আজ মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২৪ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 58

ফাঁসির দড়ি ছাড়া হাসিনার দেশে ফেরার কোনো সুযোগ নেই : এনসিপি নেতা মাহিন

আলোকিত ডেস্ক:

ফাঁসির দড়ি ছাড়া হাসিনার দেশে ফেরার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার।

তিনি বলেন, যারা মনে করছেন শেখ হাসিনা দ্রুতই দেশে ফিরবে, তাদের জন্য বলতে চাই- শেখ হাসিনা শুধু একটি কারণেই বাংলাদেশে ফিরতে পারেন তা হলো ফাঁসির দড়ি গলায় ঝোলাতে।

২ মে শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

মাহিন বলেন, যাদের হাতে হাজারো সাধারণ মানুষের রক্ত, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ গণহত্যা এবং স্বৈরশাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার বিচার এখন সময়ের দাবি।

তিনি আরও বলেন, যেদিন শেখ হাসিনা আমাদের ‘রাজাকার’বলেছিলেন, সেদিন থেকেই অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল। জাতিকে অপমান করার পরিণতি ইতিহাসে কখনো ভালো হয়নি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সংবিধানের নামে যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে মুছে ফেলা হয়, তবে মানবিক অধিকার বলে কিছু থাকবে না।

মাহিন সরকার ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম ইলেকট্রনিক বিপ্লব’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বিপ্লব কেবল বাংলাদেশের নয়, কাশ্মীর এবং ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষদের প্রতিও এক ধরনের আশার বার্তা।

অতীত ইতিহাসের দৃষ্টান্ত টেনে তিনি বলেন, ইতিহাস বলে—ইব্রাহিম (আ.) এর কাছে নমরুদের, মুসা (আ.)-এর কাছে ফেরাউনের পতন হয়েছিল। এবার ছাত্র-জনতার হাতেই পতন হয়েছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার। একই দিন বেলা ৩টায় বায়তুল মোকাররম গেটে আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে এনসিপি। দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, গত জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার ওপর ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং খুনি হাসিনা এবং তার দোসরদের বিচার অবশ্যই হতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রায় দিয়েছেন—আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। দলটির নেতাদের মাঠে নামতে দেওয়া হবে না, প্রতিহত করা হবে।

বিক্ষোভে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হন এনসিপির নেতাকর্মীরা। উত্তরের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা থেকে বিক্ষোভকারীরা এতে যোগদান করেন।

আলোকিত প্রতিদিন/২মে ২০২৫/মওম

জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২ মে শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আবারও বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের আদালতের মুখোমুখি করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে। রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন ও পরিবর্তনে জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। রাজনীতির ময়দানে আমরা তাদের স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি দেশের স্বার্থের প্রশ্নে বাংলাদেশের পক্ষের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য এক ও অভিন্ন। কী সেটি? সেটি হচ্ছে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং অবশ্যই জনগণের কল্যাণ সাধন। তবে যে রাজনৈতিক দলটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে, গণতন্ত্র হারিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনের জন্ম দিয়েছিল, সংবিধান, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল, গুম-খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশকে একটি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের জনগণ মেনে নেবেনা।

তিনি বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে পলাতক স্বৈরাচার জনগণের ভোট ছাড়াই তিনবার অবৈধ সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আজ জানতে চায় সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের আগামী দিনের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা নিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে যারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন তাদের আমি বলতে চাই, লুটপাট এবং দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা হাতে নিয়ে সারা দেশে স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় নির্বাচন পলাতক স্বৈরাচারের জন্য পুনর্বাসিত হওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ। যারা বলেছেন তারা হয়ত এই বিষয়টি বিবেচনা করেননি।

তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণের স্বাধীনতার বার্তা উপেক্ষা করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার দীর্ঘ দেড় দশক স্বাধীন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার দুঃসাহস না দেখায়, পরাজিত তাঁবেদার অপশক্তি এবং তাদের দোসররা আর যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেটিই হোক বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত।

