রেখে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। পাহাড়ে যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা সচেষ্ট। তিনি আরো বলেন, আমরা যদি এলাকায় সকলে মিলেমিশে বসবাস করি তাহলে মডেল উপজেলা হিসেবে লংগদু উপজেলার পরিচিতি লাভ করবে । এখানকার মৎস, কৃষি, জলবায়ু সহ যেসব ক্ষেত্র উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, তা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে ব্যাপক উন্নয়নে অগ্রগতি হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে  উপস্থিত ছিলেন লংগদু জোনের জোন উপ-অধিনায়ক, মেজর আব্দুল্লাহ আল মামুন,ক্যাপ্টেন মেহেদী হাসান, ৩৮ আনসার ব্যাটালিয়ন উপ-অধিনায়ক মীরবহর শাহাদাত হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়াররম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারা বেগম,৩৮ আনসার ব্যাটালিয়ন সিএ ও কো-কোম্পানী কমান্ডার মোঃ আরিফুল ইসলাম, মাইনীমুখ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন কমল, আটারকছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু অজয় মিত্র চাকমা, কালাপাকুজ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বারেক দেওয়ান, সেনা জোনের বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তা বৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পাহাড়ি-বাঙ্গালী  জনসাধারন এবং স্কুল শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শান্তি চুক্তি বর্ষপূতি উপলক্ষে লংগদু সেনা জোনের উদ্যোগে উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে বিনামূল্যে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন ও লংগদু বিদ্যানিকেতনে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ  চিত্রাঙ্কন ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল হিমেল মিয়া পিএসসি পুরস্কার বিতরণ করেন। এছাড়াও শান্তি চুক্তির ২৬ তম বর্ষপূর্তিতর  মাইনী খালে বিকাল ৩ ঘটিকায়  নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যায় জোন সদর দপ্তরে  মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

ভূমিকম্প আতঙ্কে রাস্তায় মানুষ, কুমিল্লায় ৮০ শ্রমিক আহত

আলোকিত ডেস্ক:

৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি, দালানকোঠা কেঁপে ওঠে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনেক মানুষ বাড়ির বাইরে সড়কে বের হয়ে আসেন। তবে কুমিল্লায় ৮০ জন শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়ো গেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আজ শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, শেরপুর, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্পের খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা বলে জানিয়েছেন ঢাকা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রবিউল হক। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বলছে, রামগঞ্জ উপজেলা থেকে আট কিলোমিটার পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পের সময় বাড়িতেই ছিলেন নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে হঠাৎ তাঁর চারতলা ভবন কাঁপতে থাকে। এ সময় তিনি ও পরিবারের সদস্যরা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিক তাঁরা বাসার বাইরে এসে সড়কে অবস্থান নেন। তবে ভূমিকম্পে ভবনের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরপাতা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তিনি গ্রামের একটি দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়। তিনি রাস্তায় বের হয়ে আসেন। পাশের পুকুরে দেখতে পান, পানি কাঁপছে। গ্রামের মানুষজন এখন ভূমিকম্প নিয়েই আলোচনা করছেন। নারায়ণগঞ্জের কাশিপুরে একটি বহুতল ভবনে অবস্থান করছিলেন সংবাদদাতা গোলাম রাব্বানী। তিনি জানান, ভবনের ওপরের তলাগুলোতে কারখানা রয়েছে। ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে মানুষের কোলাহল শুরু হয়। কিছু পোশাকশ্রমিককে দেখা যায়, তাঁরা পাগলের মতো ওপরতলা থেকে ভবনের নিচে নামছেন। তাঁরা ভবনের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় এক নারী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমরা কই দাঁড়ামু ছার, ভিল্লিংনি (বিল্ডিং) ভাইঙ্গা পড়ে!’ নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ভূমিকম্পের সময় তিনি বাইরে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ ভূমিকম্প অনুভব করেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাননি। রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ভূমিকম্পের তীব্রতা অনেক ছিল। ভূমিকম্পের পর তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছেন।  কুমিল্লায় ভূমিকম্প আতঙ্কে হুড়োহুড়ি, পদদলিত হয়ে ৮০ শ্রমিক আহত: এদিকে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে জেলার চৌদ্দগ্রামে আমির শার্টস গার্মেন্টসে এ ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হঠাৎ ভূমিকম্পে ভবন কেঁপে উঠলে আমির শার্টস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ভবনটি ধসে পড়েছে। এতে অন্য শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আমির শার্টস গার্মেন্টসের এইচআর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি নিজেই মাইকিং করছিলাম কেউ যেন আতঙ্কিত না হয়। এ সময় কেউ একজন বলে উঠলো ভবনে ফাটল ধরেছে। এ সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২০-২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। আমরা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্টেশন কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এর সংখ্যা এখনি বলা যাচ্ছে না। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আমির শার্টস গার্মেন্টসের ঘটনায় মোট ৮০ জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭৭ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী  বলেন, এখানে যাদের আনা হয়েছে তাদের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের ঘটনায় ছয়জন, কুমিল্লা ইপিজেড থেকে চারজন এবং কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে দুজনকে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। এরই মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।

