আজ রবিবার, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।   ২২ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Home Blog Page 117

পশ্চিমবঙ্গে মুড়িগঙ্গা নদীতে সম্পূর্ণ ডুবে যাচ্ছে বাংলাদেশি বার্জ

২ হাজার ৫০০ টন ফ্লাই অ্যাশবাহী বাংলাদেশি কার্গো বার্জটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাম ইন্ডিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার জানিয়েছে, বার্জে থাকা ফ্লাই অ্যাশ উত্তর২৪ পরগণার ঘোড়ামারা দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ‘সি ওয়ার্ল্ড’ নামের বার্জটি গত বৃহস্পতিবার নদীর পাড়ে ধাক্কা খায়। এরপর এটিতে ফাটল দেখা দেয়। ওই ফাটলটি আরও প্রশস্ত হচ্ছে। এতে করে এটি পুরোপুরি ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

বার্জটি উত্তর২৪ পরগণার বাজ বাজ থেকে চট্টগ্রামের একটি বন্দরে আসছিল। পানি বাড়ার কারণে এটি অল্প সময়ের মধ্যে ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, “ফ্ল্যাই অ্যাশ ইতিমধ্যে নদীর পানিতে মেশা শুরু করেছে। যা তীব্র দুষণ সৃষ্টি করছে। জেলেরা আশঙ্কা করছেন এসব ফ্লাই অ্যাশ পানিতে মিশে অসংখ্য মাছ মেরে ফেলবে। যা তাদের জীবনযাত্রাকে আরও ঝুঁকিতে ফেলবে।”

ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বিভাগীয় প্রশাসন কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছে। এছাড়া ভারতীয় বার্জ অ্যাসোসিয়েশনকে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে।সুন্দরবনের সাগর থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেছে। তারা কাছ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। যেখানে বার্জটি ডুবে যাচ্ছে, সেই জায়গাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের যেন আর কোনো ক্ষতি না হয় সেই চেষ্টা তারা চালাচ্ছে।

বার্জটিতে থাকা ১২ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার করে একটি সাইক্লোন সেন্টারে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।

আলোকিত প্রতিদিন/১৫ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

আ. লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বিডিআর হত্যাকাণ্ড: অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা এবং লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি।

১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিছক কোনও বিদ্রোহ ছিল না। এটা ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং হত্যাকাণ্ড। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা বিডিআরের পোশাক পরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন কিনা কমিশনের এটি শক্তভাবে তদন্ত করা উচিত। শেখ হাসিনাসহ মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’

সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদও বিডিআর হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘মঈন ইউ আহমেদের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্ভব ছিল না। দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করা এবং নৈরাজ্যকে দীর্ঘমেয়াদি করার জন্য ৫৭ সেনাসদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।’

আসাদুজ্জামান উল্লেখ করেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করেছে। সঠিক তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর কাজও শুরু হয়েছে।’ গঠিত কমিশন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর দরবার শুরু হয়। মহাপরিচালকের বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিডিআরের কিছু বিদ্রোহী সদস্য অতর্কিত হামলা চালায় দরবার হলে। সে দিনের ওই হামলায় ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত হন ৭৪ জন। পিলখানার ভেতরের নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞ বুঝতে সময় লেগে যায় আরও দুই দিন। ২৭ ফেব্রুয়ারি পিলখানার ভেতরে একাধিক গণকবরের সন্ধান মেলে।

আলোকিত প্রতিদিন/১৫ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে: আব্দুল জব্বার 

