নাজমুল হাসান:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এর দাবিতে অর্ধবেলা কর্মবিরতি পালন করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ এনে পুলিশ দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রাখে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
২৬ মার্চ বুধবার কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক কোম্পানিগঞ্জ বাস ট্রার্মিনাল এলাকায় সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী তিশা ও গোমতী, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক, হানিফ, বিআরটিসি, কুমিল্লা ও বি-বাড়িয়াগামী বাস রয়েল সুপার, ফারজানা, সুগন্ধা, ফারহানা বাস সহ সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করে কুমিল্লার জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন কোম্পানীগঞ্জ শাখা। কোম্পানিগঞ্জ বাস টার্মিনাল হতে কুমিল্লা সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে আন্তঃজেলার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ বাস না চলার কারণ খুজতে গিয়ে জানা যায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় মুরাদনগর উপজেলার কিছু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা সিরিয়ালের বাহিরে সিএনজি নিতে চাইলে রাস্তায় স্থানীয় শ্রমিক ফেডারেশন এর নিজস্ব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এক লাইনম্যান বাঁধা প্রদান করেন এবং বলেন এখান থেকে সিএনজি নিতে চাইলে সিরিয়াল ঠিক রেখে সিরিয়াল টুকেন অনুযায়ী নিতে হবে। তখন ঐ লাইনম্যান ছাত্র সমন্বয়ক নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় উভয় তর্কে জড়ায়। একপর্যায়ে মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক সহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া কিছু ছাত্র এসে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা শ্রমিক আবুল কালামকে টুকেনের বিপরীতে চাঁদাবাজ উপাধি দিয়ে তাকে পুলিশে দেয়।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও কোম্পানিগঞ্জ শ্রমিক ফেডারেশন এর সভাপতি হাজী মোঃ ইদ্রিস বলেন, আমরা শ্রমিক ফেডারেশন এর পক্ষ থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাস স্টেশন এলাকায় যানযট নিরসনে মুরাদনগর উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ বাস-মালিক সমিতি বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন নিয়ন্ত্রন ও সিরিয়াল অনুযায়ী রাখার জন্য কিছু শ্রমিক নিয়োগ দেই। যার খরচ বাস মালিক সমিতি বহন করে থাকেন। তারা সিরিয়াল অনুযায়ী বাস, সিএনজি, অটোরিকশা গুলো কে চলাচলে সহযোগিতা করে ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সে সুবাদে গত সোমবার আমাদের মুরাদনগর উপজেলা কিছু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র এসে সিরিয়ালের বাহিরে সিএনজি নিতে চাইলে রাস্তায় স্থানীয় শ্রমিক ফেডারেশন এর নিজস্ব ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এক শ্রমিক তাদের বাঁধা প্রদান করেন এবং তাদের মধ্যে একজন পরিচয় দেন যে তিনি সমন্বয়ক। এই নিয়ে বাঁধা প্রদান করেলে তাদের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র এসে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা শ্রমিক এবং পরিবহন মালিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজ উপাধি দিয়ে বাস টার্মিনালে মিছিল বের করে। পরবর্তীতে শ্রমিক আবুল কালামের মুক্তির দাবিতে মুরাদনগর থানার সামনে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে সমন্বয়ক ও মালিক-শ্রমি দের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সমন্বয়ক বাদি হয়ে পৃথক দুইটি মামলায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সহ ১৬২ জনকে আসামী করা হয়। সেই মিথ্যা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে অর্ধবেলা ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করি। যদি অনতিবিলম্বে পুলিশি হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহার না করে তাহলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করতে বাধ্য হবো।
ফখরুল, রুহুলামিন, আমজাদ এর মতো পরিবহন শ্রমিকরা বলেন, আমরা পরিবহন শ্রমিক, আমরা সারাদিন পরিবহনে কাজ করে জীবিকানির্বাহ করি। আমাদের আটক শ্রমিকদের মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানি মূলক মামলা প্রত্যাহার করে আমাদের শ্রমিকদের কাজে ফিরার ব্যবস্থা করতে হবে। নাহলে আমরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো। রয়েল সুপারের মালিক জহির খান বলেন, সোমবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ সিএনজি স্টেশনে গাড়ীর সিরিয়াল নিয়ে সৃষ্ট ঘটনা নিয়ে থানায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে মুরাদনগর থানা পুলিশ বেশকিছু শ্রমিককে গ্রেফতার করে এবং শ্রমিকদের উপর মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এই প্রতিবাদে শ্রমিকরা ধর্মঘট করছে। আমরা গাড়ীর মালিক, কিন্তু গাড়ীতো চালায় শ্রমিকরা। আমরা মালিকপক্ষ তাদের অনেক বুঝিয়েছি যে এখন ঈদের সময়, গাড়ী বন্ধ করলে মানুষের দুভোর্গ হবে। তবুও তারা তাদের উপর পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে আজ বুধবার অর্ধবেলা ধর্মঘট করেছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারনে বাস চলাচল বন্ধের খবর পেয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আলোকিত প্রতিদিন/২৭ মার্চ ২০২৫/মওম