 

আলোকিত প্রতিদিন/ ২ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

সুপেয় পানি পায় না উপকূলের ২ কোটি মানুষ

আলোকিত ডেস্ক:

উপকূলে লবণাক্ততা, আর্সেনিক দূষণ আর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ৷ গ্রামাঞ্চলে ৩০ কিমি দূরে গিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে আর শহরে গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না সুপেয় পানি৷ খুলনা শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে দাকোপ উপজেলা৷ সেই উপজেলায় এখন পানীয় জলের প্রধান উৎস একটি গভীর নলকূপ৷ আগের নলকূপগুলো থেকে লবণ পানি ওঠে৷ তাই সেই পানি পান করা যায় না৷ দু’বছর হলো নতুন বসানো এই নলকূপটির পানি সুপেয়৷ এই নলকূপের পানি নিতে প্রতিদিন কম করে হলেও ৩০ হাজার মানুষ ভিড় করেন৷ এই তথ্য জানান খুলনার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন৷ তিনি বলেন, দূর দুরান্ত থেকে মানুষ পানি নিতে আসেন৷ নৌকা যোগে কলসি বা ড্রামে করে তাঁরা পানি নিয়ে যান৷ প্রতি কলসি পানি সংগ্রহ করতে খরচ পড়ে যায় ১০ টাকার মতো৷ তাও সবাই পান না সেই পানি৷ খুলনার উপকূলবর্তী কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপে চলছে লবণ পানির আগ্রাসন৷ দু-একটি গভীর নলকূপে সুপেয় পানি পওয়া যায়৷ বাকি নলকূপে লবণ পানি ওঠে৷ পুকুরের পানিই ভরসা৷ তবে সব পুকুরের পানি পানযোগ্য নয়, নয় নিরাপদ৷ তারপরও ওই সব অঞ্চলে কিছু বড় বড় পুকুর আছে, যেখান থেকে মানুষ পানীয় জল সংগ্রহ করে৷ খুলানা দীঘলিয়া, রূপসা আর ফুলতার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক৷ হেদায়েত বলেন, আর্সেনিক, লবণ পানির আগ্রাসন আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট চলছে৷ খুলনা শহরে গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যায় না৷ এই মৌসুমে তাই খুলনা শহরে পানীয় জলের সংকট চলছে বলে জানান হেদায়েত৷ নদীতে জাল দিয়ে আমরা মাছ আহরণ করি, তা বিক্রি করে খাবার কিনি। তবে খাবার জোগাড় করতে আমাদের যতটুকু কষ্ট করতে হয়, তার থেকে বেশি কষ্ট করতে হয় খাওয়ার পানি সংগ্রহের জন্য। কথাগুলো বলছিলেন ৩০ বছর বয়সী নারী কুলসুম বেগম। তার বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের পাটজয়নগর গ্রামে। খুলনা শহর থেকে গ্রামটির দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশি। কুলসুম বেগম বলেন, ‘একটা বড় খাল পেরিয়ে দৈনিক পানি আনতে যাই। আমাদের বাড়ি থেকে মোটামুটি দুই কিলোমিটার দূরে জয়নগর মসজিদের কাছে একটা পুকুর আছে। সেখান থেকে আমার পানি আনতে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয়। এই পুকুর থেকে অনেকে ৩০ লিটারের বোতলে পানি নিয়ে ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করেন। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ৫০ থেকে ৭০ টাকা দিয়ে এক বোতল পানি কিনতে পারেন। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন কুলসুম। লবণাক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক দূষণের কারণে উপকূলের পাঁচ উপজেলায় নিরাপদ পানির এ সংকট। ২০০৯ সালে যখন ঘূর্ণিঝড় আইলা ওই অঞ্চলে আঘাত হানে, তখন প্রায় সব সুপেয় পানির পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে যায়। দুর্যোগের ১৪ বছর পরও সেই পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। ওই এলাকায় ‘মিঠাপুকুর’ নামে পরিচিত কয়েকটি পুকুর এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিই তাদের একমাত্র পানীয় জলের উৎস। স্থানীয় কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পঞ্চন কুমার মণ্ডল বলেন, গ্রামে পর্যাপ্ত মিষ্টি পানির পুকুর বা চাপকল নেই। তাই পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করা এই এলাকার মানুষের জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবার সুপেয় পানি পান করতে পারে না। এসব পরিবারের পানির কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার কখনো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। উপজেলার কালাবগি গ্রামে বসবাস করেন আশরাফুল আলম। পরিবারের জন্য সপ্তাহে দুই দিন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তার পানি আনতে যেতে হয় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে। আশরাফুল বলেন, ‘সুন্দরবনের ভেতরে সরকারের পক্ষ থেকে পুকুর খনন করে দেয়া হয়েছে। বন্য প্রাণীরা যে পুকুর থেকে পানি খায়, সেখান থেকে পানি নিয়ে এসে আমরাও খাই। শুধু কালাবগি বা জয়নগর গ্রাম নয়, পুরো দাকোপ উপজেলায় এমন সুপেয় পানির সংকট। সংকট রয়েছে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি শ্যামনগর উপজেলায়ও। বাংলাদেশের দক্ষিণের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ ১৬টি জেলার কোনোটাতেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নেই৷ সবখানেই লবণ পানির আগ্রাসন৷ কোথাও কোথাও আবার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক৷ পিরোজপুরের সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার বলেন, এই অঞ্চলের গ্রামের মানুষ পুকুরের পানির ওপরই নির্ভরশীল৷ তবে পুকুরগুলোর দীঘদিন সংস্কার হয় না৷ ফলে অনেক সময়ই এলাকাবাসীরা বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করেন৷ সিডরের পর কয়েকটি দাতা সংস্থার উদ্যোগে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে পানের উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এ জন্য পন্ড স্যান্ড ফিল্টার বা পিএসএফ বসানো হয় পুকুরে৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার অধিকাংশই আজ অকেজো হয়ে গেছে৷ আর যেগুলো সচল আছে তা থেকে পানি নিতে দূর দুরান্ত থেকে নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন৷ কেউ কেউ আবার বৃষ্টির পানি ধরে রাখছেন পানীয় জলের জন্য৷ ২০১৬ সালে নেপোটিজম অ্যান্ড নেগলেক্ট: দ্য ফেইলিং রেসপন্স টু আর্সেনিক ইন দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার অফ বাংলাদেশ’স রুরাল পুয়র- শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ জানায়, বাংলাদেশের প্রায় দু’কোটি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির ভেতর রয়েছে৷ এছাড়া প্রতিবছর ৪৩ হাজার মানুষ আর্সেনিকজনিত রোগে মারা যাচ্ছেন৷ দেশে খাওয়ার পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার ২০ বছর পরও বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যার প্রতিকারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে৷ এইচআরডাব্লিউ-র দাবি, ‘আর্সেনিক দূষণের শিকার অধিকাংশ মানুষের ত্বকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না৷ অথচ আর্সেনিকের কারণে অনেকক্ষেত্রেই ক্যানসার, হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ তাই অনেকে জানেনই না যে তাঁরা আর্সেনিক সমস্যায় আক্রান্ত৷ এদিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার৷ কিন্তু সরবরাহ করা হয় মাত্র ২০০ থেকে ২০৫ কোটি লিটার৷ অর্থৎ ৪৫ কোটি লিটার ঘাটতি থেকে যায়৷ ঢাকায় এক দশকে আড়াই মিটার হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে৷ এছাড়া ওয়াসার পানি পানযোগ্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ তাই পানীয় জল হিসেবে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বোতলজাত পানির চাহিদা বাড়ছে৷ ওয়াটার এইড-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের দু’কোটিরও বেশি মানুষ নিরপাদ পানি থেকে বঞ্চিত৷ তাদের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সি কমপক্ষে ৪,১০০ শিশু মারা যায় নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে৷ ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এক জরিপে দেশের উপকূলীয় মানুষের নিরাপদ খাওয়ার পানির দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই পাঁচ উপকূলীয় উপজেলার ৭৩ শতাংশ মানুষকে অনিরাপদ লবণাক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। ওই জরিপে দেখা গেছে, উপকূলীয় পাঁচ উপজেলার মানুষের প্রতি লিটার খাওয়ার পানিতে ১ হাজার ৪২৭ মিলিগ্রাম থেকে ২ হাজার ৪০৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা রয়েছে। প্রতি লিটারে ১০০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণাক্ততা থাকলে তা খাওয়ার অনুপযোগী বলে গণ্য করা হয়। এলাকাবাসী পানি সংগ্রহ করে এ রকম ৫২ শতাংশ পুকুর ও ৭৭ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। জরিপে গড়ে দাকোপ উপজেলার পুকুরগুলোতে ৬৫০ মিলিগ্রাম, কয়রায় ১ হাজার ২৪ মিলিগ্রাম, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫৮১ মিলিগ্রাম, আশাশুনিতে ১ হাজার ২০৩ মিলিগ্রাম এবং শ্যামনগরে ১ হাজার ১৮৪ মিলিগ্রাম লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া টিউবওয়েলের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা রয়েছে দাকোপে ২ হাজার ৪০৬ মিলিগ্রাম, কয়রায় ১ হাজার ৪৫৩ মিলিগ্রাম, পাইকগাছায় ১ হাজার ৫১০ মিলিগ্রাম, আশাশুনিতে ৯৯৮ মিলিগ্রাম ও শ্যামনগরে ১ হাজার ৬৮৩ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে বা শীতকালে শ্যামনগর উপজেলার টিউবওয়েলের প্রতি লিটার পানিতে ৬ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা পাওয়া গেছে, যা অনুমোদিত সীমার ছয় গুণের বেশি। পাঁচটি উপকূলীয় উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়নে ৬৬ হাজার ২৩৪টি পরিবারের ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৪ জনের মধ্যে ওপর ‘জেন্ডার-রেসপন্সিভ কোস্টাল অ্যাডাপটেশন (জিসিএ)’ শীর্ষক এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে বলা হয়, অনেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে দৈনিক দুই ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় করেন। কখনো কখনো টিউবওয়েল বা পুকুর থেকে পানি আনতে তাদের এক কিলোমিটারের বেশি হাঁটতে হয়। ৬৩ শতাংশ মানুষ সেই পানি পেতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। কারণ তাদের খাওয়ার পানির অন্য কোনো উৎস নেই। জরিপে আরও দেখা গেছে, ঢাকা শহরের একটি পরিবারকে পানি সংগ্রহের যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়, উপকূলে সমপরিমাণ সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য আরও বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়। খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী ও পরিবেশ নিয়ে প্রায় ২৫ বছর ধরে গবেষণা করছেন গৌরাঙ্গ নন্দী। তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। সেখানে লবণপানির চিংড়ি চাষের কারণে সুপেয় পানির পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার কারণেও অনেক পুকুর লোনাপানিতে ভরে গেছে। পরে তা সংস্কার করা হয়নি। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে রাখার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। সরকারের উচিত সেখানে নতুন নতুন পুকুর খনন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের উপকরণ বিতরণ করা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর অধিদপ্তরের খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বাহার উদ্দীন মৃধা বলেন, ‘লবণাক্ত এলাকায় পানির সংকট মোকাবিলায় সব সময় আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা চলতি বছরেও বেশ কিছু পুকুর সংস্কার করেছি। অনেক পরিবারের মাঝে পানির ট্যাংক বিতরণ করেছি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১ ডিসেম্বর ২৩/ এসবি