তিনি বলেন, জনগণকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা না গেলে শেষ পর্যন্ত কোনো সংস্কারই হয়ত টেকসই হবে না। এ কারণেই রাষ্ট্র-রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবসময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রীতি। অথচ আমরা খেয়াল করছি গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে দেশে এমন একটি আবহ তৈরির প্রচেষ্টা চলছে যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানোই যেন এক অপরাধ। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অবজ্ঞা সূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকে আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য অপমানজনক। রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে।

তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছে। এই নিয়েও জনগণের মনে ধীরে ধীরে প্রশ্ন বেড়ে চলেছে।

এসময় আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ এবি পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা।

আলোকিত প্রতিদিন/২মে ২০২৫/মওম

ভারতে স্কুলের খাবারে মরা সাপ, অসুস্থ শতাধিক

ভারতের একটি বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল কর্মসূচির খাবার গ্রহণ করে শতাধিক শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা। তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে, খাবারের মধ্যে মরা সাপ থাকার পরও তা সরবরাহ করা হয়েছে। এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ।

জাতীয় মানবাধিকার পরিষদের (ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বা এনএইচআরসি) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিহার অঙ্গরাজ্যে মোকামা শহরের একটি বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। অন্তত পাঁচশ শিশুকে ওই খাবার সরবরাহ করা হয়। সরবরাহ করার আগেই খাবারের মধ্যে মরা সাপ পেলেও তা সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে বাবুর্চির বিরুদ্ধে।

ওই খাবার গ্রহণের পর অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানিয়ে একটি সড়ক অবরোধ করেন। এনএইচআরসি জানিয়েছে,বিষয়বস্তু যদি সত্য হয়, তাহলে এটি শিক্ষার্থীদের মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন। বিহারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটি বিশদ রিপোর্ট চেয়েছে এনএইচআরসি, যাতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কেও তথ্য থাকতে হবে।

ভারতের মাদ্রাজে (বর্তমান চেন্নাই) ১৯২৫ সালে মিড-ডে মিল কর্মসূচির সূচনা। দেশের দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা নিবারণের উদ্দেশে সরকারি উদ্যোগে এই কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়ে আসছে। তবে খাদ্যের পুষ্টিমান নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

বিহার অঙ্গরাজ্যেই ২০১৩ সালে মিড-ডে মিলের খাদ্যে বিষক্রিয়ায় ২৩ জন স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, খাবার পরীক্ষা করে তাতে মারাত্মক বিষাক্ত কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

আলোকিত প্রতিদিন/২মে ২০২৫/মওম

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাত করে ব্যাংক কর্মকর্তা কা*রাগারে!

আলোকিত ডেস্ক : রেমিট্যান্সের অর্থ জালিয়াতি মামলায় আফসানা শাহিন মুন্নী (৩৬) নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। পরে তাকে খুলনার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আফসানা শাহিন মুন্নী সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখার সাবেক সিনিয়র অফিসার। তিনি মহানগরীর ইস্পাহানি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার মোহাম্মদ সানোয়ার হোসাইন মাসুম।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল আল হাদিস বাট্রি নামক এক মালয়েশিয়াপ্রবাসীর অ্যাকাউন্টে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার স্ত্রী বাদী হয়ে খুলনা সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আফসানা শাহিন মুন্নীসহ ৮-৯ জনকে আসামি করা হয়।

ওসি হাওলাদার মোহাম্ম দ সানোয়ার হোসাইন মাসুম বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা জুয়েল রানার নেতৃত্বে একটি দল ঢাকা থেকে মুন্নীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে জানা যায়, বাদীর স্বামী আল হাদিস বাট্রি মালয়েশিয়ায় প্রবাসজীবন যাপন করেন। তিনি প্রবাসে থেকেই ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর অনলাইনে নিজ নামে খুলনা মহানগরীর আপার যশোর রোডের সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখায় একটি অ্যাকাউন্ট খোলেন।

পরে ওই অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময় মোট ১০ লাখ ২ হাজার টাকা জমা করা হয়। তাঁর স্বামী চলতি বছরের ১৮ মার্চ দেশে ফিরে অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তাঁর অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩ লাখ ২ হাজার টাকা রয়েছে এবং বাকি ৭ লাখ টাকা নেই বলে জানান।