মোঃ আনোয়ার হোসেন:
আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই এই শ্লোগানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা এবং পৌর শাখার উদ্যোগে গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে নবীনগর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিশাল কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পৌর জামায়াতের আমীর মো:মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন,কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার। তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জামায়াতে ইসলামী কখনো ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না এখনো নেই , ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, অনেক শীর্ষ নেতারা এখনো জেলে আছেন। বর্তমান সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি ছাত্র বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং  আমাদের শীর্ষ নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এতদিন শয়তানের খপ্পরে পড়েছিল বাংলাদেশ, তখন শেখ হাসিনার পাশে যারা থাকতো শয়তান বলতো আমি কি শয়তান তার চেয়েও বড় শয়তান আমাদের উপরে আছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল তাই বাংলাদেশ নতুন করে ছাত্র জনতা রক্ত দিয়ে এ দেশকে স্বাধীন করেছে, আমরা বলি দ্বিতীয় স্বাধীনতা। আর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ভারতে থেকে এখনো বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য বিভিন্ন পাঁয়তারা করছে। আমাদের সকলকে এবিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
এ সময় নবীনগর হাই স্কুল মাঠে ইনকিলাব জিন্দাবাদ ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানে মুখরিত প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে আগত হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন।
সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, জেলা জামায়াতের আমির মোঃ গোলাম ফারুক, বাংলাদেশ লয়ার্স কাউন্সিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এড. আব্দুল বাতেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মোঃ মেজবাহ উদ্দিন নাঈম, অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম বাশার, আমির হোসাইন , এড. মকবুল হোসেন এবং উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া মোল্লাসহ কেন্দ্রীয়, উপজেলা ও পৌর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের  নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের জন্য আমরা রাজপথে খোলামেলা কথা বলতে পারি নাই, আল্লাহর রহমতে মানুষের দোয়ায় এখন আমরা প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছি সভাসমাবেশ করতে পারছি। পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি বৃহৎ সংগঠন হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা চাই আল্লাহর পথে শান্তির পথে মানুষের কল্যাণে দলটি সামনের দিকে এগিয়ে যাবে জনগণকে সাথে নিয়ে ইনশাল্লাহ।
আলোকিত প্রতিদিন/১৫ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বিএনপির বৈঠক

আলোকিত প্রতিবেদক: 

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বিকেলে শুরু হবে। কমিশনের প্রথম বৈঠক বিএনপির সঙ্গে হবে বলে জানা গেছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন।

বিএনপি জানিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম পর্যায়ে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এই ছয় কমিশনের চেয়ারম্যানদের নিয়ে গত বুধবার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করে সরকার। এর নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ; যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। বাকি পাঁচ সংস্কার কমিশন প্রধানেরা ঐকমত্য কমিশনের সদস্য।

আলোকিত প্রতিদিন/১৫ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

আটরশিতে বিশ্ব উরস শরীফের মহাসমারোহ শুরু

মিজানুর রহমান খান কুদরত, বিশেষ প্রতিনিধি:  ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে শুরু হলো বিশ্ব ওলি হজরত শাহ সুফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) কেবলাজান ছাহেবের মহাপবিত্র বিশ্ব উরস শরীফ। প্রতি বছরের মতো এবারও লাখো আশেকান-জাকেরানের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে আটরশি।
চার দিনব্যাপী এই ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল এখন এক নান্দনিক পরিবেশে সজ্জিত। দেশ-বিদেশ থেকে আগত ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে পুরো এলাকা। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর খাজাবাবার পবিত্র রওজা শরিফ জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বিশ্ব উরস শরীফ উপলক্ষে জাকের মঞ্জিলের প্রধান প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থাপনা বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড এবং সুদৃশ্য তোরণ। বাতাসে উড়ছে ‘আল্লাহু আকবার’ খচিত অসংখ্য পতাকা, যা উৎসবের মহিমাকে আরও গৌরবান্বিত করছে।
পবিত্র এই মাহফিলে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়েছেন। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া উরস শরীফ চলবে আগামী মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে এই ধর্মীয় আয়োজন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ব ওলি খাজাবাবা ফরিদপুরী (কু.ছে.আ.) ১৩৫৪ বাংলায় ফরিদপুরের সদরপুরের আটরশি গ্রামে আগমন করেন। তাঁর দাওয়াতি মেহনত ও রাসুলে পাক (সা.)-এর তরিকা প্রচারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।
প্রতি বছর এই উরস শরীফে উপস্থিত হন আল্লাহপ্রেমিক অসংখ্য মুমিন মুসলমান। তাঁরা বিশ্ব ওলি খাজাবাবা ফরিদপুরীর পবিত্র সান্নিধ্যে এসে রাসুলে পাক (সা.)-এর মহব্বত অন্তরে ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করেন।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

ট্র্যাব অ্যাওয়ার্ড পেলেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি

টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব)- কর্তৃক আয়োজিত ২৬ তম ট্র্যাব এওয়ার্ড এ সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য জনপ্রিয় সাংবাদিক ও আমার দেশ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি ভূষিত হয়েছেন।