স্পিনারদের ঘূর্ণিতে জয়ের পথে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক:

২ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে জয়ের হাতছানি দেখা দিচ্ছে বাংলাদেশকে। স্পিনারদের তোপের মুখে পড়ে ৭ উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। শুরু থেকেই কিউইদের চেপে ধরেছেন তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাইম হাসান। তাইজুল তুলে নিয়েছেন ৪টি উইকেট। মেহেদি আর নাইম শিকার করেছেন ১টি করে উইকেট। সবশেষ কাইল জেমিসনকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তাইজুল। ২৮ বলে ৮ রান করেন এই কিউই লোয়ার অর্ডার। এর আগে গ্লেন ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করেছেন ডানহাতি অফস্পিনার নাইম। এই কিউই ব্যাটার করেছেন ২৬ বলে ১২ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৩ উইকেট। অপরদিকে কিউইদের করতে হবে ২৩০ রান। শুরুতেই ৩ উইকেট হারানোর পর দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওপেনার ডেভন কনওয়ে। দেখেশুনে খেলতে থাকেন এই কিউই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত তাকেও পিচে থাকতে দিলেন না অফস্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৭৬ বলে ২২ করা এই ব্যাটারকে শাহাদাত হোসেনের ক্যাচ বানান বাঁহাতি স্পিনার। এরপর উইকেটরক্ষক ব্যাটার টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরে ফেরত পাঠান তাইজুল। ১৬ বলে ৬ রান করে শর্টলেগে নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই কিউই ব্যাটার। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিউইদের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১১৩ রান। ৪০ রান নিয়ে খেলছেন ড্যারেল মিচেল, অপরপ্রান্তে ০ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন ইশ সোধি। এর আগে একে একে সাজঘরে ফিরেছেন ৩ কিউই টপঅর্ডার। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই টম ল্যাথামকে (৬ বলে ০) সাজঘরে ফেরত পাঠান শরিফুল ইসলাম। এই বাঁহাতি পেসারের ফুল লেন্থের বলে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ল্যাথাম। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ দলের কাঁটা হয়ে ব্যাট করছিলেন কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে উইলিয়ামসনকে সেটি করতে দিলেন না তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের শুরুর দিকেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে এই কিউই ব্যাটারকে আউট করেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। ২৪ বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরত যান উইলিয়ামসন। হেনরি নিকোলসে সাজঘরের পথ দেখান অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ২ রানে করে নাইম হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই কিউই ব্যাটার। আগে ২ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ দিনে ৭ উইকেটে ১২৬ রান করেছে বাংলাদেশ। এর আগে গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ২১২ রান করেছিল টাইগাররা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হাঁকিয়েছেন রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি। ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের মোট দাঁড়িয়েছে ৩৩৮ রান। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩১৭ রানে গিয়ে থামে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। ম্যাচের তৃতীয় দিনের শুরুর দিকে টাইগারদের থেকে ৭ রান এগিয়ে ইনিংস শেষ করে সফরকারীরা। সেই লিড পার হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ৩৩৮ রানের সুবাদে ৩৩১ রানের লিড পায় কিউইরা। ম্যাচের চতুর্থ দিনটা যেমন হওয়ার কথা তেমন ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ব্যাট করতে নেমে যেন তাড়াহুড়ো করেই আউট হয়েছেন ব্যাটাররা। চতুর্থ দিনে ৯৬ রান নিতেই চলে গেছে ৪ উইকেট। অথচ তৃতীয় দিনের খেলা দেখে মনে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে রানেরপাহাড় দাঁড় করাবে বাংলাদেশ। সেটি সম্ভবত আর হচ্ছে না। তবে লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার আগেই লড়াই করার মতো পুঁজি পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। প্রথম সেশন শেষ করে ৭ উইকেটে ৩০১ রানের লিড দিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় টাইগাররা।দিনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছেন শান্ত। গতকালের অপরাজিত ১০৪ রানের সঙ্গে আজ মাঠে নেমে মাত্র ১ রান যোগ করতে পেরেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার শান্ত। দিনের প্রথম বলে ১০৫ রানে খেলা শান্তকে ফিরিয়েছেন কিউই পেসার টিম সাউদি। উইকেটরক্ষক ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার কিছুক্ষণ পরেই উইকেট বিলিয়ে দিলেন শাহাদাতও। ইশ সোধির বলে লেগবিফোর উইকেটের (এলবিডব্লিউ) ফাঁদে পড়েন শাহাদাত হোসেন। ১৯ বলে ১৮ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। গতকালের ৪৩ রানকে বাড়িয়ে ফিফটি হাঁকিয়েছেন মিস্টার ডিফেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। ১১৬ বলে ৬৭ রান করে অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন এই ডানহাতি ব্যাটার। মেহেদি হাসান মিরাজ ৭৬ বলে ফিফটি (৫০) করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। নুরুল হাসান সোহান করেছেন ১০ রান। অবশেষে ৩৩৮ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। ২৬ রানে ছিল না ২ উইকেট। ৩০ বলে ১৭ রান করে অ্যাজাজ প্যাটেলের অনেক বেশি টার্ন করা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ওপেনার জাকির হোসেন। দুর্ভাগ্যজনক রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। সাউদির বলে ড্রাইভ খেলেন শান্ত, বল বোলারের হাত স্পর্শ করে ভেঙে যায় ননস্ট্রাইকের স্টাম্প। সেখান থেকে দলীয় সংগ্রহ ১১১ তে নিয়ে যায় চা-বিরতিতে যান শান্ত এবং মুমিনুল। অপ্রত্যাশিত রানআউটের মাধ্যমে শতরানের (৯০) কাছাকাছি এসে ভেঙে যায় শান্ত-মুমিনুলের জুটি। ভুল বোঝাবুঝিতে ৬৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৪০ রান করে সাজঘরে ফেরত যান মুমিনুল। দুই ওপেনারের দ্রুত বিদায়ের পর দলের হাল ধরেছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। অভিজ্ঞ মুমিনুল ৪০ রানে ফিরলেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৯২ বলে সেঞ্চুুরি তুলে নিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শতক হাঁকাতে শান্ত খেলেছেন ৯টি চারের মার।

আলোকিত প্রতিদিন/ ০১ ডিসেম্বর ২৩/মওম