তাৎক্ষণিক তিনি ব্যাংক স্টেটমেন্ট বের করে দেখতে পান, গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আরটিজিএসের মাধ্যমে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে আসামিদের একজনের ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৭ লাখ টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, আরটিজিএসের মাধ্যমে অর্থ ট্রান্সফার করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের দাতা বা হিসাবধারীর উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু তাঁর স্বামী তৎকালীন সময় বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এ সুযোগে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া লোক সাজিয়ে ও কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো সমাধান দেয়নি আমাদের।

খুলনা শাখা সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ম্যানেজার হাফিজ আহমেদ বলেন, তিনি নতুন যোগদান করায় বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন বলে তিনি জানান।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি   

৩ বিভাগে বৃষ্টির আভাস, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে

এছাড়া এ সময়ের শেষে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।

আলোকিত প্রতিদিন/২মে ২০২৫/মওম

৫ মে দেশে ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

আলোকিত প্রতিবেদক:

চার মাসের চিকিৎসা এবং বিশ্রাম শেষে আগামী ৫ মে সোমবার দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনের চিকিৎসা এবং পারিবারিক আবহে কাটানো এই সময়ের পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলেই জানিয়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আগামী ৫ মে দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার।

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ম্যাডামকে আগামী ৫ মে লন্ডন থেকে দেশে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ১ মে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি এসব কথা জানান।আব্দুস সাত্তার বলেন, আসলে ম্যাডামকে নিয়ে আসতে হবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে। সেটা ঠিক করার বিষয় আছে। আবার ম্যাডামের শারীরিক অবস্থার বিষয়টি আছে। ফলে সবকিছু বিবেচনা নিয়ে ম্যাডাম কবে দেশে ফিরবেন এটা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। তবে, ৫ মে ধরে নিয়ে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আলোকিত প্রতিদিন/২মে ২০২৫/মওম

নড়াইলে নিষিদ্ধঘোষিত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গ্রেফতার

জাহিদুল হক রনি,নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা সদর এলাকা থেকে গত জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ৪ আগষ্ট লোহাগড়ায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে সংগঠিত হামলার ঘটনায় জড়িত  সন্দেহে সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সংগঠন নড়াইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিম (২৮)-কে আটক করেছে লোহাগড়া থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১ আগষ্ট) বিকালে লোহাগড়া উপজেলা সদর  লক্ষ্মীপাশার ডাকবাংলো এলাকা থেকে এসআই আব্দুস সালাম চঞ্চল শাহরিয়ার মিমকে গ্রেফতার করে।তিনি  নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামের সেলিম মন্ডলের পুত্র।
মুঠোফোনে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে লোহাগড়া থানার এসআই আব্দুস সালাম বলেন, ‘গোপন সংবাদ মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নড়াইল জেলার সাবেক সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিম উপজেলার ডাকবাংলো মোড়ে অবস্থান করছে জানতে পেরে,লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্যারের তাৎক্ষণিক নির্দেশে আমি তার অবস্থানে পৌঁছে আটক করতে সক্ষম হই এবং সাথেসাথেই ওসি স্যারকে অবহিত করলে স্যার দ্রুতসময়ের মধ্যে অপর একটি দল পাঠালে তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৪ আগষ্টের সময় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের লক্ষ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে লোহাগড়ার সিএন্ডবি চৌরাস্তায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র ও বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়।পরবর্তীতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লোহাগড়া থানায় বিএনপির নেতাকর্মীবৃন্দ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পৃথক তিনটি নাশকতার মামলায় দায়ের করে।ঐ মামলার বাদীরা সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিমকে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত অন্যতম সন্দেহভাজন হিসাবে দাবি করে আসছে।
এ বিষয়ে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আশিকুর রহমান বলেন,গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চঞ্চল শাহরিয়ার মিমকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। লোহাগড়া থানায় দায়ের হওয়া পৃথক তিনটি নাশকতার মামলা অন্যতম সন্দেহভাজনদের একজন। তার বিরুদ্ধে অন্য কোন অভিযোগ আছে কিনা সেগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়াগুলো শেষ করে তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি   