গতকাল হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও-এ ২৬তম ট্র্যাব অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন কমিউনিকেশন অব বাংলাদেশ (কব) এর চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম ফারুক মজনু।অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র্যাব) এর মুখপাত্র ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু আবিদ।

তিনি বলেন, “আজ আমাদের সংগঠন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরাদের সম্মানিত করছে। আমাদের অনুষ্ঠান সফল করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে মোঃ গোলাম ফারুক মজনু’ এর। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। এছাড়াও যারা আমাদের দাওয়াত গ্রহন করে উপস্থিত হয়েছেন তাদের সকলকে জানাই অভিবাদন। মনোনীত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি। যোগ্য মানুষদের সম্মান জানানোটা আমাদের দায়িত্ব। ”

২৬ তম ট্র্যাব এওয়ার্ড এ মনোনীত

২৬ তম ট্র্যাব এওয়ার্ড গ্রহনের পর জাহিদুল করিম কচি বলেন, “প্রতিটা এওয়ার্ড ই সম্মান ও গৌরবের। সম্মাননা কাজের অগ্রগতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ৩০ বছর ধরে গণমাধ্যম উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে ট্র্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তারা আয়োজন করে ট্র্যাব এওয়ার্ড এর। ২৬ তম ট্র্যাব এওয়ার্ড পেয়ে সত্যি ই নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই সংগঠনের মুখপাত্র ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু আবিদ’কে। নিরপেক্ষতা বজায় রেখে যোগ্য মানুষগুলোকে বেছে নেয়ার পেছনে তার নিরলস পরিশ্রম প্রশংসার দাবিদার। ”

উক্ত অনুষ্ঠানে একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এর উপদেষ্টা ড.সুকোমল বড়ুয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ’র সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি,  বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরফানুল হক নাহিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগমসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক এবং শোবিজ জগতের বিশিষ্ট তারকারা উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদুল করিম কচি বিগত ১৭ বছর ধরে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কয়েক দফায় চাকরী হারিয়েছেন। এরপরও তিনি আপোষ করেননি পরাজিত শক্তির সাথে। সত্য ও ন্যায়ের পথে লড়াই করে গেছেন নিরলসভাবে, ভয়ভীতি উপেক্ষা করে। তিনি ছিলেন তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সাহসের বাতিঘর। বর্তমানে বিচক্ষণতার সাথে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আওয়ামীলীগ এর বিচার এবং নিষিদ্ধের দাবিতে ডিমলায় বিক্ষোভ সমাবেশ

মোঃ মোস্তাকিম বিল্লাহ, নীলফামারী গাজীপুরে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ মীর কাশেমের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ডিমলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ডিমলা বিজয় চত্বরের কাউসার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ডিমলা সীমা হলের মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে কাউসার মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ডিমলা উপজেলার প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান রাশেদ এর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, ছাত্র প্রতিনিধি শাকিল প্রধান, জাফর হোসেন জাকির, রেজাউল আলম, লেলিন ও নাগরিক কমিটি মহেন রায়, রাকিব হোসেন প্রমূখ।
 বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় মীর কাশেমের মৃত্যুর ঘটনায় সারাদেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে শহীদ মীর কাশেমের গায়েবানা জানাজা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে খাটিয়া মিছিল করার ঘোষণা করে প্রোগ্রাম সফল করছে। ফলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ডিমলা উপজেলায় কর্মসূচি পালন করা হয়।
 আওয়ামী লীগ দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্রের বিপরীতে কাজ করেছিল। গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়েছিল। দমন-পীড়নমূলক নীতির কারণে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। ফলে তাদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং চক্রান্ত এখনও দৃশ্যমান আছে। তাই আওয়ামী লীগের বিচার এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসবে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে নেতৃবৃন্দ জানান।
আলোকিত প্রতিদিন/এপি

শবে বরাতের কিছু আমল

ধর্ম ডেস্ক:

শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতকে বলা হয় ‘শবে বরাত’ যা ফারসি ভাষা থেকে এসেছে। ফারসিতে ‘শব’ অর্থ রাত এবং ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। `শবে বরাত’ অর্থ ‘মুক্তির রাত’। হাদিসে এ রাতটিকে ‘শবে বরাত’ বা মুক্তির রাত বলা হয়নি, বলা হয়েছে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রাত। তবে এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার অনেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন এটা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়। এ থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্যসহ বিশ্বের অনেক অঞ্চলে এ রাতটিকে ‘শবে বরাত’ বা মুক্তির রাত বলা হয়ে থাকে।

এ রাতের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন,

يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.

আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টিকুলের দিকে দয়ার দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

আরেকটি হাদিসে এসেছে,

إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَوْمَهَا ‏.‏ فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ أَلاَ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ فَأَغْفِرَ لَهُ أَلاَ مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلاَ مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلاَ كَذَا أَلاَ كَذَا حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ ‏

মধ্য শাবানের রাতে তোমরা নামাজ আদায় করো এবং দিনে রোজা রাখ। এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছ আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছ রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দান করবো। কে আছ রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছ এই এই প্রার্থনাকারী… ফজরের সময় হওয়া পর্যন্ত তিনি এভাবে ডাকেন। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৩৮৮)

আমাদের কর্তব্য এ রাতে বেশি বেশি নেক আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা যেন আল্লাহর রহমত এবং ক্ষমায় আমরাও শামিল হতে পারি।

শবে বরাতে যে আমলগুলো করণীয়

১. ছোটবড় সব পাপ থেকে আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।

২. সব রকম শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে অন্তরকে পবিত্র করুন।

৩. আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশীদের সাথে মনোমালিন্য থাকলে তা দূর করুন। কারো প্রতি অন্যায় করে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন, নিজেও সবাইকে ক্ষমা করে দিন।

৪. ফরজ নামাজের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় নিয়ে নফল নামাজ পড়ুন।

৫. বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করুন।

৬. কবর জিয়ারত করতে যান। কবরস্থানে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটান। মৃত ব্যক্তিদের রুহের মাহফিরাতের জন্য দোয়া করুন।

৭. ১৫ শাবান দিনের বেলা রোজা রাখুন।

আলোকিত প্রতিদিন/১৪ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে প্রতিবন্ধী ছেলে আটক

মোঃ নিশাদুল ইসলাম:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সিয়াম মোল্লা (১৯)নামের এক প্রতিবন্ধী ছেলের বিরুদ্ধে  মাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।  এ ঘটনায় ওই প্রতিবন্ধী ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।
১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের আনন্দপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নাসিমা বেগম ওই এলাকার মিজান মোল্লার স্ত্রী।
এ ব্যপারে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছমিউদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিয়ামকে বাসা থেকে বের হতে বাধা দেওয়ায় ক্ষোভে তরকারি কাটার বটি দিয়ে কুপিয়ে তার মাকে হত্যা করেছে বলে সে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই স্বীকার করেছে।  তবে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ বের করার জন্য চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
আলোকিত প্রতিদিন/১৪ফেব্রুয়ারি-২৫/মওম

বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসে খালেদা জিয়া// সৈয়দ রনো

সৈয়দ রনো: ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্ত্বরে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবদী দল (বিএনপি)’ নামে এই নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। বাংলাদেশের রাজনীতিতে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে যে শূন্যতার সৃষ্টি করা হয় তা পূরণে ইতিহাসের দাবী, দেশবাসীর আকাক্সক্ষায় বিএনপির অভ্যুদয় ঘটে। বিএনপির ঘোষণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাতকঠিন গণঐক্য, ব্যাপক জনভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ অধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি গঠিত হয়। অপরিসীম দেশপ্রেম, জনগণের কল্যাণ ও দৃঢ়চেতা মনোবল প্রজ্ঞা দিয়ে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশকে একটি আদর্শ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে এসেছিলেন মহান নেতা জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, স্বনির্ভরতা অর্জন এবং উৎপাদন দ্বিগুণ করার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জিয়ার অক্লান্ত প্রচেষ্টা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপুল প্রশংসা লাভ করে। কিন্তু যুগে যুগে দেশ-দেশান্তরে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র সুশাসকদের সামন্তরালেই চলে। তারা সুযোগের সন্ধানেই থাকে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রমটি ছিলো না। ১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য তাঁকে হত্যা করে। কিন্তু এই মৃত্যুও যেনো তাঁকে আরো বেশি মহীয়ান করে তোলে। ব্যক্তিগত সততা, উন্নয়ন, ঐক্য এবং সুসম্পর্কের রাজনৈতিক দর্শনের কারণে রাজনীতির ইতিহাসে তাঁর নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। আপামর জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায় তিনি আজও চির ভাস্বর।
খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন: প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতের পর বিচারপতি আব্দুস সাত্তার প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পরে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন এবং দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮২-এর ২৪ মার্চ এরশাদ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মাত্র ৩ মাস আগে নির্বাচিত সাত্তার সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখল করে। বিএনপির কিছু নেতা এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দিলে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিতেও কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা আসে। কর্মীদের দাবি এবং কিছু শীর্ষ নেতার অনুরোধে ১৯৮২-এর ৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়া দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নিয়ে গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মাঠে পা রাখেন। বিএনপিকে ষড়যন্ত্র ও নিষ্ক্রিয়তা থেকে রক্ষার উদ্যোগের ফলে পার্টির সিদ্ধান্তে বেগম জিয়া ৮৩-র মার্চে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন: এরশাদের পুরো শাসনামলে বিএনপির রাজনীতি ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। ৮২-র ৩০ মে শহীদ জিয়ার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকীতে জিয়ার মাজারে গিয়ে তিনি বক্তব্য দেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে মাজার প্রাঙ্গনে ছাত্রদলকে শপথ বাক্য পড়ান। ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান নতুন শিক্ষানীতি ঘোষণা করলে বিএনপি তার বিরোধিতা করে এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে আন্দালনের সূচনা করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত হিসাবে ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে স্বৈরাচারবিরোধী প্রথম মিছিলটি করে ছাত্ররা। ছাত্রদলের ব্যানারে ছিল: এরশাদের পতন চাই। ৭ নভেম্বর খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে শপথ পড়ান, পরদিন ক্যাম্পাসে মিছিল হয়। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ছাত্রদলের বর্ধিত সভা ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট করে। ছাত্রদলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য ছাত্রদলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাবি ক্যাম্পাসের বটতলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, আইউব, দিপালী সাহা, ফারুকসহ ৭ জন শহীদ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মিছিল হলে পুলিশের গুলিতে ১৫জন নিহত হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা গায়েবানা জানাজা, ১৯ ফেব্রুয়ারি মৌন মিছিল এবং ২০ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল করে। ইতোমধ্যেই বেগম জিয়া তাঁর বিচক্ষণতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন। সমসাময়িক ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠন করেন। এরইমধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠক থেকে ১৫ দলীয় জোট নেতাদের এবং কর্নেল অলিসহ বিএনপি নেতাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ছাত্ররা পলাতক, নেতারা কারাবন্দী তবু খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মৌন মিছিল শহীদ মিনারে যায়, তাঁকে প্রধান অতিথি করে বটমূলে হয় জাসাসের আলোচনাসভা। ঘরোয়া রাজনীতির সুযোগে খালেদা জিয়া দেশ সফরে বের হয়ে প্রথম সভা করেন খুলনায় ইউনাইটেড ক্লাবে। ’৮৩-র ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর ৭ দলীয় ও ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের মধ্যে বৈঠকে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ৫ দফা প্রণীত ও ৬ সেপ্টেম্বর তা ঘোষিত হয়। ২৮ নভেম্বর উভয় জোটের সচিবলায় ঘেরাও কর্মসূচিতে আহত খালেদা জিয়া এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। ২৮ নভেম্বর রাতেই খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে ১ মাসের আটকাদেশ দিয়ে স্ব-স্ব বাসভবনে অন্তরীন রাখা হয়। এরশাদ তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে লোভ ও ভয় দেখান। ’৮৪-র ৭ জানুয়ারি এরশাদ ৫৫টি রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকলে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াত জোট তা বর্জন করে। ’৮৪-র ১২ জুনায়ারি খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন মনোনীত হন এবং ১লা মার্চ খালেদা-হাসিনা গ্রেপ্তার হন। ’৮৪-র ১০ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরশাদ ১২ জুলাই জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিলে দুই জোট তা প্রত্যাখ্যান করে। ৭ দলীয় জোট ২৫ জুলাই প্রতিরোধ দিবস পালন করে। ৫ আগষ্ট জোটের জনসভা ও ২৭ আগষ্ট অর্ধদিবস হরতাল হয়। ২৭ আগষ্ট জামায়াতের জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়। ৩ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময়সূচী ঘোষণা করে। ’৮৪-র ১৫ অক্টোবর যৌথ গণতান্ত্রিক জোট ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ স্লোগানে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। প্রেসিডেন্ট রেডিও ও টিভির ভাষণে ১৯৮৫ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে ও সংবিধানের আংশিক পুনর্জীবনের ঘোষণা দেন।