সুখবর দিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী

বিনোদন ডেস্ক : জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী। এই অভিনেত্রীর ২য় সিনেমা ‘প্রিয় মালতী’। সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত শঙ্খ দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘প্রিয় মালতী’ সিনেমাটি দেশে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবেও প্রশংসিত হয়েছে। সম্প্রতি সিনেমাটি  লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবের অষ্টম আসরে দর্শকসেরা পুরস্কার অর্জন করেছে এই ছবি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সে সুখবর জানান দিয়েছেন এই অভিনেত্রী। এমন খবর পাওয়ার পর উচ্ছ্বাসিত মেহজাবীন। অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মেহজাবীন বলেন, ‘অনেক দুঃসময় পেরিয়ে আজ এখানে পৌঁছেছি। রাজীবের (নির্মাতা আদনান আল রাজীব) সঙ্গে সাফল্য উদ্‌যাপন করছি। এ অনুভূতি সত্যি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন’ আমার জন্য।

‘প্রিয় মালতী’ সিনেমাটি এর আগে ‘কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ভারতের ‘গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ অফিসিয়ালি প্রদর্শিত হয়।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি   

‘বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম’: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের সন্তানের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ!

আলোকিত ডেস্ক : সীমান্ত ক্রসিংটির নাম আত্তারি-ওয়াঘা। একদিকে ভারতের আত্তারি গ্রাম, অন্যদিকে পাকিস্তানের ওয়াঘা। এই সীমান্ত পথ বহু বছর ধরে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণের একটি গেটওয়ে ছিল। তবে আজ সেই আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত বিভাজনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশ তাদের নাগরিকদের সীমান্তের ওপারের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। হাজারো পরিবারের ওপর এর প্রভাব পড়ছে, যাদের কিছু সদস্য ভারতের, আবার কিছু সদস্য পাকিস্তানের।

ভারত সরকার গত মঙ্গলবারের মধ্যে প্রায় সব পাকিস্তানি নাগরিককে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ৯ মাসের ছেলে আজলানকে নিয়ে সায়রা ও ফারহান নয়াদিল্লি থেকে সারা রাত ভ্রমণ করে সীমান্ত ক্রসিংয়ে পৌঁছান। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

‘এক নির্বাসিত জীবন’

গত ২২ এপ্রিল অস্ত্রধারীরা পেহেলগামের এক পর্যটন শহরে গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে। তাঁদের বেশির ভাগই পর্যটক। ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ইসলামাবাদ তা প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

ঘটনার জেরে দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কয়েক দিন ধরেই সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া বহু বছরের পুরোনো সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করেছে। পাকিস্তানও অন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে এনেছে এবং কার্যত একে অপরের বেশির ভাগ নাগরিককেই বহিষ্কার করেছে। আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত এখন পুরোপুরি বন্ধ। সেখান দিয়ে মানুষের পারাপার ও পণ্য পরিবহন বন্ধ আছে।

২২ এপ্রিলের পর এ পর্যন্ত আনুমানিক ৭৫০ জন পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে ফিরে গেছেন। আর পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরেছেন প্রায় ১ হাজার ভারতীয় নাগরিক।

এ সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের মধ্যে আছেন দুই দশক পর ভারতে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা পাকিস্তানি নারী, ভারতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা দুই বোন—যাঁদের অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়েই ফিরতে হয়েছে এবং ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বয়স্ক পাকিস্তানি রোগীরাও।

৪৮ বছর বয়সী হালিমা বেগমও এ তালিকায় আছেন। ওডিশা থেকে দুই দিন ধরে দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ (প্রায় ১ হাজার ২৫০ মাইল) পাড়ি দিয়ে আত্তারি সীমান্তে পৌঁছেছেন তিনি।

সীমান্তের কাছে একটি ট্যাক্সিতে বেশ কিছু ব্যাগ নিয়ে বসে ছিলেন হালিমা। তিনি বলেন, ‘আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি ওনাদের বলেছিলাম, আমি তো এখানে এমনি এমনি আসিনি—আমার বিয়ে হয়েছে ভারতে। ভারত সরকার যে আমার এত বছরের গড়ে তোলা জীবনকে এক ঝটকায় ছিঁড়ে ফেলছে এবং আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, তা কি ন্যায্য হচ্ছে?’