আপোষহীন উত্তাল আন্দোলন: ’৮৫-র ৬ এপ্রিল বিচারপতি নুরুল ইসলাম তফসিল ঘোষণা করে ও সরকার সামরিক আদালত বিলুপ্ত করে। ১১ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে দলের বর্ধিত সভায় খালেদা জিয়া নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ তুলেন। ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠা বাষির্কীতে খালেদা জিয়া অবাধ রাজনীতির সুযোগ দাবী করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল, ১৪ ফেব্রুয়ারি জনসভা থেকে নির্বাচনের তারিখ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান করেন খালেদা জিয়া। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের সভায় ৫ দফার কোনো ‘আপোষ’ অস্বীকার করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি উভয় জোটের জনসভায় একই দাবী পুনর্ঘোষিত ও ৮ মার্চ হরতাল হয়। ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে শেখ হাসিনা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বলেন, যারা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান। কিন্তু শেখ হসিনা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ২১ মার্চ রাত ১টা ৪০ মিনিটে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ৩১ মার্চ ঢাকা জেলা ক্রীড়া সমিতি মিলনায়তনে বিএনপির বর্ধিত সভা হয়। ২ মে খালেদা জিয়াকে অসম্মানজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। ৮৭-এর ৭ মার্চ যুবদলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি বলেন ‘ক্ষমতা চাইলে এখানে, ঠিক এখানে এসে হাজির হবে। কিন্তু ক্ষমতা নয় সংগ্রাম।’ এ সময় ছাত্রদল সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলুকে হত্যা ও ছাত্রদলের উপর অপরিসীম নির্যাতন নেমে আসে। খালেদা জিয়া আখ্যায়িত হন ‘আপোষহীন নেত্রী’ অভিধায়। ১১ নভেম্বর দুপুরে পূর্বানী হোটেলের বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করে গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। ‘৮৮-র ১ জানুয়ারি সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এদিন টিএসসিতে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে খালেদা জিয়া ‘এক দফার’ ঘোষণা দেন। সে সঙ্গে ২২টি ছাত্রসংগঠন নির্বাচনকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। ১২ জানুয়ারি থেকে এক দফায় অনঢ় থেকে খালেদা জিয়া দেশব্যাপী জনসংযোগ শুরু করে। এক তরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি তিন-চতুর্থাংশ আসন পায়। ২৪ মার্চ, ২৫ এপ্রিল, ২৮ নভেম্বর হরতাল এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় সমাবেশে খালেদা জিয়া জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার কায়েমের আহ্বান জানান।

৮৯-র ৮ ও ৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সুপ্রিম কোর্টে হাইকোর্টের বিভক্তি নিয়ে যুগান্তকারী এক রায় আসে। ’৮৯-র ২৫ মে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিল করেন। ১ নভেম্বর ৭ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গুলিস্তানে ১০ ঘন্টা প্রতীক অনশন করে। এ সময় জেহাদের লাশকে সামনে রেখে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠিত ও ক্যাম্পাসে ডাঃ মিলন ও নূর হোসেন নিহত হলে সেনাসদর দপ্তরে সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠক করে তিন বাহিনীর প্রধান এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরশাদ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাতে চান। তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর থেকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার ও প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন এবং ১৫ দিন আগে নিরপেক্ষ উপ-রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। বিবিসিকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া অবিলম্বে এরশাদের পদত্যাগ দাবি করেন। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এরশাদের আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয়, ১টি প্রেসিডেন্ট, ১টি গণভোট ও ২টি উপজেলা নির্বাচনের সবই প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার কারণে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির প্রকৃত বিকাশ ঘটে। তিনি বিএনপিকে শুধু রক্ষাই করেননি, প্রতিকূল পথ বেয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি প্রধান শক্তি হিসাবে।