২৫ বছর ভারতে কাটানো হালিমা বলেন, দেশটা তাঁরও দেশ হয়ে গেছে।

হালিমার সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই ছেলে—২২ বছর বয়সী মুসাইব আহমেদ ও ১৬ বছরের যুবায়ের আহমেদ। আট বছর আগে তাঁদের বাবা মারা গেছেন। দুই ভাই মিলে ঠিক করেছেন, যুবায়ের মায়ের সঙ্গে সীমান্ত পার হবে, যেন সে মায়ের দেখাশোনা করতে পারে।

দুই ছেলের পাসপোর্টই নীল (ভারতীয়)। আর হালিমার পাসপোর্ট সবুজ (পাকিস্তানি)। মুসাইব ও যুবায়ের শুরুতে সীমান্তরক্ষীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন, এমনকি শেষে তর্কেও জড়ান। কিন্তু কোনো কিছুতে কাজ হয়নি।

কাঁপা গলায় মুসাইব বলেন, ‘মা কখনো একা কোথাও যাননি। আমি জানি না, উনি কীভাবে এই ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে করাচি পৌঁছাবেন।’

করাচিতে হালিমার যাওয়ার মতো কোনো ঘর নেই। তাঁর মা–বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তাঁর একমাত্র ভাই নিজের ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে মাত্র দুটি কক্ষে থাকেন।

চোখ মুছতে মুছতে হালিমা বলেন, ‘হাজারটা প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়। কিন্তু একটারও উত্তর নেই। আমি শুধু আল্লাহর কাছে দোয়া করি—আমার সন্তানদের যেন রক্ষা করেন। খুব শিগগির আবার এক হব আমরা।’

রাতারাতি টানা সীমান্তে ভাগ হয়ে যাওয়া মানুষের গল্প নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘মিডনাইটস বর্ডারস’ বইটি। এর লেখিকা সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশজুড়ে এমন অসংখ্য হৃদয়বিদারক কাহিনি ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

সুচিত্রার মতে, ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকে যেসব মুসলিম নারী ভারত কিংবা পাকিস্তানে জন্ম নিয়ে অন্য দেশের পুরুষদের বিয়ে করে সেদিকে চলে গেছেন, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে যখন তাঁদের জোর করে ফেরত পাঠানো হয়, তখন তাঁদের অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়তে হয়।

‘(বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর) আপনি এমন এক জায়গায় বন্দী হয়ে পড়েন, যা আর আপনার ঘর নয়—অথবা এমন একটা ঘর, যেটাকে আপনি চিনতেও পারেন না। নির্বাসন হয়ে ওঠে আপনার জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা’, বলেন সুচিত্রা।

সায়রা ও ফারহানের মতো করে বিগত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া বহু পরিবার এ আশায় বুক বেঁধে থেকেছে যে অচিরেই তারা আবার মিলিত হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবে তা ঘটেনি।

সুচিত্রা বিজয়ন বলেন, ‘সবচেয়ে বেদনাদায়ক যে কথা বারবার শুনবেন, সেটা হলো—অনেকে ভেবেছিলেন যে তাঁরা সাময়িকভাবে যাচ্ছেন।’

‘শুধু একজন মা-ই যন্ত্রণা বুঝতে পারেন’

আবারও আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্তে ফিরে যাওয়া যাক। সেখানে ফারহান তাঁর ছেলের ফিডারটি উড়োজাহাজের মতো করে বানিয়ে খেলা করার চেষ্টা করছিলেন। ৯ মাসের ছেলে আজলানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে শিশুটি বিরক্ত হয়ে উঠছিল। ফারহানের বোন নুরিন বলেন, ‘সে ফিডার পছন্দ করে না, সে তার মায়ের স্পর্শ চেনে।’

নুরিন ও পরিবারের অন্য সদস্যরাও সায়রা, ফারহান ও আজলানের সঙ্গে সীমান্তে এসেছিলেন।

নুরিন বলেন, ‘দুটি বড় দেশ আর শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আর আমাদের নিষ্পাপ শিশুরা আটকা পড়ে আছে। ধিক তাদের। শুধু একজন মা-ই জানেন, তাঁর ৯ মাসের সন্তানকে ফেলে আসার কষ্ট কী।’

হঠাৎ ফারহানের চোখে একঝলক আশা দেখা গেল। একজন নিরাপত্তারক্ষী তাঁর নাম ধরে ডাকছিলেন। নেভি ব্লু রঙের কটন টি-শার্ট পরা ফারহান দৌড়ে গেলেন, হাতে আজলানের নীল পাসপোর্ট। দৌড়ে যাওয়ার সময় হাসি দিয়ে ফারহান বলেন, ‘অবশেষে, আমাদের পরিবারের ওপর দয়া দেখানো হয়েছে।’ ফারহান ধারণা করেছিলেন, হয়তো এবার সায়রা ও আজলান একসঙ্গে সীমান্ত পার হতে পারবে।

কিন্তু এক ঘণ্টা পর, ফারহান ফিরে এলেন। তাঁর চোখে অশ্রু। ছেলে আজলান তখনো তাঁর কোলে, গরমে সে বিরক্ত।

ফারহান বলেন, ‘সীমান্ত পার হওয়ার সময় ও (সায়রা) অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। কর্মকর্তারা আমাকে বললেন, ও জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর কান্না থামাতে পারছিল না।’

কাঁদতে কাঁদতে ফারহান বলেন, সায়রাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার আগে জীবন কতটাই না ভিন্ন ছিল।

ফারহান দিল্লির শতবর্ষ পুরোনো ওল্ড দিল্লির একজন ইলেকট্রিশিয়ান। সায়রা করাচি থেকে স্নাতক করেছেন। ফারহানের বোন নুরিন বলেন, তাঁর ভাই-ভাবি এমন এক দম্পতি, যাদের কোনো কিছু আলাদা করতে পারত না।

ফারহান বলেন, বিয়ে করে সায়রা দিল্লিতে আসার পর তাঁর জীবন, দুনিয়া, সবকিছু বদলে গিয়েছিল।

আর এখন সবকিছু আবারও বদলে গেছে। এমনভাবে সবকিছু বদলেছে, যা তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। আজলানকে কোলে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ফারহান। পাশে তাঁর মা আয়েশা বেগম চুপচাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি পা ভাঙা অবস্থায়ও সীমান্তে এসেছিলেন।

কাম করে ভাত খাই, দিবস দিয়ে কী করমো!

আলোকিত ডেস্ক : মে দিবস এলে দিনটিতে শুধু দিবসই পালন হয়, মজুরি বাড়ে না। এমন অভিযোগ দিনমজুরদের। তাঁরা বলছেন, দিন–রাত সমানতালে কাজ করে যেমন ফুরসত মেলে না, ঠিক তেমনি বাড়ে না তাঁদের মজুরি। দ্রব্যমূল্য অনুযায়ী ন্যায্য মজুরি না পেয়ে তাঁদের সংসারে টানাটানি। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন আয়োজনে পালন করছেন। তবে শ্রমিকদের গা থেকে ছোড়া ঘামের ন্যায্যমূল্য দিতে কেউ রাজি নন। সভা-সেমিনারে বক্তব্যে ন্যায্য মজুরির কথা গলা ফেঁটে বললেও কোনো দিন বাস্তবায়ন হয়নি। ন্যায্য মজুরি মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নারী-পুরুষ উভয়। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের শ্রমের মূল্য আরও অনেক কম।

আজ মে দিবসেও ইট ভাঙা কাজ করছেন ৫০ বছর বয়সী খুশি বেওয়া। স্বামী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন সদস্যের সংসার। ২০ বছর ধরে তিনি নারী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কাজ করলে দিনে তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা আয় করেন। তাঁর আয়ের টাকা দিয়েই সংসার চলে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধা জেলা শহরের গোডাউন এলাকায় ইট ভাঙার কাজ করতে দেখা গেছে তাঁকে। মে দিবস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘হামরা দিবস দিয়ে কী করমো। কাম করলে ভাত জোটে, না করলে উপোস থাকতে হয়।’