রাজনীতিতে নতুন যুগ ও রাষ্ট্রপরিচালনায় বেগম খালেদা জিয়া: ‘৯১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ ৯ বছর পর মুক্ত পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন হয়। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে খালেদা জিয়া হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার থেকে প্রচার শুরু করে রাতদিন টানা চষে বেড়ান সারাদেশ। ১৮০০ জনসভা ও পথসভা শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সমাবেশে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করেন। এ সময় দিনে ৩৮টি জনসভায় বক্তৃতা, নির্ঘুম ৪৮ ঘন্টা কাটিয়ে রেকর্ড করেন তিনি। নোয়াখালীতে রব ওঠে- ‘আঙ্গো মেয়ে খালেদা, গর্ব মোদের আলাদা।’ ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ, বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার জন্য একটি অবিস্মরণীয় দিন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপি ১৪৪টি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়া ৫টি আসনে নির্বাচন করে সবকটিতে জয়ী হন। বিএনপি জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে। ১৯ মার্চ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১১ জন কেবিনেট মন্ত্রী ও ২১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ গঠন হলে ২০ মার্চ তিনি শপথ নেন। সেদিন তিনি প্রধানমন্ত্রীর নয়, নিজের গাড়িতেই স্মৃতিসৌধে যান। প্রধানমন্ত্রীত্বের ১২তম দিন ১ এপ্রিল মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীত্বের ৩৯ দিনের মাথায় ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণীঝড় হলে খালেদা জিয়া ৬ মে থেকে ৯ মে তাঁর দপ্তর চট্টগ্রামে স্থানান্তরিত করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। সংসদীয় সরকার পদ্ধতির পক্ষে ঐতিহাসিক বিল ৬ আগষ্ট সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির। বিএনপি সরকারের উদার নীতির নানা অর্থনৈতিক সংস্কারে ‘তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ’ থেকে বাংলাদেশ ‘ইমার্জিং টাইগার’-এ পরিণত হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে বিএনপি সরকারই প্রথম মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু, প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক, কোস্টগার্ড প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ নেয়। এ সময় আওয়ামীলীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে এবং আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল পালন করে। প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে নির্দলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে খালেদার প্রস্তাব কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের মধ্যস্থতায় ফর্মুলা (নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের ৫ জন করে এমপি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন) প্রস্তাব ও পাঁচজন নাগরিক নেয়ার উদ্যোগ আওয়ামী লীগ গ্রহণ না করায় ব্যর্থ হয়। এর মধ্যে সেনাপ্রধান নাসিমের নেতৃত্বে একটি ব্যর্থ সেনা অভ্্ূযত্থানেরও ঘটনা ঘটে। ‘৯৬-র ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন করে খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ২৫ মার্চ রাতব্যাপী সংসদ অধিবেশনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাশ করে বিএনপি। ৩০ মার্চ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রেসিডেন্ট আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে আসে-তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থা। ‘৯৬-র ১২ জুন সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ১১৬ আসন পেয়ে বৃহত্তম বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যায়। পরবর্তী ৫ বছরে খালেদা জিয়াসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক মামলা, গ্রেপ্তার, হত্যার শিকার হন। আওয়ামী সরকারেরর দুঃশাসন বিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সারাদেশে সভা সমাবেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ, দেশব্যাপী রোডমার্চ, গণমিছিল, মহাসমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট করে। ‘৯৯-র ৩০ নভেম্বর ২৯ মিন্টো রোডে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের জোট হিসেবে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। তবে এরশাদ জোট ছাড়েন। ২০০১-র ২৯ মার্চ নাজিউর রহমান মঞ্জু আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে জোটে থাকেন। অবশেষে ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

২০০১-র ১ অক্টোবর বিএনপি জোট ২১৫টি আসন পেয়ে নির্বাচিত হয় এবং ১০ অক্টোবর সরকার গঠন করে। নানা প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও চারদলীয় জোট সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে নকলমুক্ত পরীক্ষা, মেয়েদের বিনামূল্যে পড়ালেখাসহ শতাধিক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও উন্নীত করে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেয়া হয় ব্যাপক পদক্ষেপ। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্থাপন ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠা এবং গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটে এ সময়েই।

ওয়ান-ইলেভেন ও বিএনপি: ২০০৬-র ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপি। আওয়ামীলীগ ও ১৪ দল ২০০৭-র ২২ জানুয়ারি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও বয়কট করে। ২৮ অক্টোবর পল্টন মোড়ে বিরোধী দলের লগি-বৈঠায় নিহত হয় ৭জন। বিচারপতি কেএম হাসানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ। ১১ জানুয়ারি তিন বাহিনী প্রধানসহ ৯ ডিভিশনের জিওসি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মদের সঙ্গে সাক্ষাত করে জরুরি অবস্থা ও কেয়ারটেকার চিফ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন। আসে ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘অস্বাভাবিক’ সরকার। সে সরকার দুর্নীতি অনুসন্ধান ও বিচারের নামে ‘মাইনাস টু ফর্মুলায়’ দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে সরাতে চায়। জিয়া পরিবার ও বিএনপি হয় মূল টার্গেট। ২০০৭-র ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির সিনিয়ার যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানকে। এপ্রিল মাসে খালেদা জিয়াকে জোর করে বিদেশ পাঠাতে ব্যর্থ হলে ছোট ছেলে কোকোকে ২৪ ঘন্টা অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে রাখা হয় এবং খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। তিনি সেদিন বলেন, ‘দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই।’ এরপর কার্যত তাকে গৃহবন্দী করা হয়। এদিকে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূইয়াকে দিয়ে দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তবে সারাদেশের কর্মী-সমর্থকরা এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেন। খালেদা জিয়া বিভিন্ন জেলা ও বহির্বিশ্বে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দেন। ২ সেপ্টেম্বর রাতে খালেদা জিয়া ও কোকোকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগ মুহূর্তে বেগম জিয়া সংগঠনবিরোধী কার্যকালাপের অভিযোগে মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া এবং যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেনকে বহিষ্কার এবং বর্ষীয়ান নেতা খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে দলের নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেন। ষড়যন্ত্রকারিরা সাইফুর রহমানকে চেয়ারম্যান ও মেজর (অবঃ) হাফিজকে অস্থায়ী মহাসচিব করে কমিটি গঠন করে এবং গঠিত কমিটিকে স্বীকৃতি দেন সিইসি ড. এটিএম শামছুল হুদা। ৫ নভেম্বর খালেদা জিয়া কারাগার থেকে নির্বাচন কমিশনকে লেখা চিঠিতে মহাসচিব হিসেবে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ’র সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ জানান। কারাগারে থেকেই আইনজীবীদের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি মায়ের মৃত্যুতে খালেদা জিয়াসহ তারেক-কোকোকে দু’ঘন্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া হয়। ৫ মার্চ নাইকো মামলায়, ২৩ জুন ও ৯ জুলাই গ্যাটকো মামলায় সংসদ ভবনে নির্মিত বিশেষ আদালতে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। তিনি কারাগারের ঠিকানায় ভোটার হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নিবন্ধনের শেষ দিন ৮ মার্চ পর্যন্ত তিনি ভোটার হননি।

১৩ আগষ্ট আইনজীবীদের বলেন, মুক্তির জন্য অবৈধ সরকারের কাছে কোন আবেদন করবেন না। ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হয়। এ সময় তার অনঢ় মনোভাবের কারণে সরকার জরুরি আইন প্রত্যাহার ও বন্দী নেতাদের মুক্তি দেন। এসময় অস্বাভাবিক সরকার গোপন সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতাসীন করার প্রস্তাব দিলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী বন্দী এবং পলাতক থাকা স্বত্ত্বেও এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি না থাকা স্বত্ত্বেও শুধু গণতন্ত্রের স্বার্থে বেগম জিয়া শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সারাদেশে ক্লান্তিহীন নির্বাচনী সফর করেন। তবে ২০০৮-র ২৯ ডিসেম্বরের পাতানো জাতীয় নির্বাচনে ৩৩ শতাংশের বেশি ভোট পেলেও মাত্র ২৯টি আসন পায় বিএনপি।

আলোকিত প্রতিদিন/ ১৪ ফেব্রুয়ারী / ক.ই.ও.