অন্যদিকে ১৫ বছরের খায়রুল ইসলাম রিকশা চালাচ্ছেন। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার অদূরে প্রধানের বাজার এলাকার হাজারি গ্রামে। বাবা আয়নাল হক একজন কৃষিশ্রমিক। ছোট দুই ভাই ও এক বোনকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের সংসার। বাবার সামন্য আয়ে সংসার চলে না। সংসারের বড় ছেলে সে। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে খায়রুল ইসলাম রিকশা চালায়। জেলা শহরেই রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে। মাসের ৩০ দিনই রিকশা চালাতে হয় তাকে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপাড়া করছে সে। খায়রুল বলে, ‘ছোট ভাই–বোন আছে, বাবার আয় দিয়ে সংসার চলে না। এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতাম। কিন্তু টাকার অভাবে বাকি লেখাপড়া করতে পারি নাই। পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে রিকশা চালাতে হচ্ছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে। দায়িত্ব আমার বেশি। ছোট ভাইরা তো আর কাজ করতে পারে না। কিস্তির ওপর টাকা নিয়ে রিকশা কিনেছি। প্রায় এক বছর থেকে রিকশা চালাই।’

এই উপজেলার ফারাজিপাড়ার রিফাদ মিয়া (১৪)। চার বছর ধরে ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করে। গ্রামের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। পরিবারে অভাবে পরে আর স্কুলে ভর্তি হয়নি। ঝালাইসহ রডের যাবতীয় কাজ করে সে। রিফাদ জানায়, সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করে সে।

খায়রুল ও রিফাদের মতো গাইবান্ধায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার বলে বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। তবে গাইবান্ধা জেলায় কী পরিমাণ শিশু শ্রমিক রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে নেই।

একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কী আর করি। বেশি লেখাপড়া করানো আমাদের পক্ষে সম্ভাব না। তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ছেলেটাকে পাঠিয়েছি। বড় হয়ে কিছু একটা করে খেতে পারবে।’

শহরের গোরস্তান মোড়ে এলাকায় মোটরসাইকেল গ্যারেজে কাজ করে কবির হাসান (১৩)। বাড়ি শহরের পুলিশ লাইনস এলাকায়। কবির জানায়, ‘এক বছর লেখাপড়া করছি। পরে আর স্কুলে যাই নাই। পাঁচ বছর ধরে গ্যারেজে কাজ করছি। মোটরসাইকেলের অনেক কাজ শিখেছি। গ্যারেজে দৈনিক ২০০ টাকা পাই। এটি পরিবারের কাজে দেই।’

একই মার্কেটের ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করছে রাজিব মিয়া (১৬)। বাড়ি পুটিমারি এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাজ করে সে। তার কাজটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মেশিন দিয়ে ঝালাইয়ের স্থানে পরিষ্কার করতে হয় তাকে। সে জন্যে সে অন্য শ্রমিকের চেয়ে বেশি টাকা পায়। তাই সে খোলা হাতে এ কাজ করে।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা মো. মেহেদী বলেন, শিশুশ্রম বন্ধে জেলায় কোনো প্রতিষ্ঠানেরই তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। পারিবারিক অস্বছলতায় অল্পবয়সী এসব শিশু অমানবিক পরিশ্রম করছে। এতে জেলায় ক্রমেই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব শিশু বিভিন্ন গ্যারেজ, ওয়েল্ডিং মেশিন, লেদ মেশিন ও ঝালাইয়ের দোকানে কাজ করছে। ফলে শিক্ষার আলো থেকে তারা দূরে সরে যাচ্ছে এবং ঝুকিপূর্ণ পেশায় যুক্ত হচ্ছে। একটি শিশু শ্রমিক গড়ে ১০-১১ ঘণ্টা কাজ করছে। শিশুশ্রম বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। শিশুশ্রম কমানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলোকিত প্রতিদিন/